Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে চা শ্রমিকদের ভুখা লংমার্চ

এইচ ডি রুবেল, কুলাউড়া

এপ্রিল ২০, ২০২০, ০৬:৪০ এএম


মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে চা শ্রমিকদের ভুখা লংমার্চ

মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে কালিটি চা বাগানের শ্রমিকদের ভুখা লংমার্চ ১২ সপ্তাহ যাবত মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার প্রতিবাদে রোববার ১৯ এপ্রিল কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের কালিটি চা-বাগান থেকে উপজেলা সদর অভিমুখে লংমার্চ করেন চা শ্রমিকরা। 'ভুখা লংমার্চে চা শ্রমিকরা ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।

এতে সংহতি প্রকাশ করেন গাজীপুর ও রাঙ্গিছড়া চা বাগানের শ্রমিকগণ ও নেতৃবৃন্দ। এই লংমার্চে শ্রমিকগণ হাতে প্ল্যাকার্ড ও খালি থালা-বাসন নিয়ে কালিটি চা বাগান থেকে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ দুই ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুলাউড়া পৌঁছেন।

ভুখা লংমার্চে অংশ নেয়া শ্রমিকরা জানান, কালিটি বাগানটি 'জোবেদা টি কোম্পানি লিমিটেডের' নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেয়া বাগান। এই বাগানে মোট এক হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৫৩৭ জন স্থায়ী শ্রমিক আছেন। প্রত্যেক শ্রমিক দৈনিক ১০২ টাকা করে মজুরি পান। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তা পরিশোধের কথা। কিন্তু ১২ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকেরা মজুরি পাচ্ছেন না। বাগানের শ্রমিক সরদার ও স্টাফদেরও ১১ মাসের বেতন আটকা পড়ে আছে।

বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার জানান, শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। এরপর ১২ সপ্তাহ থেকে কেউ সেই মজুরি পাচ্ছেন না। কাজ করেও মজুরি মিলছে না। ঘরে চাল-ডাল নেই। উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি বলে সময়ক্ষেপণ করছে।

চা শ্রমিক সন্তান মোহন রবিদাশ জানান, ১১ দফা দাবিগুলোর ভেতর ১২ সপ্তাহের মজুরি (চা শ্রমিকদের) ও ৩ মাসের বেতন (শ্রমিক সর্দার ও স্টাফদের) না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। এখানে খাবার পানির একমাত্র উৎস কুয়া (কূপ) কিন্তু খরার কারণে কুয়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এই বাগানে চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল যে হাসপাতালটি সেখানেও ৩ মাস ধরে চিকিৎসাসেবা বন্ধ।

এই বাগানের চা শ্রমিকদের ২৬ মাসের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছে বাগান মালিক। এই বাগানে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ তো দূরের কথা সামান্য একটা মাস্কও কেউ দেয়নি তাই ৯৯ ভাগ মানুষ মাস্কহীভাবে চা বাগানে কাজ করছে। সম্প্রতি (মাত্র ক'দিন আগে) ঢাকা থেকে যে কয়েকজন যুবক (তারা এই বাগানেরই ছেলে, ঢাকায় কাজ করতো) এই বাগানে আসলে তাদের ব্যাপারে প্রশাসন কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।

মানুষ পেটের দায়ে আজ আন্দোলন করছে, ভূখা মিছিল করছে। যেখানে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে না কিন্তু তারপরেও তাদের প্রতি কেউ-ই দৃষ্টিপাত করছে না। করোনা ঝুঁকির কারণে তাদের সব ধরণের পার্শ্বআয় (পানের পুঞ্জিতে কাজ করা, চা বাগানের বাইরে কাজ করতে যাওয়া) বন্ধ, তাই চরম হাহাকার নেমে এসেছে এখানে। দীর্ঘ ২ বছর যাবত ঘরবাড়ি (বেশিরভাগ ছনের ঘর) মেরামত না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গা ঘরে বাস করছেন এই বাগানের মানুষ।

বাগানে চিকিৎসক নেই। শ্রমিকেরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করালে বাগান কর্তৃপক্ষ বিলের টাকা দেয় না। বাগানে বিরাজমান এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার চেয়ে ৫ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

চা শ্রমিক নেতা বিশ্বজিত দাস বলেন বলেন, একদিকে ১২ সপ্তাহ ধরে মজুরি বঞ্চিত অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঝুঁকিতে আছেন এই বাগানের শ্রমিকরা। অবিলম্বে এই বাগানের সংকট নিরসন করা হলে ২৪ ঘন্টা পর তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সম্ভু চৌধুরী দাশ জানান, বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা। অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে সাত শতাংশ করে ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা কেটে রাখা হয়। এর সঙ্গে মালিক পক্ষ আরও সাত শতাংশ যোগ করে মোট ১৫ শতাংশ টাকা শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেয়া কথা। বাগান কর্তৃপক্ষ তাও করছে না।

কালিটি বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দাশ জানান, কোম্পানির কাছ থেকে যথাসময়ে টাকা না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তিনিসহ বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন বন্ধ আছে বলেও জানান তিনি।

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম শফি আহমেদ সলমান জানান, মালিকের সাথে কথা বলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান করবো। নয়তো মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমারসংবাদ/এমআর