Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

পর্যটন শহরে কোনো ভিক্ষুক থাকবে না: ডিসি কামাল হেসেন

সফিউল আলম, কক্সবাজার

নভেম্বর ৩০, ২০২০, ১১:৫৫ এএম


পর্যটন শহরে কোনো ভিক্ষুক থাকবে না: ডিসি কামাল হেসেন

উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ গঠনে সরকার দেশকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। আত্মমর্যদাশীল জাতী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ভিক্ষাবৃত্তি নিরসন করতে হবে। পর্যটন শহরে কোনো ভিক্ষুক দেখতে চাই না। 

তাদেরকে যে কোনো উপায়ে স্বাবলম্বি করা হবে। আমরা চাই পিছনের মানুষদের সামনে নিয়ে আসতে। এ লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কক্সবাজারে মাঠপর্যায়ে ভিক্ষুকদের তালিকা তৈরী তাদের জীবিকায়ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ৩৪ জন ভিক্ষুককে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ জীবিকায়ন উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে 'জেলাকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচীর' উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের মাঝে জীবিকায়ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজার শহরের সার্কিট হাউস রোডস্থ অরুণোদয় স্কুলে সদর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুইটি ইউনিয়নের তালিকাভূক্ত ভিক্ষুকদের উপকরণ হস্তান্তরের মাধ্যমে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হয়েছে।

এর মধ্যে ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ১৭ জন এবং ঝিলংজা ইউনিয়নের ১৭জন ভিক্ষুককে এসব জীবিকায়ন কর্মসূচী বিতরণ করা হয়।

এদের মধ্যে ২০ জনকে হাঁস-মুরগীসহ ঘর ও খাবার, ৫ জনকে রিক্সা, ২ জনকে চা-দোকান, ১ জনকে পান দোকান, ১ জনকে সেলাই মেশিন এবং ১ জনকে মাছ ধরার জাল বানানোর উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া উপকারভোগী প্রত্যেক পরিবারকে ২ মাসের জন্য খাদ্য সামগ্রীও বিতরণ করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ গঠনে সরকার দেশকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। এ লক্ষ্যে প্রশাসন কক্সবাজারে মাঠপর্যায়ে ভিক্ষুকদের তালিকা তৈরী তাদের জীবিকায়ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের মাঝে জীবিকায়ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।

"এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরে জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে একদিনের বেতন বাবদ ৪৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ফান্ড তৈরী করা হয়। পরে কর্মসূচীর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। তিনি উপহার স্বরূপ ফান্ডে ৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন।"

ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচী একটি চলামান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, "প্রথম দফায় সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৩৪জন ভিক্ষুককে জীবিকায়ন উপকরণ বিতরণে ৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। 

ফান্ডে জমা থাকা অন্য টাকা দিয়ে সবাইকে জীবিকায়ন করা সম্ভব নয়। তাই জানুয়ারী মাসে জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আবারো একদিনের বেতন সংগ্রহ করে ফান্ডে জমা দেয়া হবে। এছাড়া জেলার বিত্তবান ও মানবিক মানুষদের কাছ থেকেও সহায়তা নেয়া হবে।"

কামাল হোসেন বলেন, "কর্মসূচীর আওতায় জেলায় মোট ১ হাজার ৫০১ জন ভিক্ষুকের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলার ৮ উপজেলার সবক'টি ইউনিয়নের তালিকাভূক্ত ভিক্ষুকদের জীবিকায়ন উপকরণ বিতরণের মধ্য দিয়ে ভিক্ষুকমুক্তকরণ করা হবে।"

জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ জীবিকায়নের উপকরণ পাওয়া ভিক্ষুকরা এখন থেকে আর ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেবেন। তারা এসব উপকরণের সদব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করবেন। তাছাড়া কর্মসূচীর আওতায় উপকারভোগীরা প্রাপ্ত উপকরণগুলোর সদব্যবহার করছে কিনা তা তদারকির জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার ইউএনও সুরাইয়া আক্তার সুইটির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাসুদুর রহমান মোল্লা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম প্রমুখ।

সদরের ইউএনও সুরাইয়া আক্তার সুইটি বলেন, উপকারভোগীদের জীবিকায়ন উপকরণ বিতরণে মাঠপর্যায়ে নানা জরিপ চালানো হয়েছে। তাদের স্ব স্ব চাহিদা অনুযায়ী এসব উপকরণ বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, "উপকরণ বিতরণে উপকারভোগীদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয়তা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী রিক্সা, দোকান, হাঁস-মুরগী, সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। সদরের কোথাও যেন কোন ভিক্ষুক না থাকে প্রশাসন সেই অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।" 

আমারসংবাদ/এআই