Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

করোনা গুজবে দ্বিধায় আলেমরা!

এপ্রিল ১, ২০২০, ০৭:৪৫ পিএম


করোনা গুজবে দ্বিধায় আলেমরা!

করোনা এমন এক ভাইরাস যা পুরো পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। স্পেন, ইতালি, আমেরিকার মতো দেশে প্রতিদিন শত শত মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। করোনা আক্রান্তের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে কিছু মানুষ মারাও যাচ্ছে।

তার পরও কিছু আলেম এ নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। তারা মনে করেন, সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। করোনা কোনো সংক্রামক রোগ নয়। তবে অনেক আলেম আবার সংক্রামকের পক্ষে বলেছেন।

তারা মনে করেন, ইসলাম ধর্মের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যেনো রুগের সংক্রমণ না ঘটায়।’ তার মানে সংক্রমণের ব্যাপারে তিনি নিজেও বলেছেন।

এদিকে গুজব ছড়ানোর কারণে ইমাম-শিক্ষকসহ বরিশালে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট আলেমদের মতামত গ্রহণ করেছেন আমার সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার —এনায়েত উল্লাহ

করোনা সংক্রামক ব্যাধি কি-না, সে ব্যাখ্যা ডাক্তাররা দেবেন: মাওলানা মাহফুজুল হক (প্রিন্সিপাল জামিয়া রাহমানিয়া মোহাম্মদপুর ঢাকা)

জামেয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক বলেছেন, কোনো ভাইরাসেরই নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহ তায়ালা ভাইরাসকে যেটুকু ক্ষমতা দেন, সে সেটুকুই সংক্রমণ করতে পারে।

অনেকে বলছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলেই সেও আক্রান্ত হবে। সেটাও ঠিক নয়। কে সংক্রমিত হবে বা কে হবে না সেটা আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। করোনা ভাইরাস সংক্রামক ব্যাধি কি-না, সে ব্যাখ্যা ডাক্তাররা দেবেন।

তবে ইসলামের বিশ্বাস বা আকিদা হচ্ছে— ভাইরাসের কোনো ক্ষমতা নেই। তবে সতর্কতার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূলের নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই আলেম। তিনি মনে করেন, যেহেতু এটি একটি বড় সমস্যা। এ কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।

সুতরাং আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যাতে আমরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হই।’ সাথে সাথে ডাক্তারদের দেয়া পরামর্শগুলো পালন করতে হবে।

যদি সেটা ইসলাম বিরোধী না হয়। পাশাপাশি দুর্বল ও অসহায়দের পাশে থেকে এই সঙ্কট মোকাবেলার জন্য ভিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান।

যারা বলে করোনা ঈমানদারদের আক্রমণ করবে না, এটা ভুল: মুফতি ওযায়ের আমিন (প্রিন্সিপাল জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলাম)

জামেয়া রাহমানিয়া দারুল ইসলামের প্রিন্সিপাল মুফতি ওযায়ের আমিন বলেছেন, করোনা বা যেকোনো ধরনের ভাইরাসই হোক না কেন? তার নিজস্ব কোনো পাওয়ার নেই। আল্লাহ তাকে যেটুকু পাওয়ার দেন সেটুকুতেই মানুষ আক্রান্ত হয়।’

মুফতি আমির হামজা বলেছেন, ‘আমি কসম দিচ্ছি আপনার কাছে করোনা আসবে না, যদি আসে তাহলে আমার কাছ থেকে বুঝে নেবেন।’

এমন কথা বলা ঠিক কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কথা বলা ঠিক নয়। আগুনে যেমন ঈমানদার হাত দিলে পুড়বে, ঈমানদার ছাড়াও কেউ হাত দিলেও পুড়বে।

তেমনি এ ভাইরাস যখন কোনো ঈমান ছাড়া লোককে আক্রমণ করবে, তখন সেটা হবে আজাব। আর যখন কোনো ঈমানদার লোককে তা আক্রমণ করবে তখন সেটা আল্লাহর পরীক্ষা।

সে বিপদে বা কষ্টে আল্লাহকে কতটুকু স্বরণ করে বা বিপদে তার ঈমান কোন পর্যায়ে যায় সেটা পরীক্ষা। কোনো ঈমানদার যদি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তাহলে সে শহীদী মর্যাদা পাবে।

সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে ইসলামের ব্যাখ্যা কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘তোমরা কুষ্ট রোগী থেকে এমনভাবে পলায়ন করো, যেমনিভাবে সিংহ থেকে তোমরা পালায়ন করো।’

আল্লাহর রাসূল আরও বলেছেন, ‘যখন তোমাদের এলাকায় মহামারি দেখা দেবে, তখন তুমি অন্য এলাকায় যাবে না।’

এখান থেকে বোঝা যায়, সংক্রমণের কারণেই যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা বলে যে, সংক্রকমণ বলতে কিছু নেই। সেটা সঠিক না। এটা বলতে হবে যে, ভাইরাসের কোনো ক্ষমতা নেই।

যার মধ্যে রোগের জীবাণু রয়েছে, সে যেনো তা না ছড়ায়: মাওলানা মামুনুল হক (প্রিন্সিপাল, জামিয়াতুত তারবিয়াহ আল-ইসলামিয়া)

জামিয়াতুত তারবিয়াহ আল-ইসলামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মামুনুল হক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ে নেতিবাচক অর্থে অনেকেই বক্তব্য দিচ্ছেন।

বুখারি শরিফের হাদিস ‘লা আদওয়া ওলা তিয়ারাতা ওলা হামাতা ওলা সাফারা’। এর অনুবাদ করা হয়ে থাকে— ছোঁয়াচে বলতে কিছু নেই। এই অর্থটি একটি সম্ভাব্য অর্থ। তবে অগ্রগণ্য অর্থ এটি নয়।

তিনি কুরআনের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কুরআনে এসেছে— ‘ফালা রাফাসা ওলা ফুসুকা ওলা জিদালা ফিল হাজ্জ্ব’। যদিও শব্দগুলো এভাবে ব্যবহার করা হয়েছে ঝগড়া নেই, অন্যায় কাজ নেই হজের মধ্যে।

কিন্তু এর প্রকৃতপক্ষে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে— ‘ফালা এরফুস, ওলা এফসুক, ওলা ইজাদিল’। অর্থাৎ কেউ যেনো অন্যায় না না করে, ঝগড়া না করে হজের মধ্যে। সেই কুরআনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ‘লা আদওয়া’ ব্যাখ্যা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, হানাফি মাজহাবের একজন উল্লেখযোগ্য আলেম শায়েখ আব্দুল ফাত্তাহ আবু বুদ্দাহ (রহ.) আল মাসনু ফি মওজু কিতাবের মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেন, একই হাদিসের শেষ অংশে রয়েছে— ‘ফিররা মিনাল মাজজুমি ফিরারাকা মিনাল আসাদ’।

এর অর্থ হচ্ছে— তোমরা কুষ্ট রোগী থেকে এমনভাবে পলায়ন করো যেমনিভাবে সিংহ থেকে তোমরা পালায়ন করো। এটি ভিন্ন কোনো হাদিস নয়। আল্লাহর রাসূল বলেছেন, যার মধ্যে রোগের জীবাণু রয়েছে সে যেনো তা না ছড়ায়।

সুতরাং ‘লা আদওয়া’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে ‘লা ই‘দি বা‘জুকুম বা‘জ’ যার অর্থ— হচ্ছে কেউ যেন রুগের সংক্রমণ না ঘটায়।

অর্থাৎ নিজের মধ্যে যদি রোগের ভাইরাস থাকার আশঙ্কা থেকে থাকে, তাহলে সে যেনো অন্যের মধ্যে তার সংক্রমণ ঘটার কারণ না ঘটায়।

এদিকে করোনা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে মাইকিং ও ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মসজিদের দুই ইমাম ও দুই শিক্ষকসহ ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন— গৌরনদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম, বার্থী কলেজের শিক্ষক সালমা আক্তার, বানিয়াছড়ি মসজিদের ইমাম আব্দুল কাদের, উত্তর বিজয়পুর মসজিদের ইমাম হাসান আল-মামুন, অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট সিরাজুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা দিপালী দেবনাথ।

তাদের মধ্যে দুই ইমাম এবং অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্টকে মসদিজের মাইকে এবং অপর তিনজনকে ফেসবুকে করোনা সম্পর্কে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আটক করা হয়।

গৗরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার জানান, আটকরা মানুষের মধ্যে করোনা সম্পর্কে নেতিবাচক খবর ছড়াচ্ছিল। এ অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়াও আগে মুফতি আমির হামজা ও মুফতি কাজী মো. ইব্রাহিম এ বিষয়ে গুজব ছড়িয়েছেন।

মুফতি আমির হামজা এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি কসম দিচ্ছি, আপনার কাছে করোনা আসবে না; যদি আসে তাহলে আমার কাছ থেকে বুঝে নেবেন।’ সংক্রামক ব্যাধি বলতে কোনো কিছু নেই। এমন মন্তব্য করেছেন এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী।

আমারসংবাদ/এসটিএমএ