নিজস্ব প্রতিবেদক (অনলাইন)
জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৩:৩১ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক (অনলাইন)
জানুয়ারি ১১, ২০২৩, ০৩:৩১ পিএম
মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সুযোগ পেলে লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলবে। তিনি বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হওয়ার পরও বিএনপি অফিসিয়াল রেকর্ড থেকে তাকে সাসপেক্ট করেনি। তারা এখনো সুযোগের অপেক্ষায় আছে। যদি সেই সুযোগ পায় বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে একদিনে মেরে ফেলবে। দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করবে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন তাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তাদের জেলে পাঠাবে। মৃত্যুদণ্ড দিবে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রীতি বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বিপ্লবী, জাতীয়তাবাদী, ক্ষণজন্মা নেতা ছিলেন। বিপ্লবের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল ছাত্র জীবন থেকে। যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি সেই বাংলাদেশের রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যদি তিনি ১০ জানুয়ারি ফিরে না আসতেন তাহলে আমাদের বিজয় অসম্পূর্ণ থাকতো। তিনি যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন সেদিন বাংলাদেশ পরিপূর্ণতা পেয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বিনাশ হয় না, কোন একজন খ্যাতিমানের মৃতুর মধ্যে দিয়ে সবকিছু বিনাশ হয় না। বঙ্গবন্ধু একটি বিশ্বাস, দর্শন, আর্দশ, পথচালার পাথেয় ও অবিনাশী সত্বা। বিশ্বের নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, নিপীড়িত মানুষরা যখনই পথ হারাবে, পথ খুজতে হলে বঙ্গবন্ধু জীবনালেখ্য, তার সংগ্রামী জীবন থেকে তার অনুপ্রেরণা খুজে পাওয়া যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নির্মাণে তার কন্যা শেখ হাসিনা দ্রুত গতিতে কাজ করে চলছেন সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দাঁড়ানো, উন্নয়নকে অভিষ্ট লক্ষে নিয়ে যাওয়া, সংবিদানের ১৫ অনুচ্ছেদ জনগনের মৌলিক অধিকার ও সকল সম্পদের মালিক হবে জনগণ যেটা উল্লেখ আছে সেটা জনগণকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনেকটা সফল।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কয়েকজন রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁসি দিয়ে সমস্ত সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বিনাশ করতে পারনি। সাম্প্রতিক শক্তির উত্তরসুরীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে- রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাহিনীতে- সব জায়গায় এখনো তারা বিরাজ করছে ছদ্মবেশে। কেউ কেউ নব্য আওয়ামী লীগার হয়েছে, কেউ কেউ আমাদের চেয়ে বেশি জয় বাংলা স্লোগান দেন। কিন্তু মৌলিক চরিত্র তাদের ভিতরে সুপ্ত আছে। সময় হলে তারা সেই চরিত্র নিয়ে আবার হাজির হতে পারে। তাই ১০ জানুয়ারিকে উদযাপন করা সময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষের ঐক্য দরকার।
মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী বলেন, যখন নির্বাচন সামনে আসে তখন নৌকাকে ঠেকানোর জন্য আওয়ামী বিরোধী ও আওয়ামী লীগ দুইটি গ্রুপ হয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নানাজন নানা দল করে, কিন্তু ভোট আসলে বাম প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এক হয়ে যায়। তারা নৌকা বিরোধী নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। মুক্তিযোদ্ধের চেতনা ঠেকানোয় তাদের মুল লক্ষ্য।
বিএনপি সুযোগের অপেক্ষায় আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা সেই বাংলাদেশ যেখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হওয়ার পরও বিএনপির অফিসিয়াল রেকর্ড থেকে সাসপেক্ট করা হয়নি। তারা এখনো সুযোগের অপেক্ষায় আছে। যদি সেই সুযোগ পায় বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ একদিনে মেরে ফেলবে। দেশকে সাম্প্রদায়িল রাষ্ট্রে পরিণত করবে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন তাদের অপরাধী হিসেব চিহ্নিত করা হবে। তাদের জেলে পাঠাবে। মৃত্যুদণ্ড দিবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক পীযুষ বন্দোপাধ্যয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার। বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক অধ্যাপক ড. বিমান বড়ুয়া সহ প্রমুখ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশে না ফিরলে কি হতো। তাকে ২৬ মার্চ গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের কারাগারে রাখা হলো। তার বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে তিনটিই ফাঁসি দেওয়ার মত। কিন্ত জাতির জনককে বাঁচিয়ে রাখা হলো। এসব নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। পাকিস্তানি লেখকসহ অনেকের বই থেকে আমরা জানতে পারি, পাকিস্তানি শাসকরা কখনো চিন্তাও করতে পারেনি এত দ্রুত যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকলেও পুরো যুদ্ধই পরিচালিত হয়েছে তার নামে। অথচ আমরা জানতাম না বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন, না মেরে ফেলা হয়েছে? তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে তার ভাষণে দুইবার বলেছিলেন, যড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি হবে সেটাও তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে আমাদেরকে সেই দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। কত রক্ত ও আত্মহুতির বিনিময়ে এই দেশের জন্ম হয়েছে, তা নতুন প্রজন্ম জানাতে হবে। কারণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ও গণহত্যার সমর্থকেরা বেশ সক্রিয়। তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।
জিনাত হুদা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের দিন যে বিজয় পতাকে উড়েছিলো, সেদিন এক ধরনের বিষন্নতা ছিলো। কারণ তখনও এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রুপকার বঙ্গবন্ধু এসে পৌঁছাননি। ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে আসার মাধ্যমে সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণতাদান করেছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তিত্ব ছিলেন যার ডাকে এদেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে, ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এমন একজন ছিলেন যাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা বলে অখ্যায়িত করছেন।
কেএস