Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

৬ মাসেই ৬৬ কোটি টাকার রাস্তায় ফাটল

আলী হোসেন, লক্ষ্মীপুর

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০, ০৬:৫৬ এএম


৬ মাসেই ৬৬ কোটি টাকার রাস্তায় ফাটল

লক্ষ্মীপুরে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কে ৬ মাস না যেতেই বিভিন্নস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। জেলার চন্দ্রগঞ্জ থেকে ইটের পোল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে সরকার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। টেন্ডারের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পায় রানা বিল্ডার্স ও আবদুল মোমেন যৌথভাবে।

কাজের মেয়াদ শেষ হয় গতবছরের মে মাসে। জোড়াতালি দিয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হলেও এরই মধ্যে সড়কের দু’পাশে অসংখ্য গর্ত ও একাধিকস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে ক্রুটিপূর্ণ সড়কের কারণে লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও ঠিকাদার দায়সারাভাবে কাজ শেষ করার কয়েকমাসের মধ্যেই রাস্তাটির এমন বেহালদশা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর অংশের ৪০ কিলোমিটার উন্নয়নে দুটি প্রকল্পে ১১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে চন্দ্রগঞ্জ এলাকা থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের ইটের পোল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের বরাদ্দ ৬৬ কোটি টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করে রানা বিল্ডার্স ও আবদুল মোমেন জয়েন্ট ভেঞ্চার।

অন্য আরেকটি প্রকল্পে ইটের পোল থেকে রায়পুর বর্ডার বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নে ৫৩ কোটি টাকার কাজ পায় রানা বিল্ডার্স, হাসান বিল্ডার্স ও সালেহ আহমদ বাবুল জয়েন্ট ভেঞ্চার। ওই প্রকল্পের কাজ শতভাগ ভালো না হলেও তুলনামূলকভাবে মানসম্মত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

প্রকল্প দুটিতে উল্লেখিত নিয়মানুযায়ী ৩ ফুট করে দু’পাশে ৬ ফুট মূল সড়ক প্রশ্বস্ত করার পর দু’পাশে আরো ৬ ফুট ফুটপাথ নির্মাণ করার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে যথাযথ মান রক্ষা করে সড়কের উপর দুই ধাপে ১২০ মিলিমিটার পিচঢালাই (লেয়ার) দেয়ার কথা। অথচ ফুটপাত নির্মাণেও করা হয়েছে বড় ধরণের শুভঙ্করের ফাঁকি। আগের রাস্তা থেকে ভেকো দিয়ে উল্টানো পুরনো পিচঢালাই ফেলে ফুটপাত নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

অপরদিকে চন্দ্রগঞ্জ থেকে ইটের পোল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায় রাস্তার বিভিন্নস্থানে পিচঢালাই ফুলে ফেটে গেছে এবং কোথাও কোথাও রাস্তা দেবে গেছে। মাঝে মাঝে সড়ক বিভাগের লোকজন এসে ফুলা অংশ তুলে ফেলছেন এবং পুনরায় পিচঢালাই দিয়ে মেরামত করছেন। তাও মানসম্মতভাবে করা হচ্ছে না। পুনরায় এসব কাজ করা হলেও ওইসব স্থানে সমতলভাবে ফিনিশিং না দেওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে একেরপর এক সড়ক দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা মৎস অফিসের সামনে, মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া, হাজিরপাড়ার বটতলী, চন্দ্রগঞ্জে কলেজ গেইটসহ বিভিন্নস্থানে সড়কে ফাটল, দেবে যাওয়া ও রাস্তার পাশে গর্ত দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ চৌমুহনী-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট বড় যানবাহন চলাচল করে মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত এ সড়কে। ফলে সড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। যার কারণে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে। পরে ২০১৭ সালের শেষ দিকে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুটে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রাস্তার দু’পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত মুঠো ফোনে সড়ক নির্মাণে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যেসব স্থানে ফাটল ও ফুলা দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে ঠিকাদারকে দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি।

পুনরায় মেরামতকৃত স্থানে রাস্তা উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা আরো বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমাদের নিজস্ব টেকনিশিয়ান টিম এনে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে পুরো রাস্তা যাতে সমান থাকে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমারসংবাদ/কেএস