Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

এসিডদগ্ধ তুলির এ পথ চলা যেন শেষ হচ্ছে না

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

মার্চ ৭, ২০২০, ০৭:৩৭ এএম


এসিডদগ্ধ তুলির এ পথ চলা যেন শেষ হচ্ছে না

এসিডদগ্ধ নারীরা সমাজের বোঝা নয়। তারাও আট-দশ জন স্বাভাবিক নারীর মতো বাঁচতে চায়। সমাজ আজ কোথায়, তারা পায় না কেন যথাযথ মর্যাদা। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পাচ্ছে না যোগ্যস্থান এসিড দগ্ধ জলি আক্তার তুলির মতো সমাজের অনেক তুলিরা। তাদের ও সাধ জাগে অন্যান্য মেয়েদের মতো ঘর বাঁধতে। এসিডদগ্ধ অভিশাপ জীবনে পাচ্ছে না তারা মাথা গোজার একটু ঠাঁই। শত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে বিএ পাশ করে একটু মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদে একটি চাকরির জন্য তুলি ধর্ণা ধরে ঘুরছে বিভিন্ন মহলে।

কান্না বিজড়িত কণ্ঠে সেদিনের ঘটনা তুলে ধরে এসিড দগ্ধ জলি আক্তার তুলি বলেন, 'আমি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোট থেকে হিলি হাসপাতাল মোড় এলাকায় নানা বাড়িতে থেকে লেখা-পড়া করতাম। নানা মৃত ইদ্রিস আলী ও মামা সাইদুল ইসলাম। এইসএসসি পাশের পরে ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আমার জীবনে নেমে আসে ঝড়।

নানা বাড়িতে শুয়ে থাকা অবস্থায় সেদিন এক বখাটে ঘরের ছাপরায় উঠে টিনের ফাঁক দিয়ে আমার শরীরে এসিড ছুড়ে পালিয়ে যায়। এসিডে পুড়ে যায় আমার গলা থেকে কোমর পর্যন্ত। বিদেশি একটি সংস্থার খরচে চিকিৎসা শুরু হয় আমার। এসিড নিক্ষেপকারী আটক হয়। এখনও মামলা চলছে। আসামি জামিনে বেরিয়ে ঘুরছে। দীর্ঘদিন এসিডে পোড়া শরীরের জ্বালা নিয়ে অতিবাহিত করেছি হাসপাতালে। গলা থেকে কোমর পর্যন্ত ঝলসে গেছে।

অনেক যন্ত্রণা আর ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে লেখাপড়া আমি বাদ দেইনি। ১৫ সালে এইসএসসি ও ১৮ সালে বিএ পাশ করেছি।

আক্ষেপ নিয়ে তুলি বলেন, আমি এসিড দগ্ধ নারী তাই সমাজ সংসারে কোন স্থান বা মূল্যায়ন পাচ্ছি না। বিয়ের বয়স হয়েছে, বাবা-মার মাথায় বোঝা হয়ে গেছি। তারা বিয়ে দিতে চায়। একের পর এক বিয়ের প্রস্তাব আসে কিন্তু বিয়ে হয় না। আমি আর কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এই এসিডদগ্ধ শরীর নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। তাই ১৮ সালে বিএ পাশ করে একটি চাকরির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এ পথ চলা যেন শেষ হচ্ছে না আমার।'

তুলির মামা সাইদুল ইসলাম বলেন, 'তুলি আমার আদরের ভাগ্নি। ছোট থেকে সে আমাদের বাসায় থাকে। একজন বখাটে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে তার উপর এসিড নিক্ষেপ করে। দীর্ঘ তিন মাস তাকে ঢাকায় বিদেশি (এএফএফ) একটি সংস্থার সাহায্যে এসিড সার্ভায় হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়।'

হাকিমপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রিন্সিপাল কামরুন্নাহার রোজি বলেন, 'তুলিকে আমি ছোট থেকে চিনি, সে আমার বাড়ির পাশে তার নানার বাড়িতে থাকে। সে জয়পুরহাট জেলার সদর থানার চিরলা গ্রামের জহির উদ্দিনের ছোট মেয়ে। খুব নম্র-ভদ্র ও অমায়িক প্রকৃতির মেয়ে সে। তার কষ্টগুলো আমাকে অসহনীয় করে তুলে। অনেক কষ্ট করে সমাজের সাথে লড়াই করে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছে তুলি। আমাদের সবার উচিত এই অবহেলিত মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো। আমি আশা করছি সমাজের বৃত্তবান লোকেরা ও সরকার অসহায় এসিডদগ্ধ তুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে।'

আমারসংবাদ/কেএস