Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ইসলাম প্রচারে যা করণীয় সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১০, ২০২১, ০৮:১০ এএম


ইসলাম প্রচারে যা করণীয় সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বলেছেন, ইসলামের প্রচার-প্রসারে যা যা করণীয় আমরা সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।   

মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫০টির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই যে আমাদের এই পবিত্র ধর্ম সম্পর্কে মানুষ যেন সচেতন হয়। একমাত্র ইসলাম ধর্মে নারীদের অধিকার দেওয়া হয়েছে। নারীদের সমঅধিকার কিন্তু ইসলাম ধর্মই দিয়েছে। পৈর্তৃক সম্পত্তিতে নারীদের যে অংশ, এমনকি স্বামীর সম্পত্তিতে নারীদের যে অংশ, সেটা কিন্তু ইসলাম ধর্মই দিয়েছে। কোনো ধর্মেই কিন্তু এটা নেই। ইসলাম ধর্মে সব দিক থেকেই... নারীদের সুযোগ সুবিধা... সেটা আমাদের পবিত্র ইসলাম ধর্ম দিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, মাদক আজ আমাদের সমাজকে একেবারে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এই মাদকের হাত থেকে যেন মানুষকে মুক্ত করতে পারি তার জন্য সকলকে আরও সচেতন হতে হবে। আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম প্রত্যেক উপজেলায় সকল ধর্ম-বর্ণের সকলকে নিয়ে, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটি করে এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদক, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন বা পাশবিকতার বিরুদ্ধে আমাদের এই সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই মসজিদটা আমরা সেইভাবেই তৈরি করতে চেষ্টা করেছি। যেখানে সব ধরনের শিক্ষা এবং প্রচার.. মানুষের মাঝে সচেতনতা, ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি পায়...সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এটা করেছি।

তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হজ সম্পর্কে সকল তথ্য এবং সেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে আমরা নিয়েছি। হজযাত্রীদের ভিসা-পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিকেল সকল বিষয় সহজ করে দেওয়া হয়েছে। আগে যখন হজযাত্রীরা যেতেন, তখন টার্মিনালের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তায় তাদের বসে থাকতে হতো। কখন যাবেন, কিভাবে যাবেন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর জেদ্দার টার্মিনালে আমরা আলাদা জায়গা নিয়েছিলাম, নেওয়া আছে। আমাদের বাংলাদেশ থেকে যারা যাবে তারা সেখানে থাকবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে বাসে করে যাতে পবিত্র মক্কা শরীফে চলে যেতে পারেন সে ব্যবস্থাটা কিন্তু আমরা নিয়েছি। 

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কিন্তু হজযাত্রীদের নানা সমস্যা একে একে দূর করেছে। এখানে আমাদের আশকোনা হজ ক্যাম্প রয়েছে। তাদের (হাজীদের) ইমিগ্রেশনের কাজটা... এয়ারপোর্টের ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই। সেখানে বসেই যেন হতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থাটাও কিন্তু করে দিয়েছি। সৌদি সরকারের সঙ্গে আলাপ করে আমরা সেই অনুমোদনও নিয়েছি। এখানে বসে সবকিছু হয়ে যাবে। তারপর সহজভাবে বিমানে চলে যাবেন।

সরকারপ্রধান বলেন, এখন আর আমাদের বিমান ভাড়া করা লাগে না। নিজেদের বিমানে আমরা হাজীদের পাঠাতে পারি। ঢাকা বিমানবন্দরে যেমন ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। মক্কা-মদিনা শরীফ থেকে আসার সময় যেন সুবিধা হয়, মক্কা শরীফেও সে ব্যবস্থা করেছি। যাতে সব ধরনের সুবিধা-অসুবিধা জানার জন্য এই ব্যবস্থা থাকে। সেই দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি বলেন, জমজমের পানি আনতে গেলে অনেক সময় সমস্যা হতো। ওজন নিয়ে সমস্যা হতো। আমাদের বিমান যখন হাজীদের নামিয়ে দিয়ে আসে এই খালি প্লেনে আগেই জমজমের পানি নিয়ে আসে। পরে যাদের যাদের পানি দরকার হয় নিতে পারেন। আশকোনা থেকে নিতে পারেন। সেই ব্যবস্থাটাও কিন্তু আমরা করে দিয়েছি। সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি, আমাদের অনেক পুরনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আছে, সেগুলো রক্ষা করার। সেগুলো দর্শনীয় হিসেবে আরও উন্নত করা। বায়তুল মোকাররমের মিনার নির্মাণ, এগুলো আমরা করেছি। মসজিদভিত্তিক শিক্ষা আমরা করে দিয়েছি। সেখানে আমরা বিশেষ অনুদান দিচ্ছি।

[media type="image" fid="127627" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তিনি বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট আমি করে দিয়েছি। কারণ আমি জানি যে একটা সময় অসুস্থ হয়ে গেলে তাদের আর সাহায্য করার কিছু থাকে না। কাজ করতে চাইলেও কোনো কাজ তারা করতে পারে না। সেই জন্যই আমি এই ফান্ড গঠন করেছি। আমাদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যেন বিশেষ সুবিধা পান। ঋণ নিতে পারেন, অনুদান নিতে পারেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি ছিল না, আমরা তার সনদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। ইসলাম প্রচার-প্রসারে যা যা করণীয় আমরা সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এখানে তো আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফে আছে, সূরা কাফিরুনে স্পষ্ট বলা আছে লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন। ইসলাম ধর্ম সব থেকে বড় ধর্ম, যে ধর্ম মানুষের অধিকার, মানুষকে মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করবার শিক্ষা দেয়। সেই শিক্ষাটাই সবাই নেবে, এটাই আমরা চাই। আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেভাবে তৈরি হবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই মডেল মসজিদের মাধ্যমে ইসলামের বাণী প্রচার হবে। ইসলামিক সংস্কৃতি প্রচার হবে। ইসলামের মর্মবাণী দেশ বিদেশের সকল ধর্মের মানুষ উপলব্ধি করতে পারবে সেই দিকেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। 

ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ সারা দেশে ইসলাম ধর্মের প্রসারে বঙ্গবন্ধুর নেয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জাতির পিতা ইসলামি ফাউন্ডেশন তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো জেলায় স্থায়ী অফিস ছিল না। আমরা সমগ্র দেশে ইসলামী ফাউন্ডেশনের অফিস প্রতিষ্ঠা করি। কারণ বঙ্গবন্ধু ছিলেন ধর্মপ্রাণ খাঁটি মুসলমান। তিনি সকল ধর্মের প্রতি মর্যাদা যেমন দেখিয়েছেন, ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রচারণাকেও তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশনটা করেছিলেন যাতে ইসলাম ধর্মের প্রচার ঠিকমতো হয়; মানুষ এর মর্মবাণী বুঝতে পারে। মাদ্রাসা বোর্ড তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেসকোর্স খেলা বন্ধ করে দেন (বঙ্গবন্ধু)। সেই সাথে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করেন। বিশ্ব ইজতেমা যেন বাংলাদেশে হয় এ জন্য টঙ্গীতে বিশাল জায়গা দেন। কাকরাইলে একটি ছোট মসজিদ ছিল। এটাও তিনি দিয়েছিলেন তাবলিগ মারকাজের জন্য। মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ওআইসিতে তিনি যোগ দেন এবং বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্যভুক্ত দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। সংবিধানে তিনি যে ধর্ম নিরপেক্ষতা দিয়েছেন তার অর্থ হচ্ছে যার যার ধর্ম সে তা পালন করতে পারবে। ধর্মকে তিনি নিষিদ্ধ করেননি। ধর্ম পালনের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

[media type="image" fid="127629" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক মো. নজিবুর রহমান বলেন, এটাই হচ্ছে বিশ্বে প্রথম কোনো সরকারের একই সময়ে একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণের ঘটনা, যা বিশ্বে বিরল।

সারা দেশে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আগামী অর্থবছরের মধ্যে আরো ১০০ মডেল মসজিদ চালু করা যাবে।

এ পর্যন্ত প্রকল্পের মোট কাজের ৩৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এসব মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।

বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন এসব মসজিদের প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সারা দেশে নির্মাণাধীন এসব মসজিদের ভৌত অবকাঠামো গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২ শ মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯ শ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে।

এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজের জায়গা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি রাখার জায়গা রাখা হয়েছে।

সারা দেশে এসব মসজিদে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। একসঙ্গে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন, ৬ হাজার ৮০০ জন ইসলামিক বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন, ৫৬ হাজার মানুষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারবেন এবং প্রতি বছর এখান থেকে ১৪ হাজার কোরআনে হাফেজ হবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

[media type="image" fid="127628" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প নেওয়া হয়।

আমারসংবাদ/জেআই