শিগগিরই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি

বেলাল হোসেন প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ১১:৩৭ পিএম
  • অনুমোদিত পদ ১৩৫টি কর্মরত ৩২০ জন
  •  নতুন যুক্ত হচ্ছেন ৮০ থেকে ৯০ জন

পদোন্নতির পর নতুন দায়িত্ব না পেলে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় না প্রশাসনের পিরামিডও অক্ষুণ্ন থাকে না

খুব শিগগিরই বিসিএস ১৭তম ব্যাচকে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিবেচনা করে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এতে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন যুগ্মসচিব পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হতে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরের আগেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। এমন তথ্য গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে জানান, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা হিসাব-নিকাশ করেই এ বছর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেবে সরকার। 

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এবারের পদোন্নতিতে বিসিএস ১৭তম ব্যাচকে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই ব্যাচের ৪৯ জনসহ বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডার, অন্য ক্যাডারসহ আগে পদোন্নতিবঞ্চিত অন্তত ৩০০ কর্মকর্তার চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড-এসএসবি। এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে এসএসবি পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এসব বৈঠকে কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের যাবতীয় নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির অভিযোগসহ সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির কাজ চলছে। প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

অপরদিকে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ ১৩৫টি। বর্তমানে কর্মরত ৩২০ জন। অর্থাৎ অনুমোদিত পদের দ্বিগুণেরও বেশি। এর সঙ্গে আরও ৮০ থেকে ৯০ জন যুক্ত হলে প্রশাসনের মাথা আরও ভারী হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রশাসনে  ভারসাম্য রক্ষার জন্যই বিভিন্ন স্তরে পদসংখ্যার বিন্যাস হয় পিরামিডের মতো। এই পিরামিড আকৃতি নষ্ট হলে প্রশাসনের ভারসাম্যও নষ্ট হয়। 

এ বিষয়ে লেখক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, পদ ছাড়া পদোন্নতি দিলে প্রশাসনে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, পদ ছাড়া পদোন্নতি হলে পদায়নে সমস্যা হবে। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করতে হবে। পদোন্নতির পর নতুন দায়িত্ব না পেলে কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় না, প্রশাসনের পিরামিডও অক্ষুণ্ন থাকে না। পদোন্নতি বিধিমালা-২০০২ অনুযায়ী, অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার এবং ৩০ শতাংশ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নিতে হবে। মূল্যায়ন নম্বরের অন্তত ৮৫ নম্বর থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। যুগ্ম সচিব পদে তিন বছরসহ ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা যুগ্ম সচিব পদে কমপক্ষে দুই বছরের চাকরিসহ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিসিএস ১৭তম ব্যাচ ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগ দেয়। ওই ব্যাচের ৬৭ জন কর্মকর্তার মধ্যে ৪৯ জন এরই মধ্যে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তাদের চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাদের সঙ্গে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের ১৮ কর্মকর্তাও আছেন। এই ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর যুগ্ম সচিব হন। ফলে যোগ্যতার ঘাটতি নেই তাদের। অন্য ক্যাডার থেকেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও পদোন্নতি পাবেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি না পাওয়া ১৫৯ জন কর্মকর্তার মধ্য থেকেও কেউ কেউ পদোন্নতি পেতে পারেন। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনের যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই প্রয়োজনীয় বৈঠক সম্পন্ন করেছে এসএসবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরের আগেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ফাইলে তিনি স্বাক্ষর করে গেছেন। আরেকটি সূত্র জানা গেছে, প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্য ক্যাডার থেকেও পদোন্নতি দেয়া হবে।