চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে সিরিজ জয়

আহমেদ হৃদয় প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৩, ১২:৪৯ এএম
  • প্রথমবারের মতো ইংলিশদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো টাইগাররা
  •  থ্রি লায়ন্সদের বিপক্ষে যে কোনো ফরম্যাটে এটিই প্রথম

ইতিহাস বাংলাদেশের হাতের নাগালেই ছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়তে শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান। হাতে অবশ্য ছিল চারটি উইকেট। তবে তাসকিনকে সঙ্গে নিয়েই ইতিহাস গড়ার কাজটি সেরে ফেললেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অবশ্য কাজের কাজটি করেছেন তাসকিন আহমেদ। শেষ ওভার পর্যন্ত যাওয়ার দরকারই হলো না! ১৯তম ওভারে ক্রিস জর্ডানের করা ৫ম বলটি তাসকিনের ব্যাট ছুঁয়ে সীমানার দিকে যাচ্ছিল। আর তাতেই গর্জনে ফেটে পড়ল মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারি। বল সীমানা পার হতেই বিজয় উল্লাসে মেতে উঠল সবাই। ৭ বল বাকি থাকতেই চার উইকেটে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় লেখা হলো নতুন ইতিহাস। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। যে ফরম্যাটে কি-না বাংলাদেশ দুর্বল। আর সেই ফরম্যাটেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাজিমাত করলেন সাকিবরা। তবে কোন জাদুতে দলের এমন পরিবর্তন! হাথুরুসিংহে দলের কোচ হওয়াতেই কী ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ? সেসব প্রশ্নের উত্তর না হয় পরে খোঁজা যাবে। আপাতত জয়ের আনন্দে ভেসে বেড়ানো যাক।

দলে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ক্রিকেটের ছোট এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের শুরু হয়েছে নতুন পথচলা। আর টি-টোয়েন্টির নতুন পথচলার শুরুতেই ইতিহাস গড়ে ফেলল টাইগাররা। ৪ উইকেটের জয়ে যে কোনো ফরম্যাট মিলিয়েই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। আগামীকালের ম্যাচ জিতলে ইংলিশরা হবে বাংলাওয়াশ।

গতকাল মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। আর তাতে সফলও হয়। মাত্র ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে বাংলাদেশও খুব একটা ভালো শুরু করতে পারেনি। তবে দলকে জিতিয়ে ৪৭ বলে ৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এর আগে ১২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জেতার ভিত করে দেন মিরাজ। ট্রিকি উইকেটে নাগালে থাকা রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার পার করার পর বিদায় নেন লিটন দাস। এক চারে ইনিংস শুরু করে টানতে পারেননি। আবারও এই সিরিজে দুই অঙ্কের আগেই ফিরতে হয় এই ওপেনারকে। স্যাম কারানের স্লোয়ারে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে দেন সহজ ক্যাচ। ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। খোলস ছেড়ে বের হতে পারেননি রনি তালুকদারও। কঠিন উইকেটে হাঁসফাঁস করতে করতে ফেরেন ৯ রান করেই। 

পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে মোটে ৩২ তুলতে পারে বাংলাদেশ। চার নম্বরে ব্যাট করতে ক্রিজে আসেন তৌহিদ হূদয়। ব্যাটিংও করছিলেন বেশ ভালোই। আদিল রশিদকে দুটি বাউন্ডারিও মারলেন। তবে ক্রিজে থিতু হয়েও ইনিংস টানতে পারেননি। অভিষিক্ত লেগ স্পিনার রেহান আহমেদের বলে বাজে শটে দেন আত্মাহুতি। ৫৬ রানে ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। এরপরই ক্রিজে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ। শান্তর সঙ্গে মিলে চতুর্থ উইকেটে আনেন ৩২ বলে ৪১ রান। গুরুত্বপূর্ণ এই জুটিই গড়ে দেয় ম্যাচের গতিপথ। ১৬ বলে ২০ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে যান মিরাজ। তার বিদায়ের পর দ্রুত সাকিব ও আফিফ হোসেনকে হারায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খুলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। মঈন আলির বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাকিব। জোফরা আর্চারের গতিতে পরাস্ত হয়ে আফিফের বেল উড়ে যায় বাউন্ডারি লাইনে। তখন অবশ্য মিরপুরের আকাশে কিছুটা শঙ্কার মেঘ জমেছিল। তবে ২ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ নিয়ে চিন্তা বাড়াতে দেননি শান্ত। ক্রিস জর্ডানের করা ১৯তম ওভারে তাসকিন আহমেদ দুই বাউন্ডারিতে শেষ করে দেন ম্যাচ।

এর আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের তৃতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। ওপেনার ডেভিড মালানকে সাজঘরের টিকিট ধরিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। ৮ বলে ৫ রান করে হাসান মাহমুদের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে কিছুটা আশার আলো দেখতে পায় থ্রি লায়নসরা। তিনে নামা মঈন আলিকে নিয়ে রান বাড়াচ্ছিলেন ফিল সল্ট। তবে সেই জুটিকে বেশিদূর এগোতে দেননি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ ধরে দলীয় ৫০ রানে সল্টকে সাজঘরে পাঠান সাকিব। নাসুম আহমেদের করা পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে ১৩ রান তুলে পুষিয়ে দিয়েছিলেন তারা। চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সফল হতে পারেননি জস বাটলার। হাসান মাহমুদের এক ইয়র্কারে স্টাম্প উপড়ে যায় ইংল্যান্ড অধিনায়কের। কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালটা আক্রমণ চালাতে পারতেন মঈন। তাকে বিপজ্জনক হতে দেননি মিরাজ।

 মিরাজকে স্লগ সুইপে ওড়াতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা দেন তিনি। ৫৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাকফুটে চলে যায় সফরকারীরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েছিলেন বেন ডাকেট ও স্যাম কারান। দুই বাঁহাতি ব্যাটার ক্রিজে থেকে নিজে বোলিংয়ে না এসে অফস্পিন চালিয়ে গেছেন সাকিব। অনিয়মিত বোলার শান্ত, আফিফ হোসেনরা সফল না হলেও মিরাজ দলকে পাইয়ে দেন জোড়া উইকেট। ১৫তম ওভারে তার বলে পরপর স্টাম্পিং হয়ে ফিরে যান কারান ও ক্রিস ওকস। ইনিংস মেরামতের পথে থাকা ইংল্যান্ড ফের ধাক্কা খায়। ৯১ রানে পড়ে যায় ৬ উইকেট। মিরাজ তার শেষ ওভারে ফেরান ক্রিস জর্ডানকেও। মিরাজের বল ছক্কা পেটাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে রনি তালুকদারের হাতে জমা পড়েন তিনি। একাদশে এসেই ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন মিরাজ। চরম চাপ স্লগ ওভারেও সামলাতে পারেনি ইংল্যান্ড। শেষ ওভার পর্যন্ত টিকে বেন ডাকেট ২৮ বলে করেন ২৮ রান। 

তবে বাকিরা কেউ তাল মেলাতে পারেননি। শেষ ৪ ওভারে এদিনও আসে মাত্র ২২ রান। আর তাতেই ১১৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে দু’দল। তবে ইংলিশদের এদিন হারাতে পারলেই আরও একটি নতুন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ।