Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বর্ষা এলেই বাড়ে জেলেদের মাছ ধরার ধুম

জুন ১৬, ২০২১, ০৮:১০ এএম


বর্ষা এলেই বাড়ে জেলেদের মাছ ধরার ধুম

আষাঢ়ে (বর্ষায়) নদীর পানি ফুলে ফেঁপে মাঠে ঘাটে ছড়িয়ে থৈ থৈ করছে। বাড়ির সীমানার আঙ্গিনায়ও উঁকি মারছে বর্ষার পানি। বর্ষার পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলেদে ব্যস্ততাও বাড়ে। মাছ ধরার তোরজোড় শুরু হয় জেলে পাড়াা গুলোতে। জেলেদের কাছে বর্ষা যেন আনন্দ নিয়ে আসে। মাছ মারার বিভিন্ন উপায় তৈরি করতে জেলে পাড়ার ঘর গুলোতে ব্যস্ততা স্পষ্ট। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছ মারার ধুম লক্ষ্য করা যায় জেলেদের মাঝে। পেশাজীবী জেলেই নয় শখের বশেও বর্ষা এলে মাছ ধরতে দেখা যায় প্রায় মানুষকে। 

মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার চালানোর তীব্র তৃপ্তির খোঁজ মিলে জেলেদের মাঝে। বর্ষায় কত শত মাছ। গইন্যা, বোয়াল, শোল, গজার, পুঁটি, বাইল্যাকড়া, টেংরা, রানি- আরও কত কী! সেসব মাছ ধরতে কুচ, হাত্তর, উছ্, তোরকুচ, জাল হাতে নেমে পড়ে বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তি থেকে শুরু করে শিশু-কিশোরেরা।

মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জামের ব্যবহার:

জেলেদের তো আর কায়দার শেষ নেই। মাছ ধরার বিভিন্ন উপায়ও কব্জা করে নেয় তারা। মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জার হিসেবে এ সময় জেলেরা ব্যবহার করে মইয়াজাল, ঠেলাজাল, বিটে, চল, আন্টা, তোরকোচ, চাঁই, ছিপ, বড়শি ইত্যাদি। একেকজন জেলে একটি কৌশল ব্যবহার করে। যে যে সরঞ্জামে প্রশিক্ষিত সে তা ব্যবহার করেই মাছ ধরার কাজটি হাসিল করে নেয়।

জেলেদের গল্পে অতিত র্বতমান:  

বাচ্চু মিয়া। জীবনের পাঁচ যুগ কেটেছে মেঘনা নদীতে মাছ ধরে। বয়সের ভারে এখন আর গতর খাটিয়ে মাছ ধরতে সাহস পান না, সায় দেয় না সত্তুরের শরীর। যৌবনে সেই মাছ ধরার গল্পটি বলতে বলতে চোখ ঝাপসা করে ফেলে বাচ্চু মিয়া। 

[media type="image" fid="128476" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তিনি বলেন, জন্মের পর থাইক্কাই মাছ ধরা শুরু করি বাপের সাথে। বাপ মা ছিল গরীব মানুষ মাছ ধরা ছাড়া আর কোন বাও (উপায়) আছিল না। ১০ বছর থেইক্কা বাপের লগে মাছ ধরা শুরু করি। আগে এহনের মতো এত কিছু আছিল না। চাঁই, আন্টা, মইয়াজাল এইগুলা দিয়া মাছ ধরতে হইতো। এহন তো কত ডিজিটাল জিনিস দেখা যায়। এখন মাছ ধরতেও কষ্ট কম লাগে। আগের দিনগুলা অনেক মনে পরে। দিন নাই রাইত নাই খালে বিলে নাও (নৌকা) লইয়া গেছিগা। যেনে হুনছি মাছ পরতাছে বেশি গেছিগা। এহন আর পারি না। গায় গতরে আর সায় দেয় না। মাছ মারতে মারতে এক সময় মাছে লগে সর্ম্পক হইয়া যায়। চাইলেও আর ছাড়ন যায় না।

মাছ মারার গল্পে ঠাঁই করে নেয় যুবক কাউসার আহমেদ। বয়স ২৫ কিংবা ২৬। কাউসার মেঘনা নদীতে মাছ ধরছেন ১৫ বছর বয়স থেকে। তিনি বলেন, মাছ ধরা আসলে ভালোলাগার বিষয়। মাছ ধরতে যদি আপনার নেশা না থাকে তাহলে আপনি মাছ ধরতে পারবেন না। মাছ ধরতে থাকতে হয় ধৈর্য, রোদ-বৃষ্টি সব কিছুই আপনার সইতে হবে। আমি মাছ ধরা শুরু করি আমার বয়স যখন ১৫ বছর। আব্বার লগে মাছ ধরতাম। এখন আব্বার বয়স হইছে গাঙ্গে আসতে দেই না আমিই ধরি। বর্ষা কালে বেশি মাছ ধরা যায়। কারণ তখন খালে বিলেও পানি যায় নতুন নতুন মাছ পাওয়া যায়। চাঁই, আন্টা দিয়া খালের মাছ ধরা যায়। আবার রাতের বেলা চল দিয়ে নদীতে খালে মাছ ধরা যায়। তবে আগের চেয়ে এখন মাছ ধরার কষ্ট কমেছে কিছু। নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হইতাছে। পড়াশোনা করেছে কি না তা নিয়ে কাউসার বলেন, গরীব মানুষ আব্বা বেশি পড়াইতে পারে নাই। অষ্ঠম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ছি। আর পড়তে পারি নাই। 

যেমন আয় হয় বর্ষায় জেলেদের:

সাধারণত বর্ষা মৌসুমে নানা ধরনের মাছ পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে পাঁচমিশালী ভাবেই বিক্রি করা হয়। পাবদা, শোল, গজার, বাইল্যা সব ধরনের মাছই গ্রামে জেলেরা থালা অনুযায়ী বিক্রি করে মাঝে মাঝে কেজি ধরেও বিক্রি করে থাকে। থালা প্রতি বিক্রি হয় ২০০-৫০০। মাছের ধরন ও পরিমাণের উপর ভিত্তি করেই এক সাথে দাম ধরে দেয় জেলেরা।

[media type="image" fid="128475" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

জেলেদের সাথে কথা বললে জানা যায়, প্রতিদিন তাদের এ সময় আয় হয় ১০০০-১৫০০ টাকা। মাছ যেদিন বেশি ধরতে পারে সেদিন বেঁচা কেনাও হয় বেশি। নদীতে মাছ না পেলেও খালে-বিলে মাছ ধরার সুযোগ আছে বলে উপার্জন কোনদিনই বাদ যায় না তাদের। 

সবশেষে আসে নিদিষ্ঠ স্থানে মাছ বিক্রির ধুম:

গ্রামের জেলেদের ধরা মাছ বিক্রি করার জন্য সবচেয়ে বড় জায়গা হলো পাড়া বা মহল্লার হাট-বাজার। হাট-বাজারেই বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে মাছ কিনে নিয়ে যায়। আবার মাছ ধরার সাথে সাথেই অনেক পাইকার নদী থেকেই কিনে নিয়ে যায়। আবার গ্রামের বসবাস করা পাড়া প্রতিবেশিদের বাড়ি বাড়ি এসেও তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ বিক্রি করে থাকে তারা। তাতে খানিকটা কম দামেও মাছ কেনার সুযোগ হয় তাদের।

আমারসংবাদ/জেআই