ঝড়-জলচ্ছাস রোধে করা বাঁধ এখন দর্শনীয় স্থান

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৩, ০৪:৪৯ পিএম

দক্ষিনের জেলা বাগেরহাটের সর্বশেষ উপজেলা শরণখোলা। প্রায় ১৫২ বর্গ কিলোমিটারের এই উপজেলার পূর্বে বলেশ্বর নদী, উত্তরে মোরেলগঞ্জ, দক্ষিন ও পশ্চিমে সুন্দরবন এবং বঙ্গোপসাগর। ঝড় জলচ্ছাসের মত নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ এই উপজেলাবাসীর নিত্যসঙ্গী। 

চার ইউনিউয়নের ছোট্ট এই উপজেলাবাসী সব থেকে বড় প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। সুপার সাইক্লোন সিডর নামের ওই ঘূর্নিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছিল শরণখোলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন। 

সরকারি হিসেবে সিডরে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের। সিডরের পরে শরণখোলাবাসীর ঘুরে দাড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা কাজ করেছে। কিন্তু উপজেলাবাসীর এক মাত্র দাবি ছিল ঝড় জলচ্ছাস ঠেকানোর জন্য বলেশ্বর নদীর পাড়ে টেকসই বাঁধ নির্মান। 

জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান করে সরকার। ঝড়-জলচ্ছাস ঠেকাতে বলেশ্বর নদীর তীরে করা বাঁধ এখন আশির্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে শরণখোলাবাসীর কাছে। মাটির বাঁধকে টেকসই করতে দেওয়া কংক্রিটের ব্লক রীতিমত দর্শনীয় স্থানে রুপ নিয়েছে। 

এক সাথে নদী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার মানুষ আসছে শরণখোলা উপজেলা সদর সংলগ্ন বলেশ্বর নদীর তীরে। একদিকে বিশালাকৃতির নদী, নদীর ওপারে বন, সুদৃশ্য নদীর তীর, নীল আকাশ সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। যা আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের। 

এদিকে বলেশ্বর নদীর তীরের এই পর্যটন সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। সম্ভাবনাময় এই তীরের নাম দেওয়া হয়েছে রিভারভিউ ইকো পার্ক। রায়েন্দা-মাচুয়া ফেরিঘাটের কিচু সামনে থেকে বড়ইতলা পর্যন্ত  প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে ব্লকে লাল ও হলুদ রং করা হয়েছে। বসানো হয়েছে রঙ্গিন ছাতা ও বীচ খাট। এসব কর্মযজ্ঞে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা। 

বিভিন্ন প্রকার খাবারের পশরা নিয়ে বসেছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে এনেছে স্পিড বোড। ১০০ টাকা ব্যয়ে স্পিড বোডে ঘুরতে পাড়েন দর্শনার্থীরা। সব মিলিয়ে ২০ জনের অধিক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে দর্শনার্থী বৃদ্ধির সাথে রিভারভিউ ইকো পার্ক ঘীরে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই সাথে সুন্দরবনের কটকা-কচিখালী পর্যটন এলাকায়ও দর্শনার্থী বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বিকেলে নদীর তীরে ঘুরতে আসা পিরোজপুর সদরের অমিতাভ মন্ডল বলেন, নদীর স্রোত ও আকাশে সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখে খুবই ভাল লেগেছে। এমন দৃশ্য সচারচর দেখা যায় না।

পরিবার-পরিজন নিয়ে বিকেলে ঘুরতে আসা হালিম বলেন,পরিবেশ। সাথে নদীর স্রোতের কলতান যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। সবার উচিত অবসর সময়ে নদী ও নির্মল পরিবেশ যাওয়া। 

রিভারভিউ ইকোপার্কে ফুসকা বিক্রেতা মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বেশ কিছুদিন হল বিকেল থেকে এখানে ফুসকা বিক্রি করি। প্রতিদিন অনেক লোক আসে। বেচা-বিক্রিও ভাল হয়। আমি ছাড়াও কয়েকজ আছে যারা ফুসকা, চানাচুর, ঝালমুড়ি ও আইসক্রিম বিক্রি করেন।

স্পিডবোড চালক মো. সেলিম বলেন, জন প্রতি একশ টাকার বিনিময়ে ১০ মিনিট স্পিড বোডে ঘুরাই দর্শনার্থীদের।স্পিডবোডে ঘুরে তারাও খুশি হয়, আমারও আয় ভাল হয়।

শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, শরণখোলার মানুষের ঘোরার জন্য তেমন কোন জায়গা ছিল না। এখণ সবাই রিভারভিউ পার্কে আসছে, সময় কাটাচ্ছে। এক কথায় ভ্রমন পীপাসুদের অন্যতম আকর্ষনে পরিতনে হয়ে বলেশ্বর নদীর তীর। আশাকরি শরণখোলাবাসীর সম্মৃদ্ধির জন্য রিভারভিউ ইকোপার্ক।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকি বলেন, বলেশ্বর নদীর তীরকে আমরা পর্যটন বান্ধব করে গড়ে তুলেছি। আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি, কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমান দর্শনার্থী আসছে। সেই সাথে অর্থনীতির বিকাশ শুরু হয়েছে। নতুন ধরনের জীবাকার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা নানা ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যার মাধ্যমে অনেকের জীবীকা নির্বাহ হচ্ছে। ভবিষ্যতে আধুনিক রেষ্টুরেন্ট ও হোটেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, শরণখোলা থেকে সুন্দরবনের কটকা. কচিখালী ও দুবলার চর যাওয়া খুবই সহজ। কিন্তু পরিচয় ও জানাশুনা না থাকায় সবাই মোংলা দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। বলেশ্বর নদীর তীরে যদি দর্শনার্থীরা বেশি আসতে থাকে, তাহলে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী ও দুবলার চর এলাকায়ও দেশিবিদেশী দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাবে। আমাদের সেই ধরণের প্রচার-প্রচারণা চালানোর প্রক্রিয়া রয়েছে।

যেভাবে যাবেন রিভারভিউ ইকোপার্কে: ঢাকাসহ যেকোন স্থান থেকে পরিবহনে সড়কপথে শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান বা অটোতে রায়েন্দা-মাসুয়া ফেরিঘাট হয়ে বড়ইতলায় যেতে হবে। এছাড়া পায়ে হেটেও যাওয়া যায়, তাতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫মিনিট।


এমএইচআর