লোকসানে ডিজেল, মুনাফায় অকটেন : বিপিসি

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২২, ১১:১০ এএম

তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, শতভাগ আমদানি নির্ভর ডিজেলে এই পরিমাণ দাম বাড়ানোর পরও প্রতি লিটারে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৮ টাকা ১৩ পয়সা। দাম বৃদ্ধির তালিকায় অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৫ টাকা। বিপিসি’র হিসাব বলছে, ডিজেলে লোকসান হলেও অকটেনে লিটার প্রতি মুনাফা থাকছে ২৫ টাকা।

বাংলাদেশে দুটি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি সরবরাহ করে থাকে। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠান দুইটির মধ্যে গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। আর তেল সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসির সূত্র অনুযায়ী, বছরে ৬২ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ ডিজেল, ৪ দশমিক ৮ শতাংশ অকটেন, ৬ শতাংশ অপরিশোধিত তেল। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) এবং আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (অ্যাডনক) থেকে এই তেল কেনা হয়। এই পরিমাণ তেলের মধ্যে ৪০ লাখ টন আমদানি করা হয় ডিজেল। আরও আমদানি করা হয় ফার্নেস অয়েল, পেট্রোলসহ আরও কিছু তেল। যার পরিমাণ খুবই কম। এসব তেল কুয়েত পেট্রোলিয়ার করপোরেশন (কেপিসি), মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কোম্পানি লিমিটেড, এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি, চীনের পেট্রোচায়না, পিটিই লিমিটেড ও ইউনিপেক (সিঙ্গাপুর) ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে তেল কেনে বাংলাদেশ। এর বাইরে খোলা বাজার থেকেও তেল কেনে বাংলাদেশ।

জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুসারে, ডিজেলের প্রায় সবটুকুই আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ। আর যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি করা হয় তার ৯০ ভাগ ব্যবহার করা হয় পরিবহনে, বাকি দশ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে। কিন্তু গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের শেষের দিকে এই জ্বালানির দাম বিশ্ববাজারে আকাশ ছোঁয়া পরিণতি হয়। ফলে গত নভেম্বরে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়াতে বাধ্য করে সরকার।

বিপিসি বলছে, ওই সময়ে ডিজেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ছিল ৮০ ডলার। ফলে তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি লোকসান গুনতে শুরু করে। এরমধ্যে চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সব ধরনের জ্বালানির দাম আরও বাড়ে। বিশেষ করে ডিজেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৭০ ডলারে পৌঁছায়। সেখান থেকে যদিও ১৩৯ ডলারে ধাপে ধাপে নেমেছে। কিন্তু ততক্ষণে বিপিসির লোকসান দৈনিক শতকোটি ছুঁয়ে যায়। ইতোমধ্যে প্রবল হয়ে উঠেছে ডলার সংকট, যে কারণে সময়মত ঋণপত্র খুলতে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ফলে ডিজেলের মজুতও কমতে শুরু করে।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানিয়েছেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ডিজেল আছে তা দিয়ে এক মাস চলা সম্ভব। আর অকটেন ও পেট্রোল দিয়ে চলবে মাত্র ১৮ দিন। আর ৩২ দিনের মজুত আছে জেট ফুয়েলের। তবে এ নিয়ে চিন্তার কোনো কারন নেই বলেও জানালেন তিনি। বলছেন, আগামী ছয় মাসের জ্বালানি তেল রয়েছে পাইপ লাইনে। যে কারণে বাজারে সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

এদিকে ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেলের দাম লিটার প্রতি ৩৪ টাকা থেকে ৪৬ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এখন ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা আর অকটেন ১৩৫ টাকা। নতুন দামে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। আর পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ৫১ দশমিক ১৬ শতাংশ বাড়িয়েছে আর অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

বিপিসি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, এখনো আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে জ্বালানি তেল কিনতে ব্যারেল প্রতি খরচ হতো ৯৬ দশমিক ৯৫ ডলার। পরিশোধন করে প্রতি লিটারে খরচ পড়তো ৮৩ টাকা ৬ পয়সা। ওই সময়ে বিপিসি বিক্রি করত ৮০ টাকা লিটার। সেখানে ৩ টাকা ৬ পয়সা ছিল প্রতি লিটারে লোকসান। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০৮ দশমিক ৫৫ ডলারে তখনও প্রতি লিটার ৮০ টাকা বিক্রি করেছে। যে কারণে গত কয়েক মাস ভয়াবহ লোকসান গুনতে হয়েছে। যার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। শুধু গত ছয় মাসে লোকসান গুনতে হয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা বিপিসি ২০১৪ সাল থেকে মুনাফার মুখ দেখতে শুরু করেছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭ হাজার কোটি টাকায়। কিন্তু বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৩ কোটিতে নেমে আসে মুনাফা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান সংকট কাটিয়ে বিপিসি‍‍`র আবার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে।

আমারসংবাদ/এসএম