শতভাগ ক্রয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন সম্ভব হয়েছে
—সৈয়দ জহির উদ্দিন জামাল, মহাব্যবস্থাপক (ক্রয়), ইডিসিএল
উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণকে গুরুত্ব দিয়েছি, বণ্টনেও অনুসরণ করা হচ্ছে নিদিষ্ট নীতিমালা
—অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইডিসিএল
রাষ্ট্রীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। দেশ স্বাধীনের আগে প্রতিষ্ঠিত অতি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ওষুধ উৎপাদনে বিশ্বস্ততা ও আস্থার পরিচয় দিয়ে আসছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যখন কেনাকাটা ও দরপত্র নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই; তখন ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ইডিসিএল। যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে —বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ইডিসিএলের সুদীর্ঘ পথ চলায় বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের দক্ষতা ও বিচক্ষণতায় এটি সম্ভব হয়েছে। ইডিসিএলের ইতিহাস থেকে জানা যায়, সরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণাগার হিসেবে ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু করে ইডিসিএল।
ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন ইউনিট নামকরণ করা হয় ১৯৭৯ সালে। কোম্পানি আইনের অধীনে ১৯৮৩ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) নামে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ক্রয় ও বণ্টন সংস্থা হিসেবে কাজ করত। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাপণ্য উৎপাদন শুরু করে ইডিসিএল। ইডিসিএলের ছয়টি প্লান্টের চারটিতে বিভিন্ন ঔষধ আর দুটিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সহায়ক বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয়; সরকারি চাহিদা মিটিয়ে যা এসএমসির মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রিও করছে সংস্থাটি। বর্তমানে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সরকারকে ১২৩টি ওষুধ সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির বাৎসরিক উৎপাদন ছাড়িয়ে গেছে হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশি চাহিদা মিটিয়ে ওষুধ রপ্তানি করছে বিদেশেও।
শুরু থেকে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ওষুধ সারা দেশের সরকারি হাসপাতাল, সিভিল সার্জন অফিস, সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ছাড়াও জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মতো অলাভজনক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুধুমাত্র ওষুধ উৎপাদন বা বণ্টন নয়। বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও দেশের একমাত্র সরকারি মালিকানাধীন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেড (ইডিসিএল) এগিয়ে চলেছে। ঝুঁকির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরলস কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটির সব পর্যায়ের কর্মীরা। এ সাফল্য ও অগ্রগতির নেপথ্যে রয়েছে ধারাবাহিক উৎপাদন। আর উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকারও বেশি দেশি ও বৈদেশিক ক্রয় কার্যক্রম করে থাকে ইডিসিএল। ক্রয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতার কারণেই ইডিসিএল এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে।
ইডিসিএলের ক্রয় বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছেন মহাব্যবস্থাপক (ক্রয়) সৈয়দ জহির উদ্দিন জামাল। তার সঙ্গে ইডিসিএলের সাফল্য ও ক্রয় স্বচ্ছতা নিয়ে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, উৎপাদনমুখী যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্রয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্রয়ের ওপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতা। ইডিসিএলে ক্রয় কার্যক্রমে রয়েছে নিজস্ব নীতিমালা। যেকোনো ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে আগ্রহীদের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বাজার পর্যবেক্ষণ করে দরপত্রের কাজের অনুমতি দেয়া হয়। বিশেষজ্ঞ কমিটির মধ্যে ওষুধ প্রশাসনের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি রয়েছেন। এখানে প্রতিটি ধাপে রয়েছে স্বচ্ছতা। নির্দিষ্ট নীতিমালার বাইরে গিয়ে কোনো কাজ প্রদানের সুযোগ নেই। দরপত্র আহ্বান করে যদি ইডিসিএলের নীতিমালা অনুযায়ী দরপত্র না আসে তাহলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইডিসিএলে ক্রয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ জবাবদিহিতা রয়েছে।
ইডিসিএলকে লাভজনক ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের কারিগর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুল। ইডিসিএলের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা নিয়ে তার সঙ্গেও কথা হয় আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ইডিসিএল মানুষের জীবন রক্ষাকারী উপাদান ওষুধ উৎপাদন ও বণ্টন করে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এটা খুব চ্যালেঞ্জিং হলেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা কাজ করছি। আমি যখন ২০১৪ সালে দায়িত্ব নিয়েছি তখন ইডিসিএলে বার্ষিক উৎপাদন ছিলো ৩৪০ কোটি টাকা। এখন যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। বার্ষিক উৎপাদন বাড়ার পেছনে আমি বাজার সমপ্রসারণকে গুরুত্ব দিয়েছি। সরকারি চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সাথে বেড়েছে আমাদের দায়িত্ব।
সরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, কারা কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে আমাদের ওষুধ। আমি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিন নিয়ে এসেছি। ওষুধের কাঁচামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা রেখেছি। এতে করে অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়েছে। চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার হিসাবে ইডিসিএল এখন শতভাগ অনিয়ম মুক্ত। এখানে ক্রয় বিভাগ থেকে শুরু করে উৎপাদন ও বণ্টন পর্যন্ত নিদিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। ইডিসিএলের ওষুধ সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করছে। প্রান্তিক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনেও ইডিসিএল অন্যতম অংশীদার। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জনকল্যাণমুখী কাজে নিয়োজিত ইডিসিএল।