Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার প্রস্তাব বিশ্ব ব্যাংকের, ঢাকা রাজি নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ২, ২০২১, ১১:৪০ এএম


রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার প্রস্তাব বিশ্ব ব্যাংকের, ঢাকা রাজি নয়

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত বা রেখে দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবে ঢাকা রাজি নয়।

সোমবার (২ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে, এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, ১৬টা দেশের জন্য। যে সমস্ত দেশে রিফিউজি আছে সেখানে তাদের হোস্ট কান্ট্রিতে ইন্টিগ্রেট করার বিষয়ে। যেহেতু রোহিঙ্গারা রিফিউজি না, আমরা এটা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। এই রিপোর্টের সঙ্গে আমাদের চিন্তাভাবনার মিল নেই। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একমাত্র পথ হচ্ছে নিজের দেশে ফিরে যাওয়া। আমরা তাদের ক্ষণিকের জন্য আশ্রয় দিয়েছি। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছে বিশ্ব ব্যাংক তাদের প্রস্তাবিত রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্কটি মতামতের জন্য পাঠায়। চিঠিতে বিশ্ব ব্যাংক জানায়, বিশ্বব্যাংকের এই রিফিউজি পলিসি রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য দেশে অবস্থিত সব উদ্বাস্তুর জন্য প্রযোজ্য। প্রতিবেদন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব মেনে না নিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ড. মোমেন বলেন, আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র মিয়ানমারও বলেছে তাদের নিয়ে যাবে। চার বছরে এখনও যায়নি। মিয়ানমার কিন্তু কখনও বলেনি নেবে না। তারা এখানে ক্ষণস্থায়ী। আমরা এখানে আশ্রয় দিয়েছি। বিশ্ব ব্যাংক যে রিপোর্ট করেছে সেখানে রিফিউজির কথা বলেছে। রোহিঙ্গারা রিফিউজি না। আমরা এটা জানতাম না। আমরা এটা জেনেছি ইউএনএইচসিআর থেকে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে ধরে ইউএনএইচসিআর বলেছে, তাদের যেন সব ধরনের নাগরিক সুবিধা; যেমন: বাংলাদেশিদের মতো কাজ করতে পারে, চলাফেরার লিগ্যাল মুভমেন্ট পায়, জমিজমা কিনতে পারে, নির্বাচন রাইট দিতে হবে নাগরিকের মতো। দেশের সব ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। রোহিঙ্গারা সেই শর্তের মধ্যে পড়ে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংক যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে এটা দীর্ঘমেয়াদি। আমরা এটার পক্ষে না। আমরা আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। বলেছি, আমরা এটা গ্রহণ করি না। আমরা নাকচ করার পর ওদের সঙ্গে একটা সমঝোতা হচ্ছে, যেগুলো আমরা অপছন্দ করি সেগুলো বাদ দিয়ে একটা চুক্তি করবো। আমাদের যে ক্ষণস্থায়ী চিন্তাভাবনা, সেটা অনুযায়ী তারা রাজি হলে চুক্তি করবো।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য একটা বাড়তি চাপ থাকবে বলেও মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত এটা নিয়ে তারা আমাদের একটা চাপে রাখবে। টাকা দিতে ঝামেলা করবে। তারাতো আমাদের পয়সা দেয় না। রোহিঙ্গাদের নামে যে টাকা আসে সেটার চেহারাও আমরা দেখি না। আসা অর্থ খরচ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউএনএইচসিআরসহ এরা সবাই। এরা কিভাবে টাকা খরচ করে সেটাও আমাদের জানায় না।

বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জন্য অর্থ এলেও সেগুলো রোহিঙ্গাদের দেখভাল করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের (রোহিঙ্গাদের) নামে বরাদ্দ করে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করেন ড. মোমেন।  

রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের ৭৬তম জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেবেন। এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন সীমিত আকারে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে এ অধিবেশনে যোগ দেবেন।

তিনি জানান, আগামী ২১-২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মূল অধিবেশন হবে। এতে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হবে না। তিনি তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার কারণে দীর্ঘদিন বিদেশ সফরে যাননি। এবার তিনি ১৯ মাস পর বিদেশে যাচ্ছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, আগামী ৭ থেকে ১৪ আগস্ট এক সপ্তাহে ১ কোটি টিকা দেওয়া হবে। প্রতি সপ্তাহে ১ কোটি টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। সে অনুযায়ী আগামী দুই মাসে ৮ কোটি টিকা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় জনসন টিকা পাওয়ার জন্য আশা করছি। তবে জনসন টিকার দাম বেশি বলে কেউ সেটা কিনে দান করতে চাইছেন না। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আমারসংবাদ/জেআই