আদানি নিয়ে রাজনীতিতে বচসা

মহিউদ্দিন রাব্বানি প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম

 

আদানি নিয়ে অভিযোগ অসত্য ও মনগড়া

—ওবায়দুল কাদের

 

আদানির সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তির বৈধতা দিচ্ছে সরকার

—গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

 

সরকারের ভুলনীতির দায় জনগণের ওপর চাপছে

—সিপিবি

 

বহুল আলোচিত আদানির বিদ্যুৎ দেশে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হলেও সমালোচনার শেষ নেই। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সব মহলে এখন আলোচনার ঝড়। সমালোচকরা আদানির সাথে চুক্তিকে অন্যায্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত আদানি পাওয়ার লিমিটেডের ১৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ প্রায় দেড় হাজার মোগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। আদানি চুক্তি বিরোধিতাকারীরা বলছেন, ২৫ বছর মেয়াদি এ চুক্তির মাধ্যমে মুনাফা বৃদ্ধির বিশেষ সুযোগ নিয়েছে ভারতীয় কোম্পানিটি।

এই বিদ্যুৎ চুক্তিকে দেশের ‘স্বার্থবিরোধী’ হিসেবে উল্লেখ করে এটি সংশোধন, এমনকি বাতিলেরও দাবি তোলা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লার মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে একটি সমস্যা চিহ্নিত হলে আদানি বিতর্ক সামনে আসে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিপিডিবি আপত্তি জানালে সেটি সমাধানে দুপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়। যদিও পরে কয়লার দম কিছুটা কমানো হয়। এদিকে দেশে সরকার বিরোধীরা সমালোচনার ঝড় তুলছে। অপর দিকে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মনে করেন, সরকার ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এনে আদানির সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তির বৈধতা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের আদানির সঙ্গে সরকারের বিতর্কিত বিদ্যুৎ চুক্তি বাস্তবায়নের পথে। 

ইতোমধ্যে তারা ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এনেছে। এই ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার মধ্য দিয়ে চুক্তিকে বৈধ করেছে। তিনি বলেন, এখানে দেখা গেছে ভারতের অন্যান্য বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো যে দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে তার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি মূল্যে আমাদের এ বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। অথচ, ভারতবর্ষে কেউ বিতর্কিত এই আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনছে না। এদিকে আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির অভিযোগ অসত্য ও মনগড়া বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি প্রসঙ্গে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে মনগড়া ও বানোয়াট মন্তব্য করেছেন।

নিরবচ্ছিন্নভাবে জনগণের বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার আদানির কাছ থেকে একটি লাভজনক চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে দাবি করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ভারতের একটি কোম্পানিকে দিয়ে দুই বিলিয়ন ডলার এককালীন বিনিয়োগ করিয়ে, দেশটির অভ্যন্তরে ৬০০ একর জমির ওপর বিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়ে, ভারতের আকাশে কয়লা পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, তা সর্বনিম্ন দামে ক্রয় করে বাংলাদেশে আনা হবে এবং সেটা মানুষ ব্যবহার করবে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করেই আদানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। 

তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে দেশের জনগণ লাভবান হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে সরব সিপিবি। সরকারের ভুলনীতি ও দুর্নীতির দায় সাধারণ জনগণের ওপর চাপানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। অভিযোগ করে সিপিবি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতির মাধ্যমে জানায়, ভুলনীতি ও কমিশন ভোগীদের সুযোগ দিতে বিদ্যুৎ খাতে বড় আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে।

একই সঙ্গে বিবৃতিতে বিদ্যুৎ খাতের সব চুক্তি পর্যালোচনা, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ ‘অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্র’ বাতিলের দাবি করা হয়েছে। সিপিবি আরও বলেছে, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধ করে এ খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু সরকার সেই বোঝা জনগণের কাঁধে চাপাচ্ছে এবং এর ভুক্তভোগী হবেন দরিদ্র গ্রাহক, কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ সাধারণ মানুষ।

এদিকে ভারতের ঝাড়খণ্ডে আদানি গ্রুপের উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশে আসা শুরু হয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ৫০০ কেভি লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুরে এসে একটি লাইনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গ্রিডে এবং একটি লাইনে বগুড়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে প্রথমবারের মতো ভারতীয় আদানি কোম্পানির বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশে। নেসকো লিমিটেড চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলিউল আজিম বলেন, জাতীয় গ্রিডে আদানির বিদ্যুৎ যোগ হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীও উপকৃত হচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে পিডিবি সঙ্গে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের চুক্তি সই হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন চলতি অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসতে পারে।