কৃষিঋণে খেলাপি কমেছে

রেদওয়ানুল হক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৯:৩১ এএম

বেড়েছে আদায়

এক বছরে খেলাপি ঋণ কমেছে ২৬০ কোটি টাকা 
আদায় বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ
পাঁচ মাসে বিতরণ ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা

দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ যখন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, তখন উল্টোচিত্র কৃষি খাতে। গরিব কৃষকরা নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি ফেরত দেয়ায় এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। এক বছরে সোয়া ৬ শতাংশ কমে খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে। এক বছর আগে সার্বিক খেলাপির হার ছিল ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সার্বিক খেলাপির হার কমেছে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ। একই সঙ্গে বেড়েছে আদায় ও বিতরণের পরিমাণও। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব চিত্র উঠে এসেছে।  

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর শেষে কৃষি খাতের খেলাপি কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা; যা গত বছরের একই সময়ে ছিল চার হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে খেলাপি ঋণ কমেছে ২৬০ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। বর্তমানে বিতরণ করা মোট কৃষিঋণের স্থিতি ৫৪ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। 

জানা গেছে, চলমান সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের কৃষি খাতে ঋণ বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেবে ব্যাংক, যা এর আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এর অংশ হিসেবে এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ বা ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। 

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। শস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন খাতে বেশ ঋণ নিয়েছেন কৃষকরা। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে পাঁচ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংক এ সময় ১০ হাজার ৬০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)।  এ সময় মোট তিন হাজার ১২২ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। দ্বিতীয় অবস্থানে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে এক হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৮৫৬ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৫৮২ কোটি এবং ঢাকা ব্যাংক ৫৬৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়ও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচ মাসে ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা আদায় হয়। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ পাঁচ মাসে আদায় বেড়েছে এক হাজার ৬১০ কোটি টাকা বা সাড়ে ১২ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষকরা কখনও ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন তারা। কিন্তু বৃহৎ শিল্প গ্রুপের মতো ঋণখেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই। তাই তাদের ঋণের আদায় পরিস্থিতি সব খাত থেকে ভালো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রের তথ্যমতে, কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরও কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এতদিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃ?ষি ঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষি কাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাক-সবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।