মিরাজ আহম্মেদ, মাগুরা
অক্টোবর ১৪, ২০২০, ০৩:৫২ পিএম
একাধিক আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে চার নারীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মাগুরা সদর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত রমেশ চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে রাজু বিশ্বারে (৩৮) বিরুদ্ধে। সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক।
এ ঘটনায় ধর্ষক রাজু বিশ্বাসের স্ত্রী নিপা রানি বিশ্বাস ৬৪ উত্তর রমজানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরেন। বিয়ের তিন মাস পর থেকেই স্বামীকে অনেকটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়তে দেখি। হঠাৎ তার অস্বাভাবিক আচরণ পরিবারের সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বিষয়টি পরিবারের কাছে স্বীকার করে। এ ব্যাপারে বাধা দিলে স্ত্রীর গর্ভের সন্তানকেও মেরে ফেলার হুমকি দিতো রাজু বিশ্বাস।
সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী বলেন, আপন মেঝ ভাইয়ের বউয়ের সাথে দীর্ঘ ১৩ বছর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ সে। আমার স্বামী আমার কাছে ছুটি কাঁটায় না। এমনকি নাইট পাশে ছুটিও কাটায় পরকীয়া ভাইয়ের বৌয়ের কাছে এবং পাশের বাড়ির অন্য আরেকটি মেয়ের কাছে। রাজু আপন কাকাতো বোন,পাশের বাড়ির কাকি, আশেপাশের কোনো মেয়েকে বাদ দেয়নি শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে। ওদের সাথে বিভিন্ন সময়ে সুকৌশলে শারীরিক সম্পর্কে করে। মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে ভিড়িও করে। তাদের ফন্দি করে ভিড়িও করে আটকে নেয় নিজের জালে। একদিন স্বামীর মেমোরি কার্ড খুলে দেখি নানান অপকর্মের ঘটনা।
পরবর্তীতে মেমোরি কার্ড অন্য একটি মোবাইলে প্রবেশ করিয়ে এ সকল মেয়েদের নগ্ন ছবি দেখতে পাই এবং আমি তাদের চিনতে পারি। নিজেকে লজ্জায় ধিক্কার দিয়ে চলে আসি শ্বশুরবাড়ি মাগুরা থেকে। আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরির করার সুবাদে নিজ সন্তানের দ্বায়িত্বভার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকি। এত বছর কোনো প্রকার আইনি সহায়তা পাইনি।
তিনি সাংবাদকদের বলেন, ‘আমার কাছে তার একাধিক নগ্ন ছবি এবং ৫৬টি রেকর্ড আছে সব সেক্সুয়াল, আপনারা চাইলে শুনতে পারেন।
সম্প্রতি তার আচার-আচরণ অনেক খারাপ হওয়ায় আমি আপনাদেরকে জানাতে বাধ্য হই। সেনাবাহিনীর কিছু ছেলে নিয়ে তাদের সাথে মিথ্যা সম্পর্কের কথা বলে সে ঘর ভেঙে দেয়ার পরিকল্পনা করে। আবার কিছু সেনাবাহিনীর ছেলে আছে তাকে পরকীয়ায় প্রেম করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সহযোগিতা করে। ভালো ভদ্র পরিবারের মেয়েদের ছবি নিয়ে এডিট করে ন্যাকেট করে নেয়। আমার এবং প্রিয়ম বিশ্বাস (১২) বাচ্চার সাথে সময় দেয় না, এমনকি বাসায় এলে সবসময় খারাপ আচরণ করে। গায়ে হাত তুলে আর বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। আর বলে, চাকরি করবি না। সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আমাকেসহ অনেককে মেরে ফেলবে সেই হুমকিও দেয়। আমি আতঙ্কিত, তাই আমার বাবার বাড়ি মাদারীপুর একটা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘদিন। তার পরিবারের সদস্যদের কাছে বলেও কোনো সমাধান পাইনি। এ সকল অভিযোগ গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে শিকার করেন রাজু।
তিনি বলেন, আমার ভুল হয়েছে! এই মেমোরি কার্ড আমার স্ত্রীর কাছে যাওয়ার পর থেকেই সমস্যায় আছি আমিসহ আমার পরিবার।
এ দিকে ধর্ষক রাজু বিশ্বাসের মা বলেন, সব বিষয় আমরা শুনেছি, আমি বৃদ্ধ মানুষÑ আমার কথা যদি কেউ না শুনে আমি কি করবো বলেন! এ ঘটনা বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে ছড়িয়ে পড়ায় ১২ অক্টোবর ভুক্তভোগী এই নারীর ভাই অনিক বাদি হয়ে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করতে গেলে এ সময় তার বাবা স্ট্রোক করেন, সঙ্গে সঙ্গে মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমার বাবাকে মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হয়েছে, তিনি খুব অসুস্থ। এখন আমি আমার বাবাকে নিয়ে চিকিৎসা করাবো নাকি বোনদের জন্য মামলা করাবো আপনারা বলেন। আমি কি করবো! তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আমি ও আমাদের পরিবার আতঙ্কিত।
সম্প্রতি বোনদের বিয়ে হলেও এলাকায় নানান সমালোচনার ঝড় বয়ে চলছে, যা লজ্জাজনক। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাটি সাংবাদিকে জানানো হলে অভিযুক্ত রাজু মাগুরা প্রেস ক্লাবের এক সাংবাদিকের নাম ভাঙিয়ে নিজের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বলে অভিযোগ তুলেন, এমনকি হাতে রামদা নিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী স্ত্রী ও স্থানীয় জনগণ আইনের আওতায় অপরাধ নির্মূলে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
আমারসংবাদ/এমআর