বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস

পার্বত্যাঞ্চলে রোগী আশঙ্কাজনক

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম
  • তিন পার্বত্য জেলায়৯০ ভাগ রোগী
  • ম্যালেরিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ১৩ জেলা
  • ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে চায় সরকার

চলমান ম্যালেরিয়া নির্মূল  প্রকল্প গতানুগতিক চলছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাস্তবসম্মতভাবে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের কাজ ত্বরান্বিত করতে হবে

—অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার কীটতত্ত্ববিদ


দেশের পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী। গত এক দশকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৫৬৭ জন। সবশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এক হাজার ১৫৮ জন। দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যার এমন বাস্তবতায় সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে চায়। বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটিতে এবারের স্লোগান ‘ন্যায়সঙ্গত বিশ্বের জন্য ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই আরও গতিশীল করতে হবে’। 

দেশে ম্যালেরিয়া রোগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া রোগী ছিল ২০১৪ সালে। ওই বছর দেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগী ছিল ৫৪ হাজার ৪৮০ জন আর মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ জনের। আর সবচেয়ে কম রোগী ছিল ২০২০ সালে। ওই বছর রোগীর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ১৩০ জন আর মৃত্যু হয়েছিল ৯ জন। ম্যালেরিয়ার উচ্চঝুঁকিতে থাকা দেশের ১৩টি জেলাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের নাম রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, শরণার্থী, অভিবাসী, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং আদিবাসীরাও ম্যালেরিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ তারা প্রায়ই রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা থেকে বাদ পড়ছেন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ফলে তাদের মধ্যে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবিক জরুরি পরিস্থিতি এই চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলছে এবং এই রোগের আশঙ্কা আরও বাড়ছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ২৫ কোটির বেশি মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর মৃত্যু হচ্ছে ছয় লাখের বেশি মানুষের। বেশ কয়েকটি দেশের নানা পদক্ষেপে ম্যালেরিয়ায় শিশু মৃত্যু চলতি বছর ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে— বলছে সংস্থাটি। 

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সতর্কতা এবং রোগ বহনকারী মশার বংশ বিস্তার ঠেকানোতে গুরুত্ব এবং নতুন টিকা প্রয়োগের অনুমতি দেয়ায় আরও প্রকোপ কমবে, আশা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূল ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশে চলমান ম্যালেরিয়া নির্মূল প্রকল্প গতানুগতিকভাবে চলছে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূল লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের তিনটি দুর্গম উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে ম্যালেরিয়ার সচেতনতা এবং চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে হবে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী জুম চাষি ও কাঠুরে। এই পেশার লোকজন দিনে বা রাতে পাহাড়ি জঙ্গলে কাজ করে বলে তারা আক্রান্তের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি। কীটনাশকযুক্ত মশারি দিয়ে এই পেশার লোকদের রক্ষা করা কঠিন। এরা যেন মশার কামড়ের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হতে না পারে সেই জন্য আধুনিক এবং নতুন কৌশল এবং তার বাস্তবায়ন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের মশা প্রতিরোধী ক্রিম, লোশন বা পোশাকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।  ম্যালেরিয়া সমস্যার সমাধান করতে পারে এমন কোনো একক হাতিয়ার বর্তমানে নেই। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই এ বিষয়ে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের আহ্বান জানাচ্ছে, যা ম্যালেরিয়া সমস্যা সমাধানে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। এ বছরের প্রতিপাদ্যে ম্যালেরিয়া বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।