Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

শুধু ব্যবসায়ী নয়, জ্ঞানীদের নমিনেশন দিন

জানুয়ারি ২২, ২০১৬, ০৯:৪৭ এএম


শুধু ব্যবসায়ী নয়, জ্ঞানীদের নমিনেশন দিন

একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী এমপির সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ দেশে ব্যবসায়ী এমপিদের হার উন্নত বিশ্বের চেয়েও দুই তিনগুণ বেশি।  বর্তমান সংসদের ৩০০ এমপির মধ্যে ২০৬ জনেরই পেশা ব্যবসা। সংরক্ষিত নারী এমপি নিয়ে ব্যবসায়ীর মোট সংখ্য ২১৪ জন। দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি দার্শনিক অভিমত রয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিমান চলে ফুয়েলে, দেশ চলে জ্ঞানে। এমন কি একশো বছরের অভিজ্ঞতা নিয়েও দেশ চালানো যাবে না, যদি জ্ঞান না থাকে।  দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন থাকতে হবে জ্ঞান, তেমনি থাকতে হবে অভিজ্ঞতা। সংসদ সচিবালয় থেকে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে এমন কথা উল্লেখ নেই যে তিনশো এমপির মধ্যে কতজন নতুন  এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এ কারণেই কি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এমপিদের কার্যকলাপ সম্পর্কে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর হাত ধরে  বাংলাদেশে শুরু হওয়া রাজনৈতিক দৃর্বৃত্তায়ন গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সময়েও অব্যাহত ছিল। এ কারণেই  রাজনীতি এখন  ব্যবসায়ীদের পকেটে ঢুকে গেছে। অনেকেই  রাজনীতিকে ব্যবসার হাতিয়ার  হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অর্থলিপ্সার এ সুযোগ তৈরি হচ্ছে গডফাদার, টেন্ডারবাজ এবং সুবিধাভোগী নেতা। স্বার্থের কারণে হচ্ছে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাস। ক্রমেই বর্বরতার দিকে চলে যাচ্ছে সমাজ।  তাহলে কি বলা যাবে, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে? নির্বাচনের পূর্বে দলের লোকজনকে যখন নমিনেশান দেয়া হয়, তখন প্রার্থীর কাছ থেকে নির্ধারিত অংকের টাকা নেয়া হয়।  টাকা দিয়ে যখন নমিনেশন নেয়া হয়, তখন অর্থ উপার্জনের সুযোগ তারা অবশ্যই গ্রহণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক।  সম্ভবত এ কারণেই  টিআইবি বলেছিল, সাতান্নবই ভাগ এমপি অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত। টাকা দিয়ে যখন নমিনেশান নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে দুর্নীতির  আশ্রয় নেয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে দুর্নীতিরও তো মাত্র আছে। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এক সময় যারা ক্ষমতায় ছিলেন এবং ক্ষমতায় আছেন, শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে তাদের অনেকের লন্ডন, মালয়শিয়া এবং সিঙ্গাপাুরে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। ক্ষমতায় থাকা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আছে। দর্শনে দেশপ্রেমের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তাতে অন্যান্য বিষয়গুলোর সাথে যে বিষয়গুলো থাকতেই হবে, তা হচ্ছে জ্ঞান, সততা, ন্যায়পরায়নতা এবং ত্যাগ। যে দুর্নীতির কথাগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এর মধ্যে এ সব বিষয়গুলো কি খুঁজে পাওয়া যাবে? এর মধ্যে  ত্যাগ আছে, তবে সে ত্যাগ নিজের স্বার্থে। এখন কি বলা যাবে কে দেশপ্রেমিক আর কে দেশপ্রেমিক নয়? প্রশ্ন জাগে না, একজন মানুষের কত টাকার প্রয়োজন? অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রেখে মারা গেছেন।  বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, যা তার পক্ষে ভোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তিনি যে কি পরিমাণ দেশের ক্ষতি করলেন এ বোধ কি তাদের মধ্যে কখনো সৃষ্টি হয়েছে? আমরা মনে করি,  দর্শনের  এ অভিমত যদি সঠিক হয়, তাহলে অর্থ সম্পদ দেখে নয়, জ্ঞানীদের নমিনেশন দিতে হবে। যারা কখনোই অনৈতিক কাজ করতে পারে না।