স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সিএমএসডি

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৪, ১১:৫১ পিএম
  • স্বাস্থ্য সরঞ্জাম অধিদপ্তরে উন্নীতকরণের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের অপেক্ষায়
  • সেল্ফ ক্লিয়ারেন্স লাইসেন্সের মাধ্যমে সাশ্রয় হচ্ছে রাষ্ট্রের শতকোটি টাকা
  • চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় মজুত ও সরবরাহ ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সিএমএসডির কার্যক্রম চলছে, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করছি

—মোহাম্মদ হাসান আরিফ, পরিচালক, সিএমএসডি

দেশের স্বাস্থ্য খাতে গত দুই দশকে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে। বেড়েছে বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের পরই প্রয়োজন পড়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। আর এই চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়, মজুত ও সরবারহকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি)। ব্রিটিশ শাসন আমলে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (কেন্দ্রীয় ঔষধাগার) দেশ বিভাজনের পর ১৯৪৭ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতা থেকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জের বন্দর সংলগ্ন জেটিতে স্থানান্তরিত হয়। পরবর্তীতে একই বছর জয়কালী মন্দির থেকে ইডেন বিল্ডিং বর্তমান সচিবালয় হয়ে বিশেষত স্থানের উপযুক্ততা বিবেচনায় সর্বশেষ বর্তমান ঠিকানায় তেজগাঁও স্থানান্তরিত হয়। সীমিত চাহিদা এবং স্বল্প কর্মপরিধির নিরিখে সিএমএসডি প্রাথমিকভাবে ক্ষুদ্র পরিসর ও কলেবরে কাজ শুরু করে। প্রথমদিকে সিএমএসডি মূলত কেবল সরকারি ওষুধের ডিপো হিসেবেই কাজ শুরু করে। 

পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি স্বল্প কিছু ঔষধ সামগ্রী ক্রয় ও বিতরণ করা শুরু করে। কালক্রমে বর্তমানে সিএমএসডি দেশের সরকারি খাতের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যন্ত সব হাসপাতাল বা চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী, মেডিকেল ও সার্জিক্যাল চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও হাসপাতাল সরঞ্জাম ক্রয়-সংগ্রহ, মজুত, সংরক্ষণ ও বিতরণ করে থাকে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আট একরের প্রতিষ্ঠানে রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত সমপ্রসারিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা খাত। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সিএমএসডির কর্মপরিধি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাধীনতার পর যেখানে মাত্র আটটি মেডিকেল কলেজ ছিল, এখন সেখানে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। জেলা হাসপাতাল এখন আড়াইশ বেডের। প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে অর্ধশতাধিক বেডের হাসপাতাল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এখন প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কিছু সংখ্যক ওষুধ সরবরাহ করে থাকে সিএমএসডি। দীর্ঘ পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে সেবা প্রদান করে এলেও সাংগঠনিক কাঠামো, জনবল ও অবকাঠামোগত সংস্কার ও স্টোরের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধিতে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সিএমএসডির স্টোরে ধারণক্ষমতার তীব্র সংকট দেখা দেয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নজর এড়ায়নি। তিনি নির্দেশ দেন আধুনিক পাঁচতলা একটি ভবন নির্মাণের যেখানে প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ভাণ্ডার এলাকা (স্টোর এরিয়া) এবং চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অফিস হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। এর ফলে স্টোর এবং অফিস পরিচালনার সংকট কেটেছে। সিএমএসডিকে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম অধিদপ্তরে উন্নীতকরণের জন্য সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। 

অধিদপ্তর গঠনের লক্ষ্যে নতুন জনবল ও সাংগঠনিক কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়ে অর্থ বিভাগের সম্মতির অপেক্ষায় আছে। সিএমএসডি শুধুমাত্র চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় ও সরবারহ করাতে সীমাবদ্ধ নয়। একই সাথে যেকোনো জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগকালীন মুহূর্তে চিকিৎসা উপকরণ পৌঁছে দেয়। করোনা মহামারির সময়ে সিএমএসডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিন-রাত সিএমএসডির সফল কর্মতৎপরতার প্রশংসা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী করেছেন। কোভিড মহামারির শুরুতে সিএমএসডির কেনাকাটা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলেও এখন শতভাগ অনুসরণ করা হয় সরকারি ক্রয়নীতি। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে হচ্ছে কেনাকাটা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার যাচাই করে কেনা হয় পণ্য। টেকনিক্যাল কমিটির পর্যালোচনার মাধ্যমে কেনাকাটা ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ভিজিটর কার্ডপ্রথা চালু করে অবাঞ্ছিত অসাধু লোকদের অবাধে গমনাগমনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ক্রয় কার্যক্রমে ই-জিপি ধারাবাহিকভাবে শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। সিএমএসডির তথ্যমতে, কেনাকাটার প্রতিটি ধাপ নিয়মতান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। পিপিআর অ্যাক্ট-২০০৬ ও পিপিআর রুল-২০০৮ সেকশন ৬৮ ও সেকশন ৩২ অনুযায়ী ডিপিএম পদ্ধতিতে কেনাকাটা করা হয়। কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে দুই কোটি টাকার নিচে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমতি নিয়ে, পাঁচ কোটি টাকার নিচে হলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুমতি নিয়ে এবং ৫০ কোটি টাকার নিচের কেনাকাটা হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর অনুমতিতে করা সম্ভব। তবে ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। 

রাষ্ট্রীয় অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে ক্রয়কৃত ও বিভিন্ন সূত্রে বিদেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত পণ্যসামগ্রী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে খালাসের জন্য ঢাকা কাস্টম হাউজ থেকে ২০২১ সালে সেল্ফ ক্লিয়ারেন্স লাইসেন্স গ্রহণ করা হয়। এতে কমিশন বাবদ প্রায় শতকোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে। সিএমএসডি বিভিন্ন বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক, ইউএসএআইডি, জাইকার মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন সময় সরকার বা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নির্দেশে এসব উন্নয়ন সহযোগীর অধিযাচনের ভিত্তিতেও অনেক ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদন করে আসছে। ডিজিটালাইজেশন করার ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছে সিএমএসডি। নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে একই জেনেরিক নামের শতশত ওষুধ এবং সমপ্রকৃতির বিভিন্ন যন্ত্রপাতিসমূহকে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এতে কাজের গতিশীলতা বেড়েছে কয়েকগুণ।

কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) অগ্রযাত্রা ও সাফল্য নিয়ে পরিচালক মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সিএমএসডির কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিনিয়ত দেশের স্বাস্থ্য খাতে সমপ্রসারিত হচ্ছে। একই সাথে প্রয়োজন পড়ছে চিকিৎসা সরঞ্জাম। উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করার মাধ্যমে স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার।