দাবদাহে কার্যকারিতা হারাচ্ছে ওষুধ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
  • নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে না
  • মডেল ফার্মেসি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি

জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি —বলছেন বিশেষজ্ঞরা

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে নিকটস্থ মডেল ফার্মেসিতে ওষুধ ক্রয় করতে এসেছেন আমির হোসেন। অন্য ফার্মেসিতে না গিয়ে মডেল ফার্মেসি থেকে কেন ওষুধ ক্রয় করছেন— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওষুধ জীবনের জন্য একটি জরুরি পণ্য। বাজারে নকল ওষুধের পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণ মানুষ নকল ওষুধ চিনতে পারে না। তাছাড়া ওষুধ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। তা না হলে ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। আর দামের ক্ষেত্রে বাইরের ফার্মেসিগুলো ওষুধের দাম অনেক সময় বেশি রাখে। মডেল ফার্মেসিতে ওষুধ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হয়। ওষুধ ন্যায্যমূল্যে পাওয়া যায়। তাই চেষ্টা করি মডেল ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করার। কিন্তু মডেল ফার্মেসি পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেক সময় বাধ্য হয়ে সাধারণ ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করতে হয়। তখন ওষুধের গুণগত মান নিয়ে একটু শঙ্কিত থাকি। 

শাহবাগ এলাকার একটি মডেল ফার্মেসিতে ওষুধ ক্রয় করেন মিজানুর রহমান। সাধারণ ফার্মেসিতে একটি ওষুধ না পেয়ে ছুটে আসেন মডেল ফার্মেসিতে। তিনি বলেন, সাধারণ ফার্মেসিতে যেসব ওষুধ পাওয়া যায় না সেসব ওষুধ মডেল ফার্মেসিতে পাওয়া যায়। তাদের সংরক্ষণ ব্যবস্থাও ভালো। নায্যমূল্য ও ভেজালমুক্ত ওষুধ পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে ভেজালমুক্ত ও মানসম্মত ওষুধ ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে ‘দ্য বাংলাদেশ ফার্মেসি মডেল ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে মডেল ফার্মেসি ও মডেল মেডিসিন শপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি মডেল ফার্মেসি গড়ে তোলার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই। বিশেষ করে ওষুধের গুণগত মান ধরে রেখে সংরক্ষণ করতে মডেল ফার্মেসির যাত্রা শুরু হয়। দেশে চলমান তাপপ্রবাহে আবারও আলোচনায় এসেছে মডেল ফার্মেসির প্রয়োজনীয়তা। দেশে বিক্রীত ৯০ শতাংশ ওষুধের মোড়কে ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। এমন তাপমাত্রায় ওষুধের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। 

দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি দুই লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি। এর মধ্যে ৫২৮টি দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে বেশির ভাগ দোকানে সঠিক তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালায় বলা হয়েছে— ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওষুধ সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে হবে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা প্রয়োজন, এমন ওষুধ মাইনাস ৪ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করতে হবে। দেশে জাতীয় ওষুধ নীতিতেও ওষুধের দোকানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেটর থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দোকানের নিবন্ধন দেয়ার বিধান নেই। তবে বাস্তবে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ওষুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করলেও ওষুধের দোকানিরা তা করছেন না। 

এগুলো তদারকির দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। তবে জনবল কম থাকায় তারা সঠিকভাবে তদারকি করতে পারে না। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। মডেল ফার্মেসি নীতিমালা অনুসারে, প্রতিটি মডেল ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। ‘এ’ ও ‘বি’ দুই ক্যাটাগরির মডেল ফার্মেসির লাইসেন্স দেয়া হবে। ‘এ’ ক্যাটারির মডেল ফার্মেসির আয়তন ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ফার্মেসির আয়তন হবে ১০ ফুট বাই ৯ ফুট। মডেল ফার্মেসিগুলোতে ক্যাটাগরি (এ ও বি) অনুযায়ী ওষুধ রাখার অনুমতি দেয়া হবে। কোল্ড চেন অনুসরণ করে ওষুধ সংরক্ষণ করতে হবে। সাধ্য মোতাবেক কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা করতে পারে। এসব ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বিক্রয়ের পর ওষুধের হিসাব রাখতে হবে। 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে ওষুধ সংরক্ষণের নির্দিষ্ট তাপমাত্রা থেকে বেশি থাকলে ওষুধের গুণগত মান বা কার্যকারিতা হারাতে পারে। তবে আমাদের দেশে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ তাপমাত্রা থাকে না। তা ছাড়া ফার্মেসিগুলোতে এসি ও ফ্যান থাকে। সেখানে বাইরের তাপমাত্রা থেকে কম তাপমাত্রা অনুভূত হয়। ওষুধের ভেজাল রোধে ঔষধ প্রশাসন নিয়মিত মাঠপর্যায়ে তদারকি করছে।’ মডেল ফার্মেসির বিষয়ে তিনি বলেন, মডেল ফার্মেসি প্রকল্প চলমান রয়েছে। কেউ যদি মডেল ফার্মেসি নীতিমালা অনুসরণ করে মডেল ফার্মেসি করতে চায় ঔষধ প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়।’