Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

আ.লীগে অশান্তি, বিএনপিতে তুষের আগুন

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

ডিসেম্বর ১, ২০২০, ১০:৪৫ এএম


 আ.লীগে অশান্তি, বিএনপিতে তুষের আগুন

হেমন্তের শীতল বাতাসে বইছে নির্বাচনী উত্তাপ। বিকেল থেকে রাত অবধি চায়ের দোকানে খেলার মাঠে, সর্বত্র নির্বাচন নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড়। 

তফসিল ঘোষণা না হলেও ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর রং-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার শোভা পাচ্ছে সর্বত্র। 

অনেকেই আবার উঠোন বৈঠক ও শোডাউন করে তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের মাঝে। তবে দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেলে এর মাত্রা আরো কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

কিন্তু তারা এখনো কেউ দলীয়ভাবে মনোনীত না হলেও নিজেরা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, এমনটাই জানিয়ে দিচ্ছেন ভোটারদের। তবে দল থেকে কাকে সমর্থন দেয়া হবে, তা নিয়ে তৈরী হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও সংশয়। 

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। 

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের হয়রানির ভয়ে বিএনপির প্রার্থীদের কাউকেই মাঠে দেখা দেখা যাচ্ছে না। তবে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলীমুজ্জামান সেলু ও পৌর বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ বিএনপি থেকে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 

দলীয়ভাবে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ নিয়ে চলছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা। তবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী পর্যন্ত দৌঁড়ঝাপ অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের কদর করতে শুরু করেছেন। 

পৌরসভায় ৭.৫৭৪ বর্গকিলোমিটারে ভোটার রয়েছে ৮ হাজার ৫৩৪ জন (চলমান প্রক্রিয়ায়)। গত নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন তৎকালীন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রায়হানউদ্দিন মাস্টার। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করলে পদটি শূন্য হয়। 

ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান প্যানেল মেয়র নিমাই সরকার। এরমধ্যে তিনি আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ব্যানার ফেস্টুনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তবে ২০০৬ সালের যুবদল কমিটিতে তার নাম থাকার নথি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দলের মধ্যে তাকে নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। 

এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান সুইট, সাবেক যুবলীগ নেতা আরিফ আহম্মেদ বিপ্লব, পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান মিঠু, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন, পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দুলু, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান পান্নু, লস্করদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এএফএম সিদ্দিকুল আলম বাবলু ও সাবেক পৌর মেয়রের ভাতিজা মনিরুজ্জামান তুহিন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। 

এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার প্রচারণায় রয়েছেন নগরকান্দার কৃতিসন্তান লন্ডন প্রবাসী মাসুদুর রহমান। তবে দলীয়ভাবে কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে এ নিয়ে প্রার্থীরা চিন্তিত রয়েছেন। 

সূত্রে জানা যায়, নগরকান্দায় বর্তমান তৃণমূল আওয়ামী লীগ কয়েকটি ধারায় বিভক্ত। যারা দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন, তাদের মধ্যে সাবেক যুবলীগ নেতা হাজী আরিফ আহম্মেদ বিপ্লব অন্যতম। আরিফ আহম্মেদ বিপ্লব ১৯৭০ সালে নির্বাচিত এমপি আমিন উদ্দিন আহম্মেদের পুত্র। 

১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে মনোনিত করলে সেই নির্বাচনে আমিনউদ্দিন মাস্টার ফরিদপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। 

১৯৭৪ সালে ফরিদপুর হতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় আসার পথে আততায়ীদের হাতে তিনি গুলিবদ্ধ হয়ে মৃত্যবরণ করেন। তার সন্তান হিসাবে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের কাছে আরিফ আহম্মেদ বিপ্লব আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। 

নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান। প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসাবে প্রবীণ, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের কাছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এছাড়াও প্রচারণায় রয়েছেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদুর রহমান সুইট।

পারিবারিক ঐতিহ্য ও দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত পরিবার হিসেবে আলাদা পরিচিতি বহন করে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান মিঠু ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন। তিনি সাবেক সংসদ খায়রুজ্জামান বতু মিয়ার ভাতিজা। পৌর এলাকায় তার একটি পারিবারিক ভোট ব্যাংক রয়েছে। 

এছাড়াও তিনি মাননীয় সংসদ উপনেতার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়মন আকবর বাবলু চৌধুরীর বিশ্বস্থভাজন হওয়ায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে অনেকটা আশাবাদী। 

ইতিমধ্যে সামাজিক কিছু কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ সবার নজর কাড়ে। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে তিনি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে সবচেয়ে যিনি বেশি প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি হচ্ছেন, পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদ হোসেন। 

তিনি মাননীয় সংসদ উপনেতার পিও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও মাননীয় সংসদ উপনেতার কনিষ্ঠ পুত্র শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর আস্থাভাজন হওয়ায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারেও অনেকটাই আশাবাদী তিনি। 

আজাদ হোসেন পৌর এলাকায় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও উঠোন বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন।

অপরদিকে, বর্তমান কাউন্সিলর ও পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি দেলোয়ারা হোসেন দুলু প্রচার প্রচারণার অংশ হিসেবে পোস্টার সাটিয়ে দিয়েছেন। 

এদিকে, অপরপ্রার্থী সাবেক লস্করদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এএফএম সিদ্দিকুল আালম বাবলুও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তিনি গত ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী জাহিদ হোসেন খোকনের কাছে ৪৮৮ ভোটে তিনি পরাজিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লন্ডন প্রবাসী মাসুদুর রহমান বিভিন্ন সামাজিক কাজে অবদান রেখে চলেছেন। 

অন্যদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক পৌর মেয়রের ভাতিজা পৌর বিএনপির সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ নিবার্চনকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন। 

দলের পাশাপাশি পৌর এলাকাজুড়ে তার ব্যক্তি পারিবারিক একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে। তবে ঐ এলাকার বিএনপির কর্ণধার ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর সাথে মতপার্থক্য থাকায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিল সমীকরণে পড়তে হতে পারে তাকে। 

অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও যুবদলের সভাপতি আলমিুজ্জামান সেলু সুকৌশলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের আস্থাভাজন হওয়ায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। 

এছাড়াও উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমানের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে সাইফুর রহমান মুকুল এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রচারণা শুরু করেননি। 

নগরকান্দা বিএনপিতে দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু। আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। 

এই দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্বে এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটিতে তুষের আগুন জ্বলছে। একইভাবে আওয়ামী লীগেও দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে গিয়ে অশান্তি বিরাজ করছে। 

আমারসংবাদ/এআই