Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

প্যাডেল চলে সংসার চলে না

মার্চ ২২, ২০২১, ০৬:১০ এএম


প্যাডেল চলে সংসার চলে না

জীবন মিয়া। পেশায় রিক্সাচালক। ঢাকা শহরের অলি-গলিতে চিক্সার প্যাডেল চেপে উর্পাজন করেন দিনে চারশ থেকে পাচঁশ টাকা। তা থেকেই রিক্সার মহাজনকে জমা দিতে হয় দিনে দুইশ। মহাজনের জমা বাদ দিয়ে রিক্সাচালক জীবন মিয়ার প্রতিদিনের আয় দু থেকে তিনশ টাকা। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বি হওয়ায় স্বল্প এ আয় দিয়ে আট সদস্যের পরিবারে প্রতিদিনের আহারটুকু মেটানোই যেন রীতিমতো দায় হয়ে দাড়িঁয়েছে জীবন মিয়ার। জীবন মিয়ার মতে, রিক্সার প্যাডেল চললেও সংসার চলে না তার।

করোনাকালিন  এসময়ে দফা দফায় বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্যের দাম। দাম আকাশচুম্বি হলেও নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষের উর্পাজন ঠেকেছে তলানিতে। প্রতিদিনই পণ্যের দাম প্রায় কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

দ্রব্যের মূল্যের এ উর্ধগতিতে নাকাল নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেনির মানুষ। বিশেষ করে গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক, শ্রমিক সহ সকল পেশাজীবি মানুষ। পণ্যের দামের কাছে নিম্নবিত্ত এ শ্রেনির মানুষদের উর্পাজন যেন তলিয়ে। 

এখন বাজারে কেজি প্রতি যেকোন কাঁচা সবজির সর্বনিম্ন দাম ৪০-৫০ টাকা, পেয়াঁজের দাম ৪০ -৫০টাকা, আলু কেজি প্রতি ২০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম যেন আকাশচুম্বি লিটার প্রতি ১৩০-১৫০ টাকা। অধিক এ দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করাই যেন দায় হয়ে দাড়িয়েঁছে হাজারো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেনির জন্য। 

প্রতিবছর রমজান এর আগমূহুর্তে এক শ্রেনির মুনাফাভোগী অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম উপযোগ তৈরি করে বাজারে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করে। যার ফলে নাকানিচুবানি খেতে হয় নিম্নবিত্ত শ্রেনির মানুষের।

পণ্যদ্রব্যের দামে নাকাল হওয়া রিক্সাাচালক জীবন মিয়া বলেন- সারাদিন রিক্সা নিয়া ঘুইরা কামাই করি ২০০ টাহা। সংসারে আমরা মানুষ আট জন। ২০০ দিয়া খামু কি। বাজারে আইলেই কলিজায় পানি থাহে না। মাছ মাংস তো মাসে দুই একবার ও পুলামাইয়াগো খাওয়াইতে পারিনা। আর এহন সবজির দাম এত বাড়ছে কোন কিছু কিইন্না আর কুলাইতে পারি না।

তিনি আরো বলেন, বউযের বুকের ব্যাথা কদিন ধইরা বাড়ছে। ভালা ডাক্তার দেখামু কি নাপা টেবলেট ও প্রতিদিন কিনতে পারি না। গরম পানির ভাপ দিয়াই কোন রকমে চালাইতাছি। আবার ছোট মাইয়াডা চায় কন্ট্রোল গাড়ি না কি জানি কয় হেই গাড়ি কিইন্না দিতাম। ঘরে মায় ও রোগী। 

ছোট মাইয়াডার কাছ থেকে কয়দিন ধইরা পলাইয়া থাহি। যেই টাহা কামাই করি চালই যদ্দুর লাগে কিনতে পারি না। মাইয়াডারে গাড়ি কিইন্না দিমু কেমনে। আমগো কথা কি আর মানুষ হুনবো। 

আমরা রিক্সাচালাই গরিব মানুষ খাই না খাই হেই খবর কি কেউ লয়? সামনে রোজা আইতাছে পানি খাইয়াই রোজা রাখতে হইবো। সারাদিন ঘুইরা রিক্সার প্যাডেল মারলেও সংসার চালাইতে পারি না।

রিক্সাচালক জীবন মিয়ার সাথে কথা বলার প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয় স্কুল শিক্ষক রমিজ মিয়ার সাথে তিনি বলেন, ২০ টাকার শাক ৪০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়, তেল আর পেয়াঁজ তো স্বর্নের মতো। হাত দেয়া যায় না। 

দ্বিগুন টাকা দিয়ে এখন একই জিনিস কিনতে হয়। যেই টাকা উপার্জন করি এমন হয়েছে যে কয়দিন পর না খেয়ে মারা যেতে হবে। গরীব মানুষ আমার মারা গেলে কোন ক্ষতি হবে না দেশের। বউ বাঁচ্চা নিয়ে কষ্টে থাকি। দেখার তো আর কেউ নেই।

সবজি বিক্রেতা আমানুল্লাহ বলেন, আমরা কি করুম। আমাদের সবকিছু বেশি দামে কিনতে হয় তাই আমরাও বেশি দামে বিক্রি করি। দাম তো আমরা বাড়াই না দাম বাড়ায় পাইকাররা। কম দামে কিনতে পারলে আমরা কম দামে বিক্রি করি। আমাদেরও তো সংসার আছে।

আমারসংবাদ/এআই