ফিডার পদ পূরণ করেও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হতে পারছেন না উচ্চমান সহকারীরা। নিয়ম অনুযায়ী, যোগদানের পাঁচ বছর পর তার ফিডার পদ পূর্ণ হয়েছে।
অর্থাৎ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) পদে পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন প্রায় আড়াই বছর আগে। কিন্তু পদোন্নতি পাননি। এনবিআরে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে শতবার ধরনা দিয়েও লাভ হয়নি। এ আড়াই বছরে প্রায় সবাই দুটি ইনক্রিমেন্ট বঞ্চিত হয়েছেন।
প্রায় ৯ বছর চাকরি করেও পরিবার, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন কারো কাছে পদোন্নতির কথা বলতে পারেন না। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হওয়ার তালিকায় থাকা ১৭৫ জন পদোন্নতির জন্য এনবিআরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, বর্তমানে ৬৩ জন, ২৯ জন ও ৮৩ জনের তিনটি ব্যাচের মোট ১৭৫ জনের পদোন্নতি প্রক্রিয়া চলমান। ফিডার পদধারী তিনটি ব্যাচ কর্মচারীরা দেশের সব কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট, আপিলাত ট্রাইব্যুনালে কর্মরত রয়েছেন।
এর মধ্যে ৬৩ জনের ডিপিসি হয়েছে। ইতোপূর্বে সরাসরি ফাইল পিএসসিতে পাঠানো হতো। কিন্তু ৬৩ জনের ক্ষেত্রে আগের নিয়ম ভেঙে ফাইল পিএসসিতে না পাঠিয়ে আইআরডিতে পাঠানো হয়েছে। অনেক দিন ধরে আইআরডিতে ফাইল পড়ে ছিল।
সম্প্রতি সেই ফাইল আবার তালাশি (কোয়ারি) দিয়ে এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের সদস্য, প্রথম সচিব, দ্বিতীয় সচিব— সবার পেছনে শতবার ধরনা দিয়েও পদোন্নতি পাননি তারা। ৬৩ জনের ব্যাচে রয়েছেন তিনজন সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার অপারেটর, আটজন অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, একজন ক্যাশিয়ার ও ৫১ জন সিপাই।
সিপাই পদের ৫১ জন ৩ জানুয়ারি ২০১০, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের আটজন ২০১৩ সালের ১২ মার্চ, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের তিনজন ও একজন ক্যাশিয়ার ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন।
পদোন্নতি বিধিমালা অনুযায়ী, সিপাই, সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর ও ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত কর্মচারীদের ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার পদে কর্মরত কর্মচারীদের ২০২০ সালের মার্চ মাসে ফিডার পদ পূর্ণ হয়। অর্থাৎ তারা এআরও পদে পদোন্নতির উপযুক্ত হয়।
সূত্র আরও জানায়, এআরও পদে পদোন্নতি দিতে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি তথ্য চেয়ে চিঠি ইস্যু করে। বিশেষ করে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ফিডার পদে চাকরিকাল পূর্ণ করেছে। বিশেষ করে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ফিডার পদে চাকরিকাল পূর্ণকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে এই তথ্য নেয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছে— কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ, সার্ভিস বুক, ফিডার পদে চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত আদেশ, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অনুমতি বা আদেশ, পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন।
এসব তথ্য নিয়ে যাচাই শেষে ২০২০ সালের ১১ জুন এনবিআর পদোন্নতির জন্য যোগ্য ৬৩ জন ফিডার পদধারী মিনিস্টোরিয়াল কর্মচারীর ‘খসড়া জ্যেষ্ঠতা’ তালিকা প্রকাশ করে।
সব যাচাই শেষে এই ৬৩ জনের বিভাগীয় পদোন্নতি ও নির্বাচন কমিটির (ডিপিসি) সভা শেষ করে। আগের নিয়ম অনুযায়ী ডিপিসি হওয়ার পর ফাইল পিএসসিতে পাঠানোর কথা। কিন্তু এনবিআর থেকে সেই ফাইল অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) পাঠানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সময়ের কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২০ সাল ও ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফিডার পদ পূর্ণ হওয়া ৮৩ জনের একটি ব্যাচ রয়েছে। বিভাগীয় পরীক্ষা উত্তীর্ণ এই ৮৩ জনের এনবিআর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্য চেয়েছে। সব তথ্য দেয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতা তালিকা ও ডিপিসি সভা না করে শুধু খসড়া জ্যেষ্ঠতা তালিকা করেই এনবিআর ফেলে রেখেছে। এই ৮৩ জনের মধ্যে রয়েছে সাঁটলিপিকার-কাম কম্পিউটার অপারেটর পাঁচজন, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার অপারেটর ১৫ জন, কম্পিউটার অপারেটর আটজন, উচ্চমান সহকারী ৯ জন, ক্যাশিয়ার চারজন ও সিপাই ৪১ জন।
২৯ জনের একটি ব্যাচের এআরও পদে পদোন্নতি দিতে ২০২০ সালের ৬ জুলাই তথ্য চেয়ে চিঠি ইস্যু করে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ফিডার পদে চাকরিকাল পূর্ণকারী কর্মচারীদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়।
প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও এই ব্যাচটির ডিপিসি ও চূড়ান্ত জ্যেষ্ঠতা তালিকা করেনি এনবিআর। এ দুই ব্যাচের কর্মচারীরাও দীর্ঘদিন ধরে এনবিআরের টেবিলে টেবিলে ঘুরছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
পদোন্নতিবঞ্চিতরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ফিডার পদ পূর্ণ হলেই পদোন্নতি দেয়া হয়। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে এনবিআর সরাসরি (পিএসসির মাধ্যমে) ৫০ শতাংশ ও পদোন্নতির মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পদ পূরণ করে থাকে।
সাঁটলিপিকার-কামকম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ও সিপাই পদ থেকে ৫০ শতাংশ হারে পদোন্নতি দেয়া হয়। কাস্টম হাউস, ভ্যাট কমিশনারেট ও এনবিআরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা এই পদোন্নতির সুযোগ পান।
এর মধ্যে সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পাঁচ বছর, অফিস সহকারী সাত বছর ও সিপাই পদে ১০ বছর চাকরির বয়স হলে বিভাগীয় পরীক্ষার সুযোগ পান। অর্থাৎ পদোন্নতির জন্য ফিডার পদধারী হন। এই পদোন্নতির বিষয়ে এনবিআরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ কথা বলতে রাজি নন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পদোন্নতির ফাইল প্রসেস হচ্ছে। দ্রুত পদোন্নতির জট খুলবে বলেও জানান তারা।
জানতে চাইলে গতকাল এনবিআরের শুল্ক প্রশাসনের সদস্য সাদিক জানান, বিষয়টি এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। যেহেতু আজ অফিস নেই। অফিসে আসেন, দেখে বলতে পারব।’