Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪,

তনু হত্যার দ্রুত তদন্ত হোক

মার্চ ৩০, ২০১৬, ০৮:০৬ এএম


তনু হত্যার দ্রুত তদন্ত হোক

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে হত্যা করা হয়েছে কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট এলাকায়। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন কুমিল্লা সেনা নিবাস এলাকার কালাপানির ট্যাংকির কালভার্টের পাশ থেকে গত সোমবার রাতে (২০/০৩/১৬) তনুর লাশ পাওয়া যায়। তনু শুধুই ছাত্রী ছিলেন না, ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী। তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। আমাদের সমাজ এমনিতে এখন পর্যন্ত নারীর অবাধ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ভাব খানা এমন যে, নারীকে চিরকাল হেজাববন্দি করে রাখতে পারলেই দেশের সব লোক জান্নাতবাসী হবে। চারদিকে হেজাবীদের কর্কশ চিৎকার শুনতে পাচ্ছি আমরা। এর মধ্যে একটি স্পর্শকাতর এলাকায় সোহাগী জাহান তনুকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এই অমানবিক ঘটনায় সারা বাংলাদেশ প্রতিবাদ মুখর হয়েছে। রাজপথে নেমে এসেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগ থেকে রোড মার্চ করে কুমিল্লা তনু হত্যার স্পটে গিয়েছে এই বর্বরতার প্রতিকারের দাবি অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে। সোশাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এখন সারা দেশের প্রতিবাদের প্লাকার্ড হয়ে হাজার মানুষের হাতিয়ার হয়েছে সোহাহী জাহান তনু। নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি আজকের নয়, নারী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাও নতুন নয়, দীর্ঘ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। তনুর ঘটনায় আজ যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, এর আগে দিনাজপুরের ইয়াসমিন হত্যার ব্যাপারেও বাংলাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিলো। দুর্বৃত্ত একদল পুলিশ ইয়াসমিনকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছিলো। এর আগেও রাজশাহীর নিহার বানুকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়েছিলো দুর্বৃত্তরা, তার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিলো বাংলাদেশ। শহীদ সাংবাদিক নিজামুদ্দীনের কন্যা রীমাকে হত্যা করেছিলো কোটিপতি দুর্বৃত্ত মুনীর। জনগণ প্রতিবাদী না হলে কোটিপতি মুনীরের ফাঁসি হোত না। তনু হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়েছে প্রগতিশীল, মানবতাবাদী এবং সেক্যুলারপন্থী সংগঠন, তথা ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ। কেননা মানব ধর্মই বড় ধর্ম। তনু হত্যার ভেতর দিয়ে মানবতা লংঘনের কাজটি হয়েছে। দ্বিতীয বিশ্বযুদ্ধে, ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিলো, মানবতা লংঘনের কাজ হয়েছিলো। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর জঘন্য, পৈশাচিক কায়দায় নারী ও শিশু ধর্ষণ করা হয়েছিলো। দুর্বৃত্তদের অসহায় এক জননী বলেছিলো, বাবারা আমার মেয়েটা ছোট, তোমরা একজন একজন করে যাও।তনু হত্যার বর্বরতা আর ২০০১ এর কিশোরী ধর্ষণের বর্বরতার মধ্যে পার্থক্য নেই। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে কেনা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা বুক চাপড়িয়ে অনুতাপ করছি যে, আজো নারী ধর্ষণ, কিশোরী ধর্ষণের বর্বরতা থামলো না। এর কারণ ধর্ষক পান্ডারা অপকর্ম করে বিচক্ষণ চাতুর্যের সঙ্গে পার পেয়ে যাচ্ছে। বিচার হীনতার সংস্কৃতি তনু হত্যার ঘটনাকে অনিবার্য করে তুলেছে। কালো টাকার প্রভাব ভেতরে ভেতরে সমাজকে গ্রাস করছে, না হলে ধর্ষকরা জামিন পাবে কেন? যারা নারীকে তেতুঁলের সঙ্গে তুলনা করে বলে, নারী দেখলে আর তেতুঁল দেখলে জিভে পানি আসে তারাও নারী ধর্ষণের পক্ষে কৌশলে ফতোয়া বিতরণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দৃঢ়তার সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন, তনু হত্যার আসামীকে ধরা হবে, তার বিচার হবে। তার আশ্বাস বাস্তবায়ন হোক, আমরা তা চাই।