Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ছুটি শেষে ফিরতি যাত্রা

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ১৬, ২০২১, ১০:১৫ এএম


ছুটি শেষে ফিরতি যাত্রা

ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শেষ। নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া মানুষ পুনরায় ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীতে। তবে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলের কার্যক্রম শুরু হলেও রাজধানীর রাস্তায় এখনও ঈদের ছুটির রেশ কাটেনি।

এদিকে লকডাউনের কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় গন্তব্যে ফিরতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া গুণে বিভিন্ন যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে কর্মস্থলে ফিরছেন। ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষদের চাপে রাজধানীর কিছু কিছু জায়গায় সামান্য যানবাহনের জটলা সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। তবে এই জটলা খুব বেশি সময় থাকছে না। 

ঈদের আগে যে যার মত করে নাড়ির টানে ঢাকা ছেড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। কেউ মোটরসাইকেলে করে, কেউ সিটি/জেলা কেন্দ্রীক গণপরিবহনে ভেঙে ভেঙে, কেউবা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ভাড়া করে আবার কেউ মিনি পিকআপে করে ঢাকামুখী হতে শুরু করেছেন।

ঈদ শেষে করোনার ভয় উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ঢাকায় ফিরছেন অনেক মানুষ। রোববার (১৬ মে) সকাল থেকে শিমুলিয়া ঘাটে মানুষ চাপ বেড়েছে। হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ ফেরিতে করে নদী পার হয়ে শিমুলিয়ায় এসে পৌঁছেছেন।

বিআইডব্লিউটিসির এজিএম শফিকুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও জরুরি পরিষেবার যানবাহন পারাপারের জন্য ফেরি সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু ফেরি সচল থাকায় জরুরি পরিষেবার যানবাহনের সাথে কর্মস্থলে ফেরা মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। ১৮টি ফেরি দিয়ে পারাপার করেও কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ায় চাপ না থাকলেও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে।  রবিবার সকাল থেকে মানুষের চাপে ফেরিতে ঠিকমতো গাড়ি পার করা যাচ্ছে না। প্রতিটি ফেরিতেই মানুষের উপচেপড়া ভিড়। গাদাগাদি করে ফেরিতে নদী পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

ঢাকামুখী যাত্রীরা বলেন, জীবনের ঝুঁকি থাকলেও কর্মস্থলে যেতেই  হবে, না যেতে পারলে চাকরি থাকবে না।

পাটুরিয়া ফেরিঘাটে উপচেপড়া ভিড় না থাকলেও একটু পর পর মানুষ ও ব্যক্তিগত যানবাহন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস আসতে দেখা গেছে।

ফেরি কর্তৃপক্ষ জানান, এই নৌরুটের ১৬টি ফেরির মধ্যে বড় একটি ফেরি বিকল থাকায় বাকি ১৫টি ফেরি দিয়ে পারাপার করছেন। তবে ফেরিতে মানুষ গাদাগাদি করেই আসছে।  ফেরিতে কিংবা ঘাট এলাকায় কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি কিংবা শারিরীক দূরত্ব বজায় থাকছে না।

রাজধানীর গাবতলী ও সায়দাবাদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘরমুখো মানুষ জন ঈদ ফিরতি যাত্রায় ঢাকায় ফিরছেন। ঈদ ফিরতি এই যাত্রা আরও কয়েক দিন চলবে বলেও জানা গেছে।

আব্দুল্লাহপুরে সকাল থেকে ঢাকামুখী মানুষের স্বাভাবিক ভিড় দেখা গেছে। আন্তঃজেলা গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই মোটরসাইকেলে চড়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। অনেক মানুষকে দেখা গেছে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ফিরতে। 

এদিকে ফাঁকা ময়মনসিংহ সড়ক দিয়ে আসা ফিরতি মানুষদের টঙ্গী থেকে হেটে আব্দুল্লাহপুর আসতে দেখা গেছে। তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে আবার অন্য যানবাহনে করে বাসায় ফিরছেন।

রাজধানীর আমিনবাজার এলাকায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রবেশপথে দীর্ঘ যানজট। আমিন বাজার থেকে শুরু করে প্রায় কয়েক কিলোমিটার পথে বাস, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিকশার দীর্ঘলাইন।

মৌমিতা পরিবহনের এক যাত্রী মোহাম্মদ আসাদুল ইসলাম বলেন, আমি এসেছি পাটুরিয়া থেকে। বাসে করে সাভার পর্যন্ত এসেছি।  সেখান থেকে অন্য একটি বাসে করে আবার আমিন বাজার এলাকায় আসি। কিন্তু এখানে এসে দেখি কয়েক কিলোমিটার জ্যাম। তাই পায়ে হেঁটেই এখন গাবতলী যাচ্ছি। নয়তো এই গরমের মধ্যে আরো ঘণ্টাখানেক সময় বাসের মধ্যে থাকতে হবে।

অগ্রদূত পরিবহনের চালক মাইদুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জ, দোহার বা সাভার থেকে যেসব বাস ছেড়ে আসছি সেগুলোকে ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ইউটার্ন থেকে ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে অনেক সময় লাগছে আর সেজন্যই এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহেদ বলেন, সড়কের দুই প্রান্তে নয়, মূলত ঢাকামুখী যানবাহনের চাপে আমিনবাজার সড়কে যানজট লেগেছে। আবার আমিনবাজারে একটি ইউটার্ন আছে, সেখান থেকে গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে। তাই একটু সময় লাগছে। লকডাউনের কারণে ঢাকা জেলার কোন যানবাহন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। 

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে কড্ডা, নলকা ও হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোরে রাস্তা অনেকটা ফাঁকা থাকলেও সকাল ৮টার পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে গাড়ি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারই বেশি চলাচল করছে। এ ছাড়া ট্রাক, আন্তঃজেলা পরিবহনের পাশাপাশি মহাসড়কে চলতে দেখা গেছে দূরপাল্লার বাসও।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ভোরের দিকে মহাসড়ক ফাঁকা ছিল। তবে সকাল থেকে গাড়ি বাড়তে দেখা গেছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িই বেশি। পাশাপাশি দূরপাল্লারও কিছু বাস মহাসড়কে চলাচল করছে।

এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের সরকার ঘোষিত তিন দিনের ছুটি শেষ হয়েছে শনিবার (১৫ মে)। রোববার থেকে করোনার চলমান বিধিনিষেধের সময় যেসব প্রতিষ্ঠান খোলার কথা সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কর্মস্থলের কার্যক্রম শুরু হলেও রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা ঈদের ছুটির মতোই ফাঁকা রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া রাজধানীর রাস্তায় তেমন কোনো যানবাহন দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া রাস্তায় মানুষের উপস্থিতও কম লক্ষ্য করা গেছে। 

অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ দোকান পাট এখনো বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে থেকে কর্মস্থলগামী মানুষের কিছুটা উপস্থিত এসব এলাকার রাস্তায় দেখা গেলেও তা ছিল খুবই কম। অল্প সংখ্যক মানুষ গণপরিবহন বা ব্যক্তিগত বাহনে করে কর্মস্থলে যাচ্ছে। এছাড়া রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিত কম থাকায় গণপরিবহনের চলাচল এসব রাস্তায় ছিল নাম মাত্র। হাতেগোনা কয়েকটি পরিবহনের বাস ছাড়া তেমন কোনো গাড়ির চাপ দেখা যায়নি রাস্তায়। তবে ঈদের ছুটির দিনগুলোর তুলনায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশার চলাচল বেড়েছে।

আরও দেখা যায়, সকাল থেকে যানবাহনের সংখ্যা দিনগুলোর তুলনায় বাড়লেও কোথায় কোনো যানজটের দেখা যায়নি। ফাঁকা রাস্তায় ভোগান্তি ছাড়াই চলছে যানগুলো।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ রিকশা চালক আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাস্তায় মানুষ নেই। এখনও মানুষ বাড়ি থেকে আসেনি। ঘণ্টাখানেক বসে থেকেও যাত্রী পাচ্ছেন না তিনি। তবে সকালের দিকে যাত্রী কিছু পাওয়া গেলেও সকাল ১০টার পর থেকে যাত্রী অনেক কমে গেছে। প্রতিবারই এমন হয়, ঈদের ছুটির শেষ হওয়ার আরও ২-৩ দিন পর মানুষ জন ঢাকা আসে।

যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরাগামী রাইদা পরিবহনের একটি বাসের চালক লিয়াকত মোল্লা বলেন, রাস্তায় যাত্রীর চাপ কম বলে আমাগো গাড়িও কম। তাছাড়া আমাগো অনেক স্টাফও ঈদের ছুটিতে আছে। আমরা যারা ঈদের ছুটিতে যাই নাই তারাই গাড়ির নিয়ে বের হয়েছি। আরও কয়েকদিন লাগব সব স্বাভাবিক হইতে।

আমারসংবাদ/জেআই