Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আলোশূন্য বেড়িবাঁধে ছিনতাইয়ের ভয়ংকর ফাঁদ

একে সালমান

জুন ১০, ২০২১, ০৯:০০ এএম


আলোশূন্য বেড়িবাঁধে ছিনতাইয়ের ভয়ংকর ফাঁদ

রাজধানীর বেড়িবাঁধ এলাকাগুলোতে সন্ধ্যা নামলেই চুরি-ছিনতাইয়ের এক ভয়ংকর ফাঁদ হয়ে উঠে। গাবতলী থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ জুড়ে রাস্তার উপর তেমন লাইটিং ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধকারের সুযোগে ছিনতাইকারীরা উৎপেতে থাকে।

গাবতলী বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে সদরঘাট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জনবহুল এলাকা এবং কয়েকটি পাইকারী কাঁচা বাজার থাকায় বেড়িবাঁধ জুড়ে মানুষের যাতায়াত। এসব পাইকারী কাঁচা বাজারে খুচরা ক্রেতারা গভীর রাতে কাঁচা মাল কিনতে বেড়িবাঁধের রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। এছাড়াও বেড়িবাঁধের পাশ জুড়ে মোহাম্মদপু, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীচর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় নতুন নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠায় সেখানে অনেকের বসবাস। সেই সুবাদে অনেক বাসিন্দাদের দিনরাত বেড়িবাঁধ জুড়েই চলাফেরা।

অনেক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, রাতের বেলা ছাড়াও আমরা এ রাস্তা দিয়ে দিনের বেলা যাতায়াতের সময় ছিনতাইকারীর কবলে পরতে হয়। 

মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন জানান, আমি গত মঙ্গলবার (৮ জুন) সন্ধ্যা ৭ টায় নবোদয় কাঁচাবাজার থেকে ঢাকা উদ্যানের ঢাল দিয়ে হেটে বাসায় যাচ্ছিলাম। ঢাকা উদ্যান কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আসতেই লাল কালারের চুল,হাতে ষ্টীলের চুড়ি, চেহারায় কাটা দাগওয়ালা দুই যুবক এগিয়ে এসে আমরা গলায় চুরি ধরে আমার পকেটে থাকা মানিব্যাগ, মোবাইল সহ যা ছিলো সব কেঁড়ে নেয়। এ বিষয়ে আমি আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।

গাবতলী দ্বীপনগর এলাকার আরেক আরেক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, আমি কাঁচা মালের ব্যবসা করি। গতকাল ভোররাতে পাইকারী দরে কাঁচা মাল আনতে মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজারে যাওয়ার সময় আদাবরের সুনিবীড় হাউজিংয়ের স্লুইস গেটে আমাকে দুই তিন জন এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে সব ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি অনেক কান্নাকটি করে বলি আমার ঘরে বৃদ্ধ মা আছে। আমি ব্যবসা করে এই টাকা দিয়ে আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করি। কিন্তু তারা আমার কোন কথা না শুনেই আমাকে মেরে সব টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে বেরীবাঁধ এলাকায় কয়েকটি গ্রুপে ছিনতাইকারীরা মহড়া দিতে থাকে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর ঢাকা উদ্যান থেকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড় এবং তিন রাস্তার মোড় থেকে সিকশন পর্যন্ত কয়েকটি ভাগে ছিনতাইকারীরা ভাগ হয়ে এসব ছিনতাই করে। এছাড়াও, আদাবরের সুনিবিড় হাউজিং থেকে শুরু করে মেহাম্মদপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস রয়েছে। এসব গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার পর গার্মেন্টস কর্মীরা যখন বের হয় তখন ছিনতাইকারীরা বেশি তৎপর হয়ে উঠে। এ ব্যাপারে সবাই জানলেও কেউ ভয়ে কিছু বলার সাহস পায়না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদাবর থানা এলাকার শেখেরটেক, আদাবর ১০, ১৬, মনসুরাবাদস হাউজিং, সুনিবিড় হাউজিং, বেড়িবাঁধ সংলগ্ন তুরাগ হাউজিং, হাড্ডিপট্টি, স্লুইজ গেট, আহমেদ নগর এলাকা ঘুরে ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনার বর্ণনা পাওয়া গেছে।

মোহাম্মদপুর থানা এলাকার মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড, বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়, লাউতলা, কাটাসুর, শ্যামলি, কলেজগেট, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ও লেগুনা ষ্ট্যান্ডে এসব ঘটনা এখন নিয়মিত।

এছাড়াও, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ইসলামবাগ, পোস্তাসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন বিক্রির হাঁট বসে বেড়িবাঁধের সিকশন এলাকায়। বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশে প্রতিদিন বিকালে ৩ টা থেকে এই হাট বসে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন বিক্রি হয় এসব অস্থায়ী দোকানে। ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন জানা সত্ত্বেও এসব মোবাইলের খদ্দের কম নয়।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সিকশন এলাকার একজন  বলেন, অনেক সময় দামি দামি মোবাইল ফোন কম দামে পাওয়া যায়। তাই অনেকেই এখান থেকে মোবাইল কিনতে আসে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম জানান, আমরা ঢাকা সিটির প্রতিটি এলাকায় চুরি-ছিনতাই রোধে মনিটরিং বাড়িয়েছি এবং যেসব এলাকাগুলোতে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি। সে সব এলাকায় আমাদের টহল টিম কাজ করছে। সাথে সাথে যারা এই কাজে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। 

এছাড়াও, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আমরা কথা বলে চিহ্নিত এলাকাগুলোতে আমাদের সিভিল টিমের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছি। আমরা সকল অপরাধ বন্ধের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, রাজধানীর মুগদা এলাকায় এ বছরের গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার ভোরে স্বামী ও দুই সন্তানসহ কমলাপুর রেল স্টেশনে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের একটি চক্র লিপার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ৬টা ৫ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।

এছাড়াও, ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারিতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছিনতাই এর ঘটে যাওয়া আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালের আয়া হেলেনা বেগম জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করার জন্য গ্রামের বাড়ি বরিশালে যান। গ্রাম থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তার স্বামী মনিরুল ইসলাম সহ ২৬ জানুয়ারি রাতের লঞ্চে করে ভোরে ঢাকার সদরঘাটে এসে পৌঁছায়। সদরঘাট থেকে লোকাল বাসে করে ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কে নামেন তারা। হেঁটে কলাবাগানের বাসায় যাওয়ার সময় হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার থেকে কেউ একজন হেলেনার ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়। আচমকা টানে তাল সামলাতে না পেরে ওই প্রাইভেট কারের নিচে পড়েন হেলেনা। চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। হেলেনা বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা করেন।

আমারসংবাদ/জেআই