মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলা

হিটু শেখের ফাঁসির আদেশ

মিরাজ আহমেদ প্রকাশিত: মে ১৮, ২০২৫, ১২:১০ এএম

মাগুরায় বহুল আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। 

গতকাল শনিবার সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে ধর্ষণ ও হত্যা মামালায় ফাঁসির আদেশ ও এক লাখ টাকা জরিমানা প্রদান করা হয়েছে। বাকি তিন আসামিকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। 

রায় ঘোষণার সময় আদালত চত্বরে ছিল জনতার ভিড়। রায় জানতে সকাল থেকেই ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মীরা। আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছিল সতর্ক অবস্থানে।

ঘটনার সূত্রপাত, গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়। সে সময় বাড়িতে কেউ না থাকায় অভিযুক্ত হিটু শেখ একাই ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় অবুঝ শিশুটি।

তদন্ত ও স্বীকারোক্তি : ঘটনার পর আছিয়ার পরিবার বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে হিটু শেখকে গ্রেপ্তার করে।

পরে ১৫ মার্চ আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হিটু শেখ ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করে। যদিও পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

রায় ও প্রতিক্রিয়া : আদালতে শুধুমাত্র প্রধান আসামি হিটু শেখের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে সন্দেহাতিত তেমন ভিত্তি না থাকায় তারা খালাস পান। রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে আছিয়ার পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মেয়েকে আমরা ফিরে পাব না, তবে দোষীর শাস্তি দেখে কিছুটা হলেও শান্তি পেয়েছি।’

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি মো. মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, তার বাদী পক্ষ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং উচ্চ আদালতে আপিলের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। এই মামলা নিয়ে মাগুরা জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। শিশু নির্যাতনের মতো নৃশংস ঘটনার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হওয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। 

তারা বলেন, ‘এই রায় ভবিষ্যতে শিশু নির্যাতনকারীদের জন্য একটি বার্তা হবে।’ মাগুরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দ্রুত বিচার কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়।