Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মামুনুলের ৩ স্ত্রী, ২ জনকে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ১৯, ২০২১, ০৯:১৫ এএম


মামুনুলের ৩ স্ত্রী, ২ জনকে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’

তিন স্ত্রীর মধ্যে দুইজনকে ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয়ে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। 

এর আগে রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল বলেছেন, প্রথম স্ত্রী বাদে বাকি দুই স্ত্রীকে তিনি ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন। স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার দিতে পারবেন না মৌখিক এই শর্তেই তাদের বিয়ে করেছিলেন বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন তিনি। মামুনুল হকের দাবি, তার দেওয়া শর্ত মেনেই দুই নারী তার সঙ্গে শরীয়তের বিধান মতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা তাকে মামলা, জিডিসহ সহিংসতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাকে তিন তিনটি বিয়ে করা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিয়ে দাবি করলেও প্রথমটি বাদে বাকি দুই বিয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। 

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম স্ত্রীকে তিনি শরীয়ত সম্মত ও প্রচলিত আইন মেনে বিয়ে করেছেন। কিন্তু বাকি দুই নারীকে বিয়ের দাবি করলেও কাবিননামা নেই বলে জানান তিনি। এই দুই নারীকে তিনি ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন বলে দাবি করেন মামুনুল হক।

মামুনুল হকের দাবি, জান্নাত আরা ঝর্ণার বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি তার অভিভাবকত্ব নেন। এসময় তিনি জান্নাতকে পূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবেন না এমন মৌখিক শর্তে বিয়ে করেন বলে দাবি করেন। মামুনুল হকের দাবি, তার শর্ত জান্নাত আরা মেনে নিয়েছিল। দুই বছর ধরে তিনি জান্নাত আরার ভরণ-পোষণ ছাড়াও ব্যবসা করার জন্য মূলধন দিয়েছেন এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে জান্নাতের সঙ্গে তার নয় মাস ধরে দেখা-সাক্ষাত হচ্ছিল না। জান্নাত তাকে সময় দেয়ার জন্য বারবার বলছিল। ৩ এপ্রিল তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া বাতিল হলে তিনি ওই দিন জান্নাতকে নিয়ে কোথাও একটু একান্ত সময় কাটাতে চেয়েছিলেন। ঘটনার দিন সকালে গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালের সামনে থেকে জান্নাতকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রয়েল রিসোর্টের দিকে রওয়ানা দেন তিনি।

মামুনুল বলেন, স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ার শর্ত দিয়েই তিনি বিয়ে করেছিলেন। ইসলামে এটা জায়েজ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। 

প্রথম স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ‘শহীদুল ভাইয়ের ওয়াইফ’ বলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামুনুল হক জানান, বিষয়টি জানার পর তার প্রথম স্ত্রী যদি স্ট্রোক বা খারাপ কিছু একটা করে ফেলে সেই আতঙ্ক থেকে মিথ্যা বলেছিলেন তিনি।

তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাতুল ফেরদৌস লিপি সম্পর্কে মামুনুল বলেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিট অব বাংলাদেশে একসঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স করার সময় তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর জান্নাতুলের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাকেও স্ত্রীর অধিকার না দেয়ার মৌখিক শর্তে তাকে বিয়ে করেন তিনি। 

তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, নিজের বোনকে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকের স্ত্রী দাবি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ১১ এপ্রিল একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেছেন মো. শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি। তার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস ওরফে লিপি নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জিডিতে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বিয়ে করেছি। সে আমার তৃতীয় স্ত্রী।’

তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তার প্রথম স্ত্রী কিছুই জানতেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, রিসোর্টকাণ্ডের পর মামুনুল হকের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন প্রথম স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবা। তিনি এখনও মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে এক নম্বর সড়কে অবস্থিত মামুনুল হকের বাড়িতে আসেননি। বর্তমানে তাইয়্যেবা বাবার বাড়িতে আছেন।

এদিকে মোহাম্মদপুর থানার নাশকতার এক মামলায় হেফাজত নেতা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার (১৯ এপ্রিল) সাতদিন রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির এই নেতাকে সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাতদিন রিমান্ডের আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক।

শুনানি নিয়ে মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী সাতদিনই মঞ্জুর করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান জানিয়েছেন। ‘আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেছিলেন। আদালত তা নাকচ করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন,’ বলেন তিনি।

গ্রেপ্তারের পর তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের একটি নাশকতার মামলায় মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‘তদন্তে ওই ঘটনায় সুস্পষ্ট সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

এটিসহ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন।

আমারসংবাদ/জেআই