Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

অচল ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

জানুয়ারি ১৪, ২০১৬, ০৮:২৬ এএম


অচল ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

যেখানে বলা হয় যে, শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড স্বরূপ। এমনকি শিক্ষার পরিবেশ যথাযথভাবে নিশ্চিত না হলে তার খেসারত দিতে হয় পুরো জাতিকে। অথচ যদি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোই বন্ধ থাকে তখন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা দুঃখজনক। আর তা এ কারণে যে, কোনো সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। কিন্তু যখন ক্ষতির শিকার হচ্ছে বিপুলসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী, তখন সে পরিস্থিতির ভয়াবহতা কোনো অংশে কম নয়।

তথ্যমতে জানা যায়, বেতন কাঠামোয় ‘অসঙ্গতি নিরসনের দাবিতেই মূলত শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে দেশের ৩৭ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে পড়েছে। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সোমবার সকালে পূর্বঘোষিত এ লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়। ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক জানিয়েছেন, দেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা প্রশাসনিক কোনো দায়িত্বও পালন করছেন না।

এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও কোথাও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। ফলে এটা স্বাভাবিকভাবেই বোধগম্য যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পরিস্থিতি হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা কতটা সংকটাপন্ন অবস্থাকে নির্দেশ করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

আমরা বলতে চাই, শিক্ষকদের দাবির ন্যায্যতায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। কিন্তু কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি প্রত্যাশিত নয়। একই সঙ্গে আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না করে আলাপ-আলোচনাসাপেক্ষে বিষয়টির সুরাহা করা সম্ভব হয় কিনা তা সরকার এবং শিক্ষক উভয় পক্ষকেই ভেবে দেখতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার, সময় চলে গেলে শিক্ষার্থীর যে ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে নেয়ার কোনো উপায় নেই।

ফলে যদি তারা সেশনজটে পড়েন, ফলাফল খারাপ হয় তবে এর দায় কে নেবে? এ প্রশ্নকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না যে, এ আন্দোলন কিংবা শিক্ষকদের যে দাবি এবং সরকারের অবস্থান সব কিছু মিলিয়ে যে সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে তার শিকার কেন শিক্ষার্থীরা হবেন? এটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, বিভিন্ন ইস্যুতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকছে। আর যার শিকার হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। নানা সময়ে যেমন দেখা গেছে সহিংস পরিস্থিতি, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, শিক্ষদের দুই পক্ষের মতবিরোধকে কেন্দ্র করে অচলাবস্থাসহ এমনসব ঘটনা ঘটেছে যার ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কিন্তু তার পরে সংকট কাটলেও সময় তো ফিরে আসেনি।

ফলে শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতির বোঝা বহন করতে হয়েছে। প্রসঙ্গত এটা উল্লেখ্য, এবারের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট মূলত শুরু হয়েছিল গত বছরের মাঝামাঝিতে অষ্টম বেতন কাঠামো প্রস্তাবের পর থেকেই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নানা কর্মসূচিতে নিজেদের ‘মর্যাদাহানি ও সুবিধা কমে যাওয়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি গত মাসে বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশের পর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে সরকার একটি কমিটিও গঠন করে।

কিন্তু এখনো দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি এমন তথ্যই জানা যাচ্ছে। আর যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সোমবার থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন হবে এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে তখন এ পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে দ্রুত এর সমাধান হবে, এমনটি কাম্য।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দ্রুত যে কোনো উপায়ে এর সমাধানের পথ সৃষ্টি করুন। শিক্ষক ও সরকারকে এ বিষয়টিতে সমাধানে পৌঁছাতেই হবে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো যদি কার্যত অচল হয়ে পড়ে, তবে তার ক্ষতি কতটা ভয়ানক তা শিক্ষক এবং সরকারপক্ষ কারোই অজানা নয়। ফলে যে পরিস্থিতির দায় শিক্ষার্থীদের নয়, তাদের যেমন ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হবে, তেমন সরকার শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণ পর্যবেক্ষণসাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব এ সংকট নিরসনে উদ্যোগী হবে, এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।