Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হবে

ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬, ০৯:২১ এএম


বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হবে

নদীমাতৃক বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস যেন ম্লান হতে যাচ্ছে নদীগুলো যেভাবে দখলে-দূষণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তাতে এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। বিশেষ করে বলা যায় ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গার কথা। দেশের মেরুদ- তথা রাজধানীই বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত। এই বুড়িগঙ্গাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে নদী বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার জীবনী স্রোত বুড়িগঙ্গা ‘বেপরোয়া ভরাট-দখল ও দূষণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে’ আখ্যা দিয়ে এই নদীর অস্তিত্বের হুমকি থেকে রক্ষায় ভরাটসহ সব ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’ (বাপা) ও ‘বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার’ নামে পরিবেশবাদী দুটি সংগঠন। তাদের দাবি, বুড়িগঙ্গার উৎসমুখ এবং নদীটির দ্বিতীয় চ্যানেল এখন মৃতপ্রায়।

দখলের জন্য নদী ভরাট করে একটি মহল স্কুল নির্মাণসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে তুলেছে। নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেটসহ বসতবাড়িও। তাই বুড়িগঙ্গা নদীর দুটি শাখার পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে ভূমিদস্যুদের দখলবাজি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের নির্লিপ্ততা এবং নাগরিক সচেতনতার অভাব বুড়িগঙ্গাকে মৃতপ্রায় করে তুলেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে নদীটি আর রক্ষা করা যাবে না। বক্তারা এই আশঙ্কার কথাও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। বুড়িগঙ্গার প্রাণধারা আহরণ করেই গড়ে উঠেছে ঢাকা। কিন্তু সারাদেশের নদীগুলোর মতো বুড়িগঙ্গাও দখল ও দূষণে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- যে হারে নদী দূষণ চলছে, এটা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে এক সময় ঢাকা পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেতে পারে।

নদী দখলের বিরুদ্ধে স্বয়ং সরকার এবং দেশের উচ্চতর আদালত পর্যন্ত সোচ্চার। পরিবেশবাদী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থা নদী দখলমুক্ত করার জন্য আন্দোলনসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে-এমন সংবাদ আমরা প্রায়শই পত্র-পত্রিকায় দেখছি। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযানের কথাও শোনা যায়। উচ্ছেদ অভিযান, নদী খনন, নদীর তলদেশ পরিষ্কার করার নামে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করার অভিযোগও আছে। কিন্তু প্রতিকার নেই। রাজধানী ঢাকার চারপাশে চারটি নদী। শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদী। সব নদীর অবস্থা একই রকম।

তবে সবচেয়ে নাজুক বুড়িগঙ্গার অবস্থা। নদীটি দখল হতে হতে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একে রক্ষায় ত্বরিত পদক্ষেপ না নিলে কয়েক বছর পর বুড়িগঙ্গাকে মানচিত্রেও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে। নদীর সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক গভীর। পৃথিবীর বেশিরভাগ সভ্যতাই গড়ে উঠেছে নদীতীর কেন্দ্রিক। কোন দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদ-নদীগুলো নাব্য হারালে বা অকাল মৃত্যুর শিকার হলে সে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকাও অনেকাংশে নদীনির্ভর।

এমনিতেই বুড়িগঙ্গা নদীতে নির্বিচারে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পানি দূষিত ও বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে। তারপর দখলের কারণে নদীর গতিপথ বদলে যাচ্ছে। এতে গড়ে ওঠা জনপদ বিলীন হচ্ছে। নদী দখল হওয়ার কারণে বর্ষায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। স্বাভাবিক চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতার কারণে। পরিবেশবাদীরা বলে আসছেন নদী বাঁচলে নগরী বাঁচবে। সরকার তথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি সত্যিকারের উদ্যোগ নেবে বুড়িগঙ্গাকে দূষণ-দখলমুক্ত করতে ও নগরীকে বাঁচাতে? ঢাকাকে বাঁচাতে বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।