Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে চিন্তার ব্যাপ্তি বাড়তে হবে

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৬, ০৬:১৩ এএম


সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে চিন্তার ব্যাপ্তি বাড়তে হবে

জ্ঞান-মেধা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতি চালু করার ফলে শিক্ষার্থীদের জন্য নোট ও গাইড বইয়ের প্রয়োজন হবে না এবং এ কারণে সরকার নোট ও গাইড বই প্রকাশনা নিষিদ্ধ করেছে। সৃজনশীলতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকলেও, ছাত্র ছাত্রীদের চিন্তার দৌড় সম্পর্কে কিন্তু আমাদের ধারণা নেই। সৃজনশীলতা বলতে যে লেখার মধ্যে নিজের জ্ঞান-নির্ভর চিন্তার প্রতিফল ঘটে থাকে। যে লেখার মধ্যে নতুনত্ব থাকে। সেটাই হচ্ছে সৃজনশীল লেখা। এ জন্য তাকে জ্ঞানী হতে হবে। কিন্তু অন্যের লেখা বই পড়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা, এটাকে বলা হয় মেধা যাচাইয়ের পদ্ধতি। যে কারণে সৃজনশীলতার বিষয়টি একটি ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি। প্রথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে মুখস্ত করার কোনো বিকল্প নেই। এর মধ্য থেকে কিছু শিক্ষার্থী বের হয়ে আসতে পারে যারা সৃজনশীল লেখক হতে পারে। সবাই যদি সৃজনশীল লেখক হতো তাহলে সবাই কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখতে পারতো। সৃজনশীলতার সাথে যদি বিদ্যালয় শিক্ষার সম্পর্ক থাকতো, তাহলে প্রশ্ন উঠতে, নজরুলের কবিতার বই বিশ্ববিদ্যালয়ে কি করে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত হয়? কোনো শিক্ষক যদি নোট বা গাইড বই লিখে থাকেন, সেখানে অপরাধজনক কোনো বিষয় আছে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষকদের মধ্যে কোনো কোনো শিক্ষক গাইড বই লিখে বেশ আয় রোজগার করে চলছেন।’ তাতে দেশ এবং জাতির কি এমন ক্ষতি? অনেকেই কচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, কোনো অভিভাবক যদি তার ছেলেকে কচিং সেন্টারে ভর্তী করেন, অথবা তার ছেলের ভালো রেজাল্টের জন্য পাঁচ জন টিউটর রাখেন তাতে কারো কিছু বলার আছে? বিদ্যালয়গুলোতে সৃজনশীল পদ্ধতি নয়, বরং মুখস্ত পদ্ধতি চালু করতে হবে। মেধাবীরা কখনো সৃজনশীল লেখা লিখতে পারে না। তাই যদি পারতেন তবে সব সরকারী সচিবরাই বই লিখতেন। কাজেই বিদ্যার্থীদের মুখস্তের কোনো বিকল্প নেই। পরীক্ষয় অবজেকটিভ টাইপের প্রশ্ন পদ্ধতিও বাতিল করা প্রয়োজন। ইংরাজী শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। উপনিবেশিক আমলে ইংরাজী শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। পূর্বে ন্যায় এখন আর ইংরাজী শিক্ষার গুরুত্ব নেই। মধ্যবিত্ত ঘরের কোনো ছেলে লেখা পড়া শিখে বড় জোর একটা সহকারী পদে চাকরীর চিন্তা ভাবনা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কি ইংরাজী শিক্ষার কোনো প্রয়োজন আছে? অথচ শিশুকে হাতে খড়ি দেয়ার সময় বাংলা বইর সাথে এক খানা ইংরাজী বই ধরিয়ে দেয়া হয়। অভিভাবকরা এই ইংরাজী শেখানোর জন্য এক খানা লাঠি নিয়ে বসেন, মনে হচ্ছে তাকে ইংরাজী শিখিয়ে অক্সফোর্ড ইউন্যুভারসিটিতে পাঠবেন।
শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের হাতে যখন অস্ত্র তুলে দেয়া হয়, তখন বোঝা যায় শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়ে কোথায় পৌঁছে গেছে। গত কাল ‘দৈনিক আমার সংবাদ’এ প্রকাশিত উপ সম্পাদকীয়তে ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এ কথাটা আমরা ভুলে গেছি’ শিরো নামে লেখাটির এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘বোর্ডের নিদের্শ, কোনো শিক্ষার্থী যদি ৬০ নম্বরের মধ্যে যদি ১২ নম্বর পায় তাকে গ্রেস দিয়ে ১৫ নম্বর দিতে হবে। যাতে পুন:মূল্যায়নের সময় দ্বিতীয় দফায় তাকে ২০ নম্বর দিয়ে পাস দেখাতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী লিখিত ৬০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর পেলে শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান শিক্ষকের ব্যবহারিক ৪০ নম্বরের মধ্যে পূর্ণ নম্বর দিয়ে তাকে ৮০ মার্ক দিয়ে এ প্লাস করে দিতে হবে। এ রকম অবস্থায় কোন দিন যেন ঘোষণা দেয়া হয় যে, পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে যেতে হবে না। সে বাড়িতে বসেই এ প্লাস পেয়ে যাবে।
যেহেতু সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করা হয়েছে, ইংরেজি শিক্ষার তেমন প্রয়োজন নেই, এ ক্ষেত্রে ক্লাশ থ্রি থেকে এবিসিডির বই থাকবে। পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। একই সাথে বন্ধ করা প্রয়োজন সৃজনশীল পদ্ধতি। মুখস্ত পদ্ধতি চালু করতে হবে। জাতিকে পঙ্গু করা পদ্ধতি ১২ পেয়ে ৮০ নম্বর দিয়ে এ প্লাস দেয়ার পদ্ধতিও বাতিল করতে হবে। নতুবা অপেক্ষা করতে হবে, জাতি পঙ্গু হতে আর কত দূর?