জানুয়ারি ১৮, ২০১৬, ০৭:৫৬ এএম
রাজধানী ঢাকায় প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভাড়া বাসায় জীবন যাপন করে। প্রতিদিনই তাদের নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সব দুর্ভোগ ছাপিয়ে যায় যে দুর্ভোগটি তা হলো বাড়িভাড়া কিংবা বাড়িওয়ালার স্বেচ্ছাচারিতা। এমনিতেই চাকরিজীবীদের বেতনের একটি বড় অংশ দিয়ে দিতে হয় বাড়িভাড়ায়। তার ওপর বছর না ঘুরতেই বাড়িয়ে দেওয়া হয় ভাড়া। বেড়ে যায় সার্ভিস চার্জ। যুক্ত হয় নানা রকম শর্ত। চারজনের বেশি থাকা যাবে না। বেশি মেহমান আসতে পারবে না।
নির্দিষ্ট সময় বা পরিমাণে পানি দেওয়া হবে, তাতে কারো প্রয়োজন মিটুক বা নাই মিটুক। প্রতিবাদ করার উপায় নেই। প্রতিবাদ করলেই সাফ জবাব, বাড়ি ছেড়ে দিন। প্রতিকার চাওয়ারও কোনো জায়গা নেই। না সিটি করপোরেশন, না থানা পুলিশ, না অন্য কোনো বিভাগ বা সংস্থা। কাজেই ঢাকা মহানগরে ভাড়া বাসায় বসবাস করা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের সামনে চোখ-কান বন্ধ করে বাড়িওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারিতা নীরবে হজম করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শুধু ঢাকাই বা কেন? চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বড় শহরগুলোতেও প্রায় একই অবস্থা। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে বাড়িভাড়া।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী গত ২৬ বছরে ঢাকায় বাড়িভাড়া বেড়েছে ৩৮৮ শতাংশ। আর গত পাঁচ বছরেই ভাড়া বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। ২০১০ সালে যে বাসার ভাড়া ছিল ১১ হাজার ৩০০ টাকা, সেই বাসার ভাড়া এখন হয়েছে ১৮ হাজার ১৫০ টাকা। সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে (যদিও তাঁদের অনেকেই সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন) আর এই বেতন বৃদ্ধির সুবাদে বাড়িওয়ালারা আরেক দফা বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন সেই ভাবে বাড়েনি বললেই চলে। তাঁরা কিভাবে এই বাড়িভাড়া বহন করবেন? বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯১ সালে আইন প্রণয়ন করা হলেও আজ পর্যন্ত তার কোনো প্রয়োগ দেখা যায়নি। আইনে নির্দিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলে বাস্তবায়নের দায়িত্বও কেউ নেয় না। এমনকি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও অস্বীকার করে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে। তাহলে ভাড়াটিয়ারা যাবে কার কাছে? আদালতে যাওয়া যায়। সেখানেও আছে দীর্ঘসূত্রতা ও নানা রকম ভোগান্তি। তাই পারত পক্ষে কেউ সে পথেও পা বাড়ায় না।
তাহলে কি এই বিপুলসংখ্যক মানুষ এভাবেই দুর্ভোগ সহ্য করবে? ২০১৫ সালের ১ জুলাই হাইকোর্ট এক রিট আবেদনের রায়ে সারা দেশে এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্ধারিত ছয় মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকার সেই কমিশন গঠন করেনি। বাড়িভাড়ার নামে দেশব্যাপী এমন নৈরাজ্য চলতে পারে না। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।