আসিফ মাহমুদ

যে কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরকেই খাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

আওয়ামী লীগকে ‘কুমির’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। 

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সরকার পতনের দশম মাসে রাজধানীতে জনভোগান্তি, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পটভূমিতে এই বক্তব্য দেন আসিফ মাহমুদ।

তিনি লেখেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ‘উত্তর’ এবং দিল্লি জোটভুক্ত হয়ে যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে।”

একই পোস্টে ইংরেজিতে তিনি লেখেন, “You are not one of them — you were only temporarily brought into the fold.”

তবে এই 'তুমি' বলতে তিনি কাকে বোঝাতে চেয়েছেন বা ‘উত্তর’ ও ‘দিল্লি জোট’ বলতে কি বুঝিয়েছেন, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

আসিফ মাহমুদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত ইউনূস সরকারে তিনি প্রথমে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান; পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও তার অধীনে আসে।

ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “আমাদের না আছে মরার ভয়, না আছে হারানোর কিছু। একমাত্র আফসোস, গণতান্ত্রিক রূপান্তর আর এ দেশের মানুষের ভাগ্য কোনোটাই ইতিবাচক পথে যাচ্ছে না। স্বপ্ন দেখে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টই বোধহয় এ দেশের ভাগ্য।”

সেদিন সন্ধ্যায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর ও এনসিপির একাধিক সূত্র।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে ওই বৈঠক হয় এবং সূত্র জানায়, এনসিপির নেতারা তাকে পদে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “যে সমস্ত উপদেষ্টাগণ একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত—তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই সরকারের স্বার্থেই তাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত।”

এদিকে, আসিফ মাহমুদ আওয়ামী লীগকে নিয়ে যে সতর্কতা দিয়েছেন, সেই দলটিকে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের এক নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ১০ মে প্রকাশিত আদেশে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় তারা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে।

নির্বাচন কবে হবে—এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কয়েক দফা বলেছেন, সীমিত সংস্কার হলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এবং বড় পরিসরে সংস্কার হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

তবে বুধবার সেনাবাহিনীর সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, তিনি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চান—এমন খবর জানিয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম।

ইএইচ