জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

প্রিভেন্টিভ অনকোলজি ইউনিট চালু

মো. মাসুম বিল্লাহ প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২২, ০১:৩৭ এএম

‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়’। চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রবাদটি শতভাগ সত্য। অসচেতনতা, অবহেলা, লজ্জা আর অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে অধিকাংশ ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয় শেষ ধাপে। নারীরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে। 

প্রতিনিয়ত দেশে ক্যানসার আক্রান্ত-মৃত্যু বেড়েই চলছে। বিলম্বে রোগ শনাক্তের কারণে একদিকে রোগীর শেষ রক্ষা হয় না, অন্যদিকে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে পরিবার। দ্রুত ক্যানসার শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হলে প্রাণ ও অর্থের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মত ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের। 

সে লক্ষ্যে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ক্যানসার শনাক্তে প্রিভেন্টিভ অনকোলজি (ক্যানসার প্রতিরোধ) ইউনিট চালু করা হয়েছে। রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ‘সি’ ব্লকে গত বৃহস্পতিবার এই ইউনিট চালু করা হয়। 

যেখানে আগামী ঈদের পর স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখ গহ্বরের ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর রোটারি ক্লাবের সহায়তায় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের এ কার্যক্রম বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল ও এলাকাভিত্তিকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হবে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। 

প্রিভেন্টিভ অনকোলজির যাত্রা শুরু উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্যানসার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলোজি বিভাগের প্রধান ও রোটারির ডিস্ট্রিক্ট ব্রেস্ট ক্যানসার কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঈদের পর থেকে ক্যানসার প্রতিরোধ এবং স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখ গহ্বরের ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে। ক্যানসার ইনস্টিটিউট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল ও এলাকাভিত্তিক সচেতনতা এবং স্ক্রিনিং কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। 

রোটারি এসব কার্যক্রমের সহায়তা করবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও সহায়তা পেলে আরও মানুষকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সম্প্র্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছর মারা যায় এক লাখ আট হাজার।  

আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি পরিবারে একজন ক্যানসার রোগীর আশঙ্কা। আর মৃত্যুহার ১৩ ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ১৯ শতাংশে অবস্থান করছে, যা বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। প্রতি বছর ১২ হাজার ৭৬৪ জন নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে সাত হাজারেরও বেশি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০০৫ সালে দেশে প্রথম হাসপাতালভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন চালু হয়, যা থেকে ক্যানসারের ব্যাপ্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা গেলেও পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সঠিক তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য দেশের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার নির্ণয় জরুরি। কারা কোন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক পরিসংখ্যান জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার নিবন্ধন দরকার। 

কারণ এখন পর্যন্ত সরকারের সেক্টর কর্মসূচিতে এই জনসংখ্যাভিত্তিক নিবন্ধন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। চলমান ৫ বছরমেয়াদি মাল্টি সেক্টোরাল এনসিডি কন্ট্রোল প্ল্যানে ২০২২ সালের মধ্যে ১৯টি পুরোনো সরকারি মেডিকেল কলেজে হাসপাতালভিত্তিক নিবন্ধন চালু করার উদ্যোগ নেয়ার পরও তা থেমে গেছে। 

২০০৯ সালে ৫ বছরমেয়াদি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। ২০১৪ সালে যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু এর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের খুবই সামান্য বাস্তবায়িত হয়েছে। এমনকি প্রয়োজনীয় আপডেট করা হয়নি। এখন জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল ও সঠিক কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।