Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

যানবাহনের বাড়তি চাপে সিলেট, ভোগান্তিতে নগরবাসী

মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

ডিসেম্বর ৫, ২০২০, ১১:৪০ এএম


যানবাহনের বাড়তি চাপে সিলেট, ভোগান্তিতে নগরবাসী

সড়কের তুলনায় যানবাহনের বাড়তি চাপে রয়েছে সিলেট। পাঁচ লাখ নগরবাসীর জন্য যেখানে প্রয়োজন ছিলো ২৫ শতাংশ সড়কের সেখানে রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ সড়ক। 

অপরদিকে যে কয়টি সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে তাতে তেমন কোনো সুবিধা পাবেন না নগরবাসী। ফলশ্রুতিতে যানবাহনের বাড়তি চাপের সঙ্গে যানজট ভোগান্তি থেকেই যাচ্ছে। এতে করে বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। 

সিলেটে নগরবাসীর চলাচলের জন্য সড়ক রয়েছে মাত্র ৬৬৮ কিলোমিটার। অর্ধেকেরও বেশি রাস্তা অবৈধ গাড়ি পার্কিং আর হকারদের দখলে। নগরজুড়ে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার সড়কে সিসিকের প্রশস্তকরণ কাজ চলছে। 

এই স্বল্প পরিমাণ সড়ক প্রশস্ত করেও যানবাহনের চাপ সামলানো অনেকটাই কঠিন হবে। যানবাহনের তুলনায় সড়ক না থাকায় প্রতিনিয়তই হচ্ছে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রাণহানি। যানবাহন বেশি হওয়ার কারণে যত্রতত্র গাড়ি স্ট্যান্ড ও পার্কিং করে সমস্যা আরো দ্বিগুণ বাড়ছে। 

এদিকে, হাইওয়ে সড়কে গাড়ি চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করার পর থেকে নগরে বাড়ছে বাড়তি গাড়ি চাপ। এই গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। নগরের ছোট বড় ৬০ পয়েন্টের মাত্র ৩০টি পয়েন্টে লোকবল দেয়া সম্ভব হয় বলে জানিয়েছে সিলেটের মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। 

লোকবল সংকটের কারণে ১০ জনের জায়গা ৩ জন পুলিশ সদস্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন এসব পয়েন্টগুলোতে। জনবল সংকটের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনের। তাই প্রতিদিনই সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো যানজট লেগে থাকে। 

গণপরিবহনের অপ্রতুলতার কারণে ছোট ছোট যানবাহনে নির্ভরতা আর এতেই বেড়ছে নগরীর যানবাহন। সিলেট নগরীতে চলাচলের জন্য সিটি কর্পোরেশনেরই অনুমোদন দেওয়া আছে প্রায় ১৩ হাজার টি রিকশাকে। 

এর বাইরেও শহরতলির আরো প্রায় ১০ হাজার রিকশা প্রতিদিন নামে সিলেটের পথে। অথচ রাস্তার পরিধি বাড়ছে না। 

বিআরটিএর সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫৫০টি নতুন নিবন্ধিত গাড়ি রাস্তায় নামছে। বিআরটিএর দেয়া তথ্যমতে, সিলেটের রাস্তায় বর্তমানে চলাচল করছে সিএনজিচালিত অটো রিকশা প্রায় ২০ হাজার, প্রাইভেট কার ২ হাজার ৩০০টি, মাইক্রোবাস প্রায় ৯০০টি, অ্যাম্বুলেন্স ১১৫টি, পিকআপ ৩ হাজার ৩১৪টি, ট্রাক ২ হাজার ৩৮৭টি, বাস-মিনিবাস প্রায় ৬০০টি, ট্যাংক লরি ৯৪টি, অটো টেম্পু ৮৭৪টি, কাভার্ড ভ্যান ১৩৫টি, ট্রাক্টর ২৭৮টি, হিউম্যান হলার ১ হাজার ১৬৫, মোটর সাইকেল প্রায় ৭০ হাজার। 
যার ৭০-৮০ ভাগই ঘুরে বেড়ায় সিলেটের বুকে। 

এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গাড়ি তো রয়েছেই। আর রয়েছে পাথর পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের সারি। এর বাইরে অন্যান্য অনিবন্ধিত গাড়ি তো রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু এতসব যানবাহনকে জায়গা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সড়ক নেই সিলেটে। 

পর্যটন নগরী সিলেটে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেড়াতে আসেন দর্শনার্থীরা। আগতরা গাড়ি রাখার জায়গা না পেয়ে রাস্তায় গাড়ি পাকিং করেন। সব মিলিয়ে সিলেট নগরীর রাস্তা যেন এক ভয়ংকর বিভীষিকার নাম। যদিও সিটি কর্পোরেশন নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা প্রশস্ত করণের কাজ করছে, তাতেও কোনো কূল-কিনারা হবে না বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। 

অপর্যাপ্ত সড়কের যানবাহনের এ চাপ সামলাতে অপ্রতুল লোকবল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। এতসব গাড়ি সামলানোর জন্য সিলেটে সব মিলিয়ে ট্রাফিক সদস্য রয়েছেন ২১৫ জন। 

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য মতে একজন উপ পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ট্রাফিক বিভাগে নিয়োজিত রয়েছেন ২ জন অতিরিক্ত উপ কমিশনার, ১ জন সহকারী কমিশনার, ১১ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ১ জন সাব ইন্সপেক্টর, ২২ জন সার্জেন্ট, টাউন সাব ইন্সপেক্টর ১৪ জন, অ্যাসিস্ট্যান্ট টাউন সাব ইন্সপেক্টর ২৩ জন, ৫ জন অ্যাসিসটেন্ট ট্রাফিক সাব ইন্সপেক্টর ও ১৩৭ জন কনস্টেবল। গাড়ির চাপে তারা রীতিমতো দিশেহারা।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, একটি মডেল নগরে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকার কথা। তবে সিলেটে রয়েছে ৭ থেকে ৮ শতাংশ রাস্তা। যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক সব ধরণের যানবাহনের চাপ একই রাস্তা। 

এসব সমস্যা সমাধানে ২০১০ সালে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যাতে যানবাহনের চাপ সামাল দিতে সিটি এড়িয়াতে রাস্তা গুলো ৬০ থেকে ৮০ ফিট প্রশস্ত করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে রাস্তার পাশের দোকানপাঠ মার্কেট কিছুই থাকবে না। তাই বর্তমানে ৫-৬ ফিট জায়গা নিয়ে কিছু সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। 

এ ব্যপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ জানান, আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। একটি বড় পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কমপক্ষে দশজন লোক দরকার সেই জায়গায় আমরা মাত্র ৩ জন লোক দিতে পারি যেসব গাড়ির অনুমোদন কাগজ পত্র ঠিক আছে তাদেরতো আর বাধা দেয়া যাবে না। যেসব গাড়ি অনটেস্ট কাগজ পত্র নাই সেই সব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। 

আমারসংবাদ/এআই