সিনথেটিক বায়োলজি আগামী বিশ্বের সুপার পাওয়ার

হোসাইন মোহাম্মদ মাসুম প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২২, ০৪:২৬ পিএম

বিশ্ব যখন খাদ্যের সংকট এবং দুর্ভিক্ষের আতঙ্কে ঠিক সেই মুহূর্তে সিনথেটিক বায়োলজি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এই সিনথেটিক বায়োলজির উদ্ভাবন আগামী বিশ্বকে ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং খাদ্য সংকট থেকে রক্ষা করবে এমন প্রত্যাশা সবার।

সিনথেটিক বায়োলজির ম্যাজিক নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল iGEM  ইভেন্ট -২০২২ । এটা ছিল বায়োলজি বিজ্ঞানের সব থেকে বড় কনফারেন্স যেখানে সারা বিশ্ব সাড়ে তিনশো‍‍` র অধিক টিম অংশ নেয়। সব মিলিয়ে প্রায় আট হাজার মানুষের মিলনমেলা হয়েছে সেখানে। এই কনফারেন্স আগে আমেরিকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় MIT তে হতো। এই মেলা অন্যান্য যেকোন মেলা থেকে আলাদা। এর একটা বড় কারণ এই মেলার মাধ্যমেই সিনথেটিক বায়োলজি জগতে ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি  তৈরি হচ্ছে। এখানে প্রত্যেকটা ইনোভেশন এবং কোম্পানি আমাদের সমস্যা সমাধান করছে। যেমন ইম্পসিবল ফুড কোম্পানি গবাদিপশু পালন ছাড়াই কৃত্রিম ভাবে মাংস উৎপাদন করছে। তাদের প্লান্ট বসে মাংস উৎপাদন অনেক জায়গাতে পাওয়া যাচ্ছে যেমন বার্গার কিং, ওয়ালমার্ট এবং হোয়াইট ক্যাসেলের মতো জায়গাতে। তাদের কোম্পানি এখন পর্যন্ত ১.৫ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে। একইভাবে মিল্ক, ইয়োগার্ট এবং অন্যান্য খাদ্য উৎপাদন করছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

ফ্রান্সের প্যারিসেই এধরনের ৮-১০টি কোম্পানি রয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিতেও এই ধরনের কোম্পানি দিনদিন বাড়ছে। ক্লাউড কম্পিউটিং বেস বেঞ্চিলিং এবং গ্রিনকো বায়োওয়ার্কস নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে যাদের মুনাফা সব মিলিয়ে ২০ বিলিয়নের মতো। এসব কোম্পানিগুলো সবই ইজিএম এ্যালুমিনাইদের হাতে তৈরি। সব মিলিয়ে ১৫০ এর অধিক এরকম ছোট-বড় কোম্পানি রয়েছে সারাবিশ্বে।

অনেক টিম পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জটিল সমস্যার বাস্তবধর্মী সহজ সমাধান এই কনফারেন্সে প্রজেক্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। ইতোমধ্যে সিনথেটিক বায়োলজি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। যার প্রমাণ করোনা টেস্ট এবং ভ্যাক্সিন। এই ভ্যাক্সিন থেকে মডার্না ৬০০ মিলিয়ন ডলার ফান্ড অর্জন করেছে।

বিজ্ঞান যে বিশ্বকে অনেক উন্নত করছে তা এই কনফারেন্সের প্রতিটা টিমের স্টলে গেলে বোঝা যায়। নানান রকম আবিষ্কারের ছোঁয়া  যা সত্যিই অবাক করার মতো। উজ্জীবিত  তরুণেরা আগামী বিশ্বকে আরো সুন্দর করার জন্য এই অল্প বয়সেই বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য হাতে নিয়েছে নানান কাজ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স, নিউরোসায়েন্স, এন্ট্রেপ্রেনারশিপ সব ক্ষেত্রেই এসব তরুণেরা কাজ করে যাচ্ছে। মেলায় অংশ নেওয়া কিছু টিম কার্বন ডাই অক্সাইড কে শক্তিতে রূপান্তর করতে কাজ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া এসব টিম নিজ নিজ দেশে ৮-১০ মাস গবেষণা করে প্রোডাক্ট বাস্তবে রূপ দেয় এবং এরাই একটা সময় কোম্পানি হয়ে যায়।  

এবছর গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো আর্লি স্টেজ স্টার্টআপসকে এই কনফারেন্স তাদের প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস নিয়ে ৮ মাস কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে এবং সব মহাদেশ থেকে আশির অধিক টিম যাদের মধ্য থেকে ৫ মাস পর ১৫ টি টিম সিলেক্ট করা হয় স্টার্ট আপস সোকেসে অংশগ্রহণ করার জন্য।

এশিয়া থেকে যে টিমগুলে সিলেক্ট করা হয় তারমধ্যে আছে বাংলাদেশের কাল আগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য টিমগুলো আমেরিকা, ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে এসেছে। এই টিমগুলোর মধ্যে কোস্টারিকার cibus টিম ১০ মিলিয়ন ডলার মুনাফা এবং আমেরিকার ওয়াই ভেঞ্চার এর মার্ভিস বায়ো ওয়ার্কস মিলিয়ন ডলার ক্যাপিটাল শোকেসে আসার আগেই অর্জন করেছে।

ভারতের আইআইটি থেকে ৫-৭টি টিম প্রত্যেক বছর থাকে এবং তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে এই সিনথেটিক বায়োলজি জগতে বাড়ছে।  তবে সব থেকে বেশি টিম থাকে চীন থেকে। সিনথেটিক বায়োলজিতে চীন অনেক এগিয়ে।

ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং উদ্যোক্তা ভাবনা পাণ্ডে মনে করেন, আগামী বিশ্ব বিজ্ঞানের তবে উল্লেখ করলে সেটা হবে জীববিজ্ঞানের। যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি ,রাজনীতি, পরিবেশ সংকট, মেডিসিন, এনার্জি  এবং দুর্ভিক্ষ সব কিছুর সাথে থাকবে এই সিনথেটিক বায়োলজি। যে দেশ যত বেশি এই বিজ্ঞানের শাখায় ভাল করবে তারা পরাশক্তি রূপে আভির্বাভ হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

পরিশেষে বলতে চাই, জীববিজ্ঞানের সুফল গুলোকে কাজে লাগিয়ে উন্নত হচ্ছে বিশ্ব। অনেক দেশ এবিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও যদি এই সিনথেটিক বায়োলজির ব্যাপারে গুরুত্ব দেয় তবে তা দেশের জন্য অবশ্যই মঙ্গল বয়ে আনবে।

লেখকঃ হোসাইন মোহাম্মদ মাসুম 
মাস্টার্স ইন ইমপ্যাক্ট এন্ট্রেপ্রেনারশিপ 
HEC Liège Management School-University of Liège, Belgium.

এসএম