Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

সবাই এখন উৎসবের আমেজে টিকা নিচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১, ০৯:১০ এএম


সবাই এখন উৎসবের আমেজে টিকা নিচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে শুরুর দিকে অনেকের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও তা কাটিয়ে এখন সবাই উৎসবের আমেজে টিকা নিচ্ছেন।

শেখ হাসিনা রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে ‘কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সাইন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ’ নামে নারায়ণগঞ্জে একটি ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টার ও হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুমুদিনী কমপ্লেক্স নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে সঙ্গে যুক্ত হন।

তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার ব্যাপারে অনেকের একটু দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ছিল; তবে সাহসী ভূমিকা রেখেছে আমাদের… নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। তাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আর এখন আল্লাহর রহমতে আমাদের আর কোনো সমস্যা নেই। এখন সবাই খুব আগ্রহভরে উৎসব মনে করে চলে আসছে টিকা নিতে।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, এই করোনা ভাইরাস যখন এসেছে, মোকাবিলা করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে একেবারে প্রথমে সাত দিনের মধ্যে আমরা দুই হাজার ডাক্তার, ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি এবং টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিয়েছি। এবং ভবিষ্যতে আরো নিয়োগ দেওয়ার পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি; যেন আমাদের দেশের মানুষ অন্তত এই চিকিৎসাটা পায়, তার ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি।

সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে এখন মহামারি ‘অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

টিকা পাওয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, মাস্কটা পরে থাকতে হবে, হাত ধুতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ভ্যাকসিন আমরা দিয়েছি, দিচ্ছি। সাথে সাথে যেন এই স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম মেনে চলে সকলে। তাহলে আমরা আশা করি আমাদের দেশ থেকে এই প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি চলে যাবে।

জনগণ যেন স্বাস্থ্য সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসা বিজ্ঞান বিশেষ করে ক্যান্সারের ওপর আরো গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে ক্যান্সার কিভাবে বিস্তার লাভ করে সেজন্য গবেষণা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে গবেষণার সুযোগ খুবই কম। বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা খুব বেশি একটা হচ্ছেনা। যেটা হওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার এমন একটা রোগ এবং যেভাবে এর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে তার সেভাবে ডায়াগনোসিস আমাদের দেশে হচ্ছে না। দেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর সাথে এই ক্যান্সার কীভাবে বিস্তার লাভ করে সেটার চিকিৎসার জন্য যে গবেষণা দরকার সেটা আমাদের দেশে খুব কমই হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর রিসার্চের জন্য অনেকগুলো ইনস্টিটিউট তৈরি করে দিয়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেগুলোকে আরো উন্নত করার পাশাপাশি আরো নতুন ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। কারন গবেষণা আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

শেখ হাসিনা বলেন, কুমুদিনী ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স এন্ড ক্যান্সার রিসার্চ’ শীর্ষক এই সেন্টারটা যখন তৈরি হবে তখন এদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ মানুষ আরো ভালভাবে পাবে। কারণ দেশের সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশের সকল বিভাগে অন্তত একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সকল বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে রিসার্চের সুযোগ হবে। তবে, আমি মনে করি যে, বেসরকারি খাতকে সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট এবং এর প্রতিষ্ঠাতা রনদা প্রসাদ সাহার ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রচারিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ মে দানবীর রনদা প্রসাদ এবং তার পুত্র ভবানী প্রসাদকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নারায়ণগঞ্জে তাদের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তারা আর ফেরেনি।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ’৯৬ সাল থেকেই তার সরকার বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করেছে। শুধু তাই নয় বেসরকারি খাতে হাসপাতাল করতে যেসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় বা সরঞ্জমাদির প্রয়োজন হয় সেগুলোকে ট্যাক্স ফ্রি এবং ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠায় যেমন সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, এমনকি শিশুদের জন্য ইনকিউবেটরসহ যা যা প্রয়োজনে সেগুলোও আমি সম্পূর্ণ ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছিলাম। যে কারণে আমাদের দেশে অনেকগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তবে, এখানে কুমুাদনী ট্রাস্ট সব সময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে এবং সব থেকে বেশি উদ্যোক্তা তারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই যেটা উদ্যোগ কুমদিনী ট্রাস্ট নিয়েছে তা অত্যন্ত সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেজন্য আমি কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং বিশেষ করে স্রীমতি সাহা এবং রাজিব সাহার প্রতি। কেননা দাদা এবং বাবার কাজ গুলো এখনও যে ধরে রেখেছেন এবং করে যাচ্ছেন সেই সাথে তাদের বোন এবং আত্বীয়-স্বজনরাও করে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠোনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নারায়নগঞ্জ -৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব প্রসাদ সাহা, পরিচালক শ্রীমতি সাহা উপস্থিত ছিলেন।

আমারসংবাদ/জেআই