ভাতার ৭৫০ টাকাই প্রতিবন্ধী সিফাতের একমাত্র ভরসা!

ইমরান আল নবিন, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২, ১২:৪৯ এএম

জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী সিফাত। ১৫ বছর বয়সেও দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না সে। হামাগুঁড়ি দিয়ে চলতে হয়। কথাও বলতে পারে না। নেই বুদ্ধিবিবেচনা। এটিই যেন সিফাতের জীবনের অভিশাপ হয়েছে। এ কারণে বিচ্ছেদ হয়েছে বাবা-মায়ের। বোঝা ভেবে তাকে ফেলে যে যার মতো আলাদা সংসারও গড়েছেন তারা। এখন মা-বাবার আদর-স্নেহ বঞ্চিত সিফাত বেড়ে উঠছে তার নানা ও নানুর কাছে।

সিফাতকে দেখতে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের নানা বাড়িতে যান এ প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে শোনা যায়, দিনমজুর নানার বাড়িতে বেড়ে উঠছে সিফাত। তার চলাফেরা করতেও লাগে অন্যের সহায়তা। পড়ালেখাতো দূরের কথা, অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ নিয়ে পথ চলছে সে।

স্থানীয়রা জানায়, জন্মের প্রায় দুই বছর পরই সিফাতের অস্বাভাবিক বেড়ে ওঠা চোখে পড়ে তার  মা-বাবার। এজন্য তাকে ডাক্তারও দেখান তারা। কিন্তু পাঁচ বছর বয়সে যখন জানা যায় তার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখন সিফাত ও তার মাকে ফেলে চলে যান বাবা হামিরুল ফরাজী।  

আর সিফাতের বয়স যখন ১০ বছর ছুঁইছুঁই তখন মা রাশিদা বেগমও তাকে ফেলে ঢাকা চলে যান। তখন থেকেই সিফাতের মা-বাবা গড়েছেন আলাদা সংসার। সিফাতের নানা নূর মোহাম্মদ হাওলাদার বলেন, ‘কখনো জেলে কাজ করি, কখনো কৃষি কাজ করি। এই আয়ের টাকায় সিফাতসহ পাঁচজনের সংসার চলা অনেক কষ্টের।’

তিনি আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান-মেম্বারের দেয়া চার মাসে তিন হাজার টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায় সিফাত। এ টাকায় ওর খরচ চলে না।’ নানু রানি বেগম বলেন, ‘সিফাত নিজে ভাত খেতে পারে না। তিন বেলা ভাত খাওয়াইয়া দিতে হয়।’ সিফাতের মতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, এই ইতিবাচক মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রাকিব হোসেন বলেন, ‘বাবা-মা বিহীন এতিম শিশুদের জন্য জেলা এবং বিভাগে ‘সরকারি শিশু পরিবার’ কেন্দ্র রয়েছে।

সেখানে এতিম শিশুদের রাখা হয়। সিফাতের যেহেতু বাবা-মা থেকেও নেই তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে তাকে বিশেষ বিবেচনায় সেখানে রাখা যেতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য আগে ৭৫০ টাকা ভাতা ছিল, চলতি অর্থবছরে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা ভাতা করা হয়েছে। শিক্ষা বৃত্তিরও ব্যবস্থা রয়েছে।’