জ্বালানিতে আশার আলো

মহিউদ্দিন রাব্বানি প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৩, ০১:২১ এএম
  • জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৬১৮ এমএমসিএফ
  • গড়ে তিনটি কূপের একটিতে সাফল্য

সব কূপ খনন সম্ভব হলে গ্যাস সংকট কমবে

—মোহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাপেক্স

 

প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়নেই মিলবে সমাধান

—বদরুল ইমাম, ভূতত্ত্ববিদ

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জ্বালানি খাত। দেশে ডলার সংকটের কারণে গত বছর এলএনজি আমদানি বন্ধ  রেখেছে সরকার। এতে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা) নতুন করে ৪৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তড়িৎ উৎপাদনের জন্য ২০২২-২৫ চার বছর মেয়াদি কূপ খননের কার্যমেয়াদ এক বছর কমিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের মধ্যে এই ৪৬টি কূপ খননে কাজ সম্পন্ন হবে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এতে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাসের সংস্থান হবে। এতে করে এলএনজি আমদানি কমানো সম্ভব হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশের সমুদ্রসীমায় নতুন কোনো খনি আবিষ্কার হলে  জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে গ্যাস উত্তোলনে আশার আলো দেখাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি-বাপেক্স।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশে এখনো ৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়েছে। অন্যদিকে দেশে ডলার সংকটের জন্য একটি বড় কারণ হিসেবে জ্বালানির আমদানিকে দায়ী করছেন অনেকে। তবে, ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, আমাদের দেশ গ্যাসের  জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। কিন্তু গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে অবহেলা ও দুর্বল উদ্যোগের কারণে গ্যাস-সংকট আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর মাত্র একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়, গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে অনুসন্ধানের এ হার বিশ্বে ন্যূনতম। তবে দেরিতে হলেও আশার কথা হচ্ছে সমপ্রতি দেশের নিজস্ব গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি জরুরি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ঘোষণা করা হয়েছে। 

২০২২ সালের আগস্ট মাসে পেট্রোবাংলা ২০২৪ সালের সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন পরিকল্পনা ঘোষণা করে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই অল্প সময়ে পরিকল্পনা বাস্তায়ন করা সম্ভব নয়। ৪৬টি কূপের মধ্যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ, ১২টি উন্নয়ন কূপ ও ১৭টি ওয়ার্কওভার কূপ অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে গড় সাফল্যের হার বেশি। প্রতি তিনটি অনুসন্ধান কূপ খননে আমরা অন্তত একটিতে সফল্য দেখি। সহজভাবে বললে, ‘অনুসন্ধান কূপ’ মানে অজ্ঞাত স্থানে খনন করা হয় এবং গ্যাস পাওয়া গেলে তা দেশের গ্যাস মজুত বাড়ায়। ‘উন্নয়ন কূপ’ হচ্ছে ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন কূপ খনন। আর ‘ওয়ার্কওভার কূপ’ নতুন কূপ নয়; বরং আগে খনন করা ও পরিত্যক্ত কূপে মেরামত বা কোনো যন্ত্রাংশ সংযোজনের মাধ্যমে সেখানে রয়ে যাওয়া বা ফেলে আসা গ্যাস তোলার চেষ্টা করা।

নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪৬টি কূপ খননের কাজ ২০২৫ সালের পরিবর্তে ২০২৪ সালের মধ্যেই শেষ করা হবে। অর্থাৎ, তিন বছরের পরিবর্তে এখন দুই বছরের মধ্যেই ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এ সময়ে যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা, এর ছয়টি ২০২৩ সালে এবং ১১টি ২০২৪ সালে খনন করা হবে। কেবল এই অনুসন্ধান কূপগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তনের যৌক্তিকতা বিচার করে দেখা যেতে পারে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী আমার সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের ৪৬টি কূপ খননের কাজ চলমান। আশা করা যায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। বাপেক্সের এত কম লোকবল নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় গ্যাস কূপগুলোতে আমাদের কাজ করতে বেশি লোক লাগবে। এতে আমরা আউটসোর্সিংয়ের সাহায্য নেবো।’ ডলার সংকটে সমস্যা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ৪৬টি কূপ খনন করতে পারলে আমাদের গ্যাস সংকট অনেকটা কমে যাবে। 

ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স তার বর্তমান লোকবল ও রসদ সামর্থ্য নিয়ে বছরে দুই থেকে তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে পারে। সেই বিবেচনায় ২০২৩ সালে ছযটি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনাই উচ্চাভিলাষী। আর ২০২৪ সালে ১১টি অনুসন্ধান কূপ খনন করার পরিকল্পনাকে বলতে হয় অতি উচ্চাভিলাষী। তিনি আরও বলেন, নতুন গ্যাসকূপ খননের যে উদ্যোগ পেট্রোবাংলা নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে যথেষ্ট মাত্রায় কূপ খনন করা হলে বর্তমান গ্যাস-সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।