Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

পেঁয়াজের বীজ চাষ করে কোটিপতি ফরিদপুরের সাহিদা

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর 

ডিসেম্বর ৪, ২০২০, ১০:৩০ এএম


পেঁয়াজের বীজ চাষ করে কোটিপতি ফরিদপুরের সাহিদা

পেঁয়াজের বীজ চাষ করে আত্মনির্ভরশীল তো বটেই বরং অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন ফরিদপুর জেলার সাহিদা বেগম। সাহিদা বেগমের (৪৩) দিন শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। ঘুম থেকে ওঠেন। পরিবারের সদস্যসহ কৃষিশ্রমিকদের জন্য নিজেই রান্না করেন। 

সকালে খাবারটুকু খেয়ে চলে যান মাঠে। জমির কাজ তদারক করেন। মাঠেই বিকেল গড়ায়। কোনো এক ফাঁকে হয়তো বাসায় ফেরেন, কাজের চাপ থাকলে শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠেই বসে যান থালা হাতে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। 

১৮-১৯ বছর ধরে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করছেন। চলতি বছর প্রায় ২০০ মণ পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেছেন। মৌসুমে এই বীজ মণ প্রতি ২ লাখ টাকা করে দাম পেয়েছেন। 

কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ বিক্রি হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা কেজি দরে।

সাহিদা বলেন, এ বছর এরই মধ্যে বীজ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাছাই করার পর পেঁয়াজের বাল্ব জমিতে লাগাতে মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাজ করছে ১২ জন শ্রমিক। বীজ উৎপাদনের জন্য যে পেঁয়াজ এখন লাগানো হচ্ছে তার ফলন আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে।

সাহিদা বলেন, কৃষক পরিবারের বউ হওয়ার কারণে ‌আগে থেকেই নানা কৃষিকাজের সাথে পরিচয় ছিল। আমার শ্বশুর মূলত পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের আগ্রহী ছিলেন। অনেকটা শখের বশেই এই চাষ শুরু করা।

তিনি জানান, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগে ২০ শতক জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেন। সে বছর মাত্র দুই মন বীজ উৎপাদিত হয়েছিল। সেগুলো বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৮০ হাজার টাকা। পরের বছর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে পেয়াজের চাষ করতে শুরু করেন। সে বছর পান ১৩ মণ বীজ।

সাহিদা বলেন, বীজ বিক্রি করে দেখলাম যে আমি ভালই লাভবান। পরের বছর আরো জমি বাড়াইলাম। ৩২ মণ বীজ উঠলো। এভাবেই আমার ওঠা। এর পর আর থেমে থাকেননি। গত বছর ১৫ একর আর চলতি বছর ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করেছিলাম। ঘরে তুলেছিলাম ২০০ মন বীজ।

তিনি জানান, আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি জমিতে পেঁয়াজের বীজের চাষ করলেও অনেক সময় চাহিদা পূরণ করতে পারেন না । ফরিদপুর জেলার স্থানীয় কৃষক তো বটেই, পুরো বাংলাদেশে তারা বীজ সরবরাহ করে থাকেন।

সাহিদা বলেন, 'আমাদের বীজ ভাল বলে চাহিদা থাকে। কৃষকরা অনেক খুশি। কারণ এর মধ্যে কোন ঝামেলা নাই। নিজের প্রোডাক্ট, কোন ভেজাল নাই। এবছর আরো ৫০০ মণ থাকলেও বিক্রি করতে পারতাম। এতো চাহিদা।'

সাহিদা বেগমের পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের কাজে সহায়তা করেন তার স্বামী বক্তার উদ্দিন খানও। যিনি পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

স্বামী ছাড়াও পরিবারে দুই মেয়ে নিয়ে চার জনের সংসার সাহিদা বেগমের। সাহিদা বেগম নিজেই গড়ে তুলেছেন পেয়াজের বীজের কারখানা। সেখান থেকেই বীজ প্যাকেটজাত করা এবং ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। তার তৈরি করা বীজ ক্রেতাদের কাছে পরিচিত 'খান সিডস' নামে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছর পেঁয়াজের বীজের চাহিদা বেশি থাকার কারণে দাম ছিল বেশ চড়া। প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দরে। সে হিসেবে সাহিদা বেগম প্রায় চার কোটি টাকার বেশি বীজ বিক্রি করেছেন।

সাহিদা বেগম বাড়ি থেকেই পেঁয়াজের বীজ বিক্রি করেন। ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা সাহিদার বীজ কিনতে আসেন।

এর মধ্যে পাবনা, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জে চাহিদা বেশি। 'খান বীজ' নামে মোড়কজাত করে বিক্রি করেন তিনি। 

একসময় অবশ্য মোড়কীকরণ ছাড়াই বিক্রি করতেন। 

সাহিদা বলেন, 'প্যাকেট না করায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। ব্যাপারীরা অন্য পেঁয়াজের বীজ মিশিয়ে বিক্রি করতেন। এতে কৃষক কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতেন না। ফলে আমার বদনাম হতো।'

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক আশুতোষ বিশ্বাস বলেন, সাহিদা বেগম পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে ফরিদপুরে এককভাবে শীর্ষে আছেন। তাঁর উৎপাদিত বীজের কদর দেশব্যাপী।

সাহিদা বেগমের জমিতে সাধারণত নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এলাকার কৃষিশ্রমিকেরা কাজ করেন। চলতি বছর করোনার কারণে উত্তরবঙ্গের নিয়মিত শ্রমিকদের পাননি। এ জন্য সমস্যার অন্ত ছিল না। 

তবে সমস্যা ঘোচে এলাকার একটি তুলা মিলের অর্ধশত নারী শ্রমিককে পেয়ে। দেশজুড়ে লকডাউনের সময় এই নারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। এখনো তাঁরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন।

তাঁদেরই দুজন গোবিন্দপুর গ্রামের হাসিনা বেগম (৪৮) ও তাঁর মেয়ে লাবণী বেগম (২১)।

লাবণী বেগম বলেন, 'করোনার কারণে তুলার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছিলাম। ওই সময় সাহিদা আপার জমিতে কাজ পাই। কী যে উপকার হয়েছে বলে বোঝাতে পারব না।'

সাহিদার জমিতে ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন ছয় মাস। এছাড়া সারা বছরই প্রায় ২০ জন শ্রমিক থাকেন।

আমারসংবাদ/এআই