ভোগান্তির দীর্ঘ খতিয়ান, তবুও বাড়ি ফেরার তাড়া

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২২, ০৭:০৩ পিএম

পৃথিবীর সব টান উপেক্ষা করা যায়;কিন্তু নাড়ির টান আমরা কেউই উপেক্ষা করতে পারি না।ঈদ কিংবা পূজা আমাদের বাড়ি ফেরা চাই চাই।যতই ঝক্কি ঝামেলাই হোক না কেন ঈদে বাড়ি ফেরার আনন্দ আমরা উপভোগ করি, উপভোগ করতে চাই।গণমাধ্যমে কাজ করার সুবাদে, রাজধানীর রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রার সংবাদ কাভার করার সুযোগ আমার হয়েছে। সেখানে চোখ মেলে দেখিছি হাজারো মানুষের ভিড়। কেউ র্দীঘ লাইনে দাড়িঁয়ে আছে, কেউবার আছে কাউন্টারের মেঝেতে বসে। প্রত্যেকের একই উদ্দেশ্যে; বাড়ি ফিরতে হবে। বাড়িতে অপেক্ষা করছে মা-বাবা, প্রিয়তমা স্ত্রী, গ্রামের বন্ধুরা।

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় ইতোমধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চলে গিয়েছে বাড়ি। আর যারা খন্ডকালিন চাকরি কিংবা টিউশনি করিয়ে এই শহরে বাস করছেন তারা অপেক্ষা করছেন ঠিক কবে ছুটি পাবেন আর কবেই বা বাড়ি যেতে পারবেন।তাই অনেকেই কেটে রেখেছেন আগাম টিকেট।

গত ২৩ তারিখ থেকেই রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছিলো। সেখানে আমরা প্রত্যেকেই দেখেছি হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। টিকেট পেতে আগের দিন রাত থেকে স্টেশনের মেঝেতে অপেক্ষা করেও অনেকে টিকেট পায়নি । কত মানুষ যে স্টেশনেই সেহরী-ইফতার করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।র্দীঘ ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা অপেক্ষা করে যখন টিকেট পেয়েছে তখনই কেউ কেউ করেছে বিজয় উল্লাস। সে সংবাদও আপনারা পেয়েছেন, আমরা কাভার করেছি। পথে পথে শত বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে তবু নাড়ির টানে বাড়ির পানে ফিরছে মানুষ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির জন্য এই ঘরে ফেরাতেই সবার আনন্দ।

তাছাড়া প্রতিবছরই আমরা দেখছি ঈদযাত্রায় ভাড়ার নামে লুটপাট, বাস, ট্রেন, লঞ্চে তিলধারণের ঠাঁই মিলছে না, আছে ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের ঝক্কি, ছিনতাই-অজ্ঞান পার্টিসহ নানা রকম প্রতারণামূলক কাজ-কারবার।২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ও আমরা দেখেছি কড়া লকডাউনেও মানুষ ট্রাকে করে, মাছের ড্রামে করে লুকিয়ে হলেও বাড়ি যেতে।ঘরের মানুষের সঙ্গে ঈদ কাটাতে।প্রকৃতপক্ষে ঈদে যত কিছুই হোক বাড়ি ছাড়া যেন কাটানোই সম্ভব নয়।

আর সেই ঈদ যাত্রায় আছে দুর্ভোগ, কষ্ট, ভোগান্তির দীর্ঘ খতিয়ান।তবু আমরা যেতে চাই বাড়ি।ছুটি পেলেই ছুটে যেতে চাই। ক্লান্তিক্লিষ্ট শরীরে এলিয়ে পড়তে চাই নিজের পুরোনো ঘরে, পুরোনো বালিশ আর বিছানায়, পুরোনো ঘ্রাণের ভেতর। কিছু কল্পনা আর কিছু আধো-অন্ধকার বাস্তবতার ভেতর। মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য হলেও মনে হয় আমরা শ্বাস নিচ্ছি, মুক্ত গ্রাম্য বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই, মনে হয় বেঁচে আছি, কী বিস্ময়, আজও বেঁচে আছি!

লেখা: রাব্বি হোসেন, গণমাধ্যমকর্মী।