কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ভিড়

নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

ঈদের আগে গতকাল বুধবার শেষ কর্মদিবস। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে লম্বা ছুটি। ৭ জুন দেশবাসী উদযাপন করবে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ।

গতকাল সকাল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে ভোর থেকেই স্টেশনজুড়ে যাত্রীদের সরব উপস্থিতি ঈদযাত্রার সেই চিরচেনা দৃশ্যকে ফিরিয়ে আনে। কমলাপুর স্টেশনে প্রবেশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আলাদা গেট। সেখানে রেলওয়ের নির্ধারিত কর্মকর্তারা টিকিট যাচাই করে যাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন। টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে স্টেশনে। স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কেউ ট্রেনের অপেক্ষায়, কেউবা আগেভাগেই নির্ধারিত সিটে বসে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার কারণে বেশিরভাগই মানুষ ছাড়ছে ঢাকা। নিম্নআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরছেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত মোট ১৮টি ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। 

এর মধ্যে পাঁচটি কমিউটার ট্রেন ও ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেন। কমিউটার ট্রেনগুলো হলো— বলাকা কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার, মহুয়া, কর্ণফুলী ও তিতাস কমিউটার। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলো— ধুমকেতু এক্সপ্রেস, পর্যটক এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস, নীলসাগর, সোনারবাংলা, এগারো সিন্ধুর প্রভাতি, তিস্তা, মহানগর প্রভাতি, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস এবং একতা এক্সপ্রেস। যাত্রীরা বলছেন, ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দই আলাদা। অনেকেই দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরছেন। অনেককেই স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। 

শিল্প মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার কারণে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। স্টেশনে আসতে রাস্তা অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটা ফাঁকা মনে হয়েছে।

আরেক গ্রামমুখো যাত্রী মনির হোসেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। অন্য সময়ের চেয়ে এবারের ঈদ আনন্দটা বেশি হবে, কারণ এবার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়েই বাড়ি যাচ্ছি। টিকিট অনলাইনে বিক্রির কারণে স্টেশনের কাউন্টারগুলো অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিও   কমেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ভিড়

আগামী ৭ জুন উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। এই উৎসব প্রিয়জনদের সঙ্গে নিজ গ্রামে উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। 

গতকাল বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সরকারি ছুটি। এদিকে গতকাল বুধবার থেকেই ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে। পাশাপাশি বিনা টিকিটে যাতায়াতকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

তবে অনেক যাত্রী জানিয়েছেন, অনলাইনে টিকিট কাটার সুবিধার কারণে এবার ভোগান্তি কিছুটা কম।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে, প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বহু মানুষ রাজধানী ছাড়ছেন। প্রতিটি ট্রেনই যাত্রীতে ঠাসা। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে টিকিট যাচাইয়ে কঠোরতা বাড়ানো হয়েছে। কেউ টিকিটবিহীন ধরা পড়লেই জরিমানা করা হচ্ছে এবং নামিয়ে দিয়ে নতুন টিকিট কিনে উঠতে বাধ্য করা হচ্ছে। 

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঈদযাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে ১ জুন থেকে শুরু হলেও গত কয়েকদিন যাত্রী চাপ ছিল তুলনামূলক কম। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি শুরু হওয়ায় গতকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। ভ্রমণ সহজ করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১০টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ঈদের আগে ও পরে মোট ৯ দিন চলাচল করবে। 

এছাড়া ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে ঢাকাগামী ৯টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রাবিরতি বাতিল করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। 

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ট্রেন চলাচলে কোনো শিডিউল বিপর্যয় নেই। সকাল ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২১টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। গতকাল পুরো দিনে ৬৩টি ট্রেন ছাড়ে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেবল একটি স্পেশাল ট্রেন ৩০ মিনিট বিলম্বে ছেড়েছে, বাকি সব নির্ধারিত সময়েই চলাচল করছে। 

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী ইলিয়াস পাভেল বলেন, ঈদযাত্রা হওয়ার পরও সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় আমার কাছে স্বাভাবিকই লাগছে। একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান আরও কয়েকজন যাত্রী। এদিকে টিকিট ছাড়া ভ্রমণের দায়ে ১২ জন যাত্রীকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে ঈদযাত্রার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসেন রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. সুবক্তগীনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় স্টেশনে বসে থাকা কয়েকজন যাত্রীর টিকিট যাচাই করে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানা করা হয়। 

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফাতেমা তুজ-জোহরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ১২ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। যাত্রীদের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় এই অভিযান চলমান থাকবে। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দায়িত্ব পালন করছে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)।