Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

দখলে-দূষণে বিপন্ন নদ-নদী কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

এপ্রিল ১২, ২০১৬, ১১:০৭ এএম


দখলে-দূষণে বিপন্ন নদ-নদী কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

নদী মাতৃক বাংলাদেশে নদনদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর শঙ্কা। এক দিকে উজানে সীমান্তের ওপারে বাঁধ তৈরি করে এক তরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ফলে বাংলাদেশের নদী গুলোতে দেখা দিয়েছে পানির সংকট। অন্য দিকে অতিরিক্ত পলি জমে নদী গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নানাধরনের শিল্প-বর্জ্যের দূষণে নদীর প্রাণবৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। পাশপাশি নদীর পাড় দখল করে কিংবা নদীর বুকেই চলছে অবৈধ নির্মান। ফলে বহু নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, নয়তো ধুঁকছে কঙ্কালের মত।

একটি সহযোগী দৈনিক জানিয়েছে যে, এ রকমই একটি মৃত প্রায় নদীকে কাছাকাছি থেকে দেখার জন্য বিবিসি প্রতিবেদক গিয়েছিলেন পাবনা জেলার চাট মোহর উপজেলায়। চলন বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া বড়াল নদীকে দেখলে বিশ্বাসই হবে না যে এটি একটি নদী।

এর বুকের ঠিক মাঝ বরাবর তৈরি করা হয়েছে একটি ক্রসড্যাঁম বা বেড়িবাঁধ। এটি একই সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে সড়ক হিসেবে। এই বাঁধ নদীটিকে মাঝ বরাবর কেটে দুই টুকরো করে ফেলেছে। বড়ালে পানি আছে। তবে প্রবহমান থাকে, বড়ালে তেমনটি নেই। নদীর পানি স্থবির। কচুরিপানায় ঢাকা। বেশ কয়েকটি বাঁধ এবং সুইসগেটের কারণে নদীটি খন্ড খন্ড হয়ে গিয়েছে। বড়াল দিয়ে এক সময় হাজার-১২শ’ মন মালবাহী নৌকা চলাচল করতো। চাটমোহর ছিলো ব্যস্ত এক বন্দর। চলন বিলের কৃষি পণ্য বড়াল হয়ে চালান যেত দূর-দূরান্তে। কিন্তু এখন সেই নদীর পানি পাখিও পান করে না।
যে নদীর কূলে এক সময় ছিলো বেশ কটি ব্যস্ত নদী-বন্দর, ৮০-র দশকের শেষ নাগাদ দেখা গেলো সেই নদীতে আর পানি আসে না। সরকারী হিসেব মতে দেশে প্রায় ৪০০ নদী থাকলেও এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক নদীতে শুকনো মৌসুমে কোন পানি থাকে না। ব্রিটিশ শাসনামলে জেমস্ রেনেল এই অঞ্চলের নদনদীর ওপর যে মানিচত্র তেরি করেছিলেন, তা থেকেও বোঝা যায় গত ২০০ বছরে বাংলাদেশের নদনদীতে বিপুল পরিবর্তন ঘটেছে।

দেশে মোট প্রধান নদীর সংখ্যা ৫৭টি। তিনটি নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে মায়ানমার থেকে। বাকি ৫৪ টি এসেছে ভারত থেকে। স্বাধীনতার পর বি আই ডব্লিউটি এর তরফে যে জরিপ হয়েছিলো তাতে জানা গিয়েছিলো বাংলাদেশে নদীপথের মোট দের্ঘ্য ২৪,০০০ কিলো মিটার। কিন্তু সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ৮০০০ কিলোমটিার। এ থেকে বোঝা যায় নদী গুলোর অবস্থা আসলে কেমন। অর্থাৎ প্রায় ৮ দশকে ১৬০০০ কিলোমিটার নদী পথ শুকিয়ে গেছে। নদী গবেষকদের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে গত ৪ দশকে ৫০ থেকে ৮০টা নদী, শাখা এবং উপনদীর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। নদীর মৃত্যুর পেছনে কিছু স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কারণ থাকে। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তা বাঁধের মত মানুষের তৈরি বাধার কারণেও মরে যাচ্ছে নদী। অন্য দিকে দেশের সীমানার মধ্যেই নদীকে সহায়হীন মনে করে চলছে দখল উৎসব। এমনই একটি ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন নদী বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তিনি জানান, কিছুদিন আগে তিনি ইছামতি নদীর ছোট সেতুর ওপর গিয়েছিলেন। তাকিয়ে দেখেন ভাটিতে নদীর মাঝখানে একটি ৬ তলা বিল্ডিং উঠেছে। অর্থাৎ দখল বাজরা নদীটিকে দখল করে ফেলেছ। ড. আইনুন নিশাত জানান, নদীর তলদেশের ভূমি খাস জমি। এই জমি উদ্ধার করা কঠিন নয়।

মানুষ তার লোভ ও মুনাফার টানে নদীর শুধু গতি পথই বদলে দিচ্ছে না, আঘাত করছে নদীগুলোর প্রাণ বৈচিত্র্যের। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বংশি, বালু, লৌহজঙ্গ কিংবা শীতলক্ষ্যার মত নদীগুলোর দুই ধারে যে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে, তার অপরিশোধিত বর্জ্য গিয়ে পড়ছে এসব নদীতে। ফলে বিষক্রিয়ায় মার যাচ্ছে নদীর প্রাণ। একজন নদী বিশেষজ্ঞ জানালেন, শীতলক্ষ্যা অলরেডি মারা গিয়েছে। শীত লক্ষ্যার পাড়ে গেলে দেখা যাবে পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান ন্যূনতম মাত্রার চেয়েও কম। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী খনন, পরিশোধন ও দখলমুক্ত করণের ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা হলো প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে নজর দেবার হয়তো সময় পান না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরিকল্পনা মোতাবেক নদীকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা, নদী সংস্কার উদ্যোগী হওয়া।