সার কারখানার উৎপাদন চালু রাখতে বন্ধ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ১২:১৫ এএম

বিগত সরকার নরসিংদীতে বৃহৎ আকারের ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা নির্মাণ করেছে। পাশাপাশি সেখানেই রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাসভিত্তিক ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখন সার কারখানা চালু রাখতে হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। কারণ সার কারখানায় গ্যাস দেয়া হলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়। এখানে গ্যাসের সরবরাহ লাইনের সক্ষমতা কম। যে কারণে দুটি প্রতিষ্ঠানের কোনো একটি চালু রাখাই একমাত্র বিকল্প। বিপিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নরসিংদীর ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু গ্যাস সংকটে দিন পর দিন ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকছে। এমনকি সংস্কার করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সক্ষমতা বাড়ানো হলেও গ্যাসের অভাবে চালানো যাচ্ছে না কেন্দ্রটি। ফলে বিদ্যুৎ হাব হিসেবে পরিচিত ঘোড়াশালে বিরাজ করছে এক রকম অচলাবস্থা। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সাতটি ইউনিট রয়েছে। সেগুলো গ্যাসভিত্তিক এবং বিভিন্ন সক্ষমতার। দেশের অন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে এ কেন্দ্রটি ব্যয় সাশ্রয়ীও। বর্তমানে কেন্দ্রটির সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট সক্ষমতা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু ওই সক্ষমতাও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনে যাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া কেন্দ্রের বাকি সক্ষমতাকে উৎপাদন উপযোগী করতে চলছে মেরামত কাজ।

সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ করে। চলতি জুলাইয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একদিনও চলেনি। আর গত জুনে মাত্র চারদিন চলেছে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্রটি চালু ছিল মাত্র চারদিন। অথচ কেন্দ্রটি সংস্কার করে বিভিন্ন সময় এর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সেজন্য ব্যয় হয়েছে বিপুল অর্থও। কিন্তু কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বরং পিডিবিকে অন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে গিয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে গ্যাসভিত্তিক দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

সূত্র আরও জানায়, পূর্ণ সক্ষমতায় ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু রাখতে দৈনিক ১৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু মাসের দু’ একদিন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চললে সর্বোচ্চ ৭৭-৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পায়। অথচ ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানায় দৈনিক ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা। সার কারখানাটির উৎপাদনে প্রায় পূর্ণ চাহিদায় গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। আর সার কারখানায় গ্যাস দেয়ায় কমে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ। ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট সাতটি ইউনিট রয়েছে। 

সাতটি ইউনিটের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ১০৫ মেগাওয়াট। তার মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের সক্ষমতা মোট ১১০ মেগাওয়াট। তৃতীয় ইউনিটের সক্ষমতা ২৬০, চতুর্থ ইউনিটের ১৮০, পঞ্চম ইউনিটের ১৯০ ও ষষ্ঠ ইউনিটের সক্ষমতা ৩৬৫ মেগাওয়াট। ওসব ইউনিটের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার করে মোট সক্ষমতা বাড়িয়ে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে। কেন্দ্রের সাতটি ইউনিটের মধ্যে তিনটি ইউনিট সারা বছরই বন্ধ ছিল। দুটি ইউনিটের প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর যথাক্রমে ৪৯ ও ৫৯ শতাংশ (চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিট)। ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গড় উৎপাদন খরচ ইউনিটপ্রতি সাড়ে ৫ টাকার মতো। 

বর্তমানে দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সক্ষমতা সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট। তার মধ্যে গ্যাসের জোগান বিবেচনায় বিপিডিবি সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে পারে। বাকি সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বছরের বেশির ভাগ সময় অলস বসে থাকে।

এ প্রসঙ্গে বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) মো. জহরুল ইসলাম জানান, ঘোড়াশাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মোট সক্ষমতা ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্তমানে ৭৫০ মেগাওয়াট উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদনক্ষম এ অংশটিও চালানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে ঘোড়াশালে সার কারখানা রয়েছে। সেখানকার উৎপাদন চালু রাখতে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর গ্যাস পায় না। যে কারণে কেন্দ্রটি বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হয়।