Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৩

এপ্রিল ১৫, ২০১৬, ০৫:৫৯ এএম


স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৩

আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৩ সাল। বাঙালির জাতীয় উৎসব। আজকের দিনে ধর্ম-বর্ণ- নাগরিক পরিচয় নির্বিশেষে যে যেখানে বাঙালি আছে, তারা প্রত্যেকে বাঙালির এই জাতীয় উৎসবে যোগদান করছে। অন্তত আজকের দিনে বাঙালিরা তাদের বিদেশি খোলস ত্যাগ করে বাঙালি হয়ে উঠেছে। ধর্ম যার যার উৎসব সকলের। বাংলা নববর্ষের যে বৈচিত্র্য, বৈশিষ্ট্য তা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলা নববর্ষ চালু করেছিলেন মোঘল সম্রাট আকবর। তিনি ছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয়বাদী, ধর্ম নিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদে বিশ্বাসী। খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য, ফসলী সন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন পয়লা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ। মহামতি আকবর বাংলা প্রদেশের বাঙালির জনগোষ্ঠীর নিকট থেকে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে এই নববর্ষ চালু করেন। তখন থেকেই হাল খাতার প্রচলন, উৎসব পালনের শুরু।স্বাধীন বাংলার সুলতানী শাসকরা খ--খ- বঙ্গ জনপদগুলোকে একত্রিত করে সুবেবাংলা গঠন করেছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। আর মহামতি আকবর আমাদের একটি জাতীয় উৎসব উপহার দিলেন। একজন মুসলমান নৃপতি নববর্ষের প্রবর্তক হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা নববর্ষের উৎসবকে বির্ধমী বলে অপবাদ দিয়েছে, হিন্দুআনী খুঁজেছে। বাঙালি মেয়েদের হলুদ শাড়ি, রঙিন পোষাক, কপালে টিপকে বাঁকা নজরে দেখেছে। বাঙালির যে কোনো উৎসবকে তাঁরা হিন্দুত্বের অপবাদ দিয়ে কটাক্ষ করেছে। আমরা যে কয়টি ধাপের সাংস্কৃতিক সংগ্রাম করেছি, পহেলা বৈশাখ তার মধ্যে একটি।বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বৈশাখ-বাংলা নববর্ষ সাংবিধানিক মর্যাদা পেয়েছে। আজ সরকারি ছুটি। সরকারি ভাবে গুরুত্বের সঙ্গে এই দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। ৩০ লক্ষ মানুষ অকাতরে রক্ত দিয়ে এই দিনটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মিলিত হওয়ার প্রত্যাশায় বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। শহরে-বন্দরে গ্রামেগঞ্জে এই দিনটিতে উৎসবে মেতে উঠছে মানুষ প্রাণের তাগিদে। গত পহেলা বৈশাখে দেখেছি ওপার বাংলার বাঙালিরা আর আমাদের বাঙালিরা সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে এক হয়েছিলো।একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছে, বুকে বুক মিলিয়েছে। বাঙালি যে অখ- জাতি, তা বাংলা নববর্ষের উৎসবের ভেতর দিয়ে প্রমাণিত। ড. মুহম্মদ এনামূল হক বলেছেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে নববর্ষ আছে, উৎসবও পালিত হয়। তবে তা ধর্মের রঙে নয় মর্মের রঙে রঙিন। রবীন্দ্রনাথ শুধু উৎসবের গুরুত্ব দেননি, পহেলা বৈশাখ নিয়ে গান লিখেছেন, কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের গান দিয়েই আমরা পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাই। বলি, ‘এসো এসো হে বৈশাখ।’ পহেলা বৈশাখের শত্রুর অভাব নেই। মৌলবাদীরা বাঙালির উচ্ছল, প্রাণবন্যায় আবর্তিত নববর্ষের উৎসবকে দু’চোখ পেতে দেখতে পারে না। তাইতো আড়ালে, আন্ডার গ্রাউন্ডে তারা বাংলা নববর্ষকে ভূলুন্ঠিত করে দেবার জন্য নাশকতার পরিকল্পনা করছে, এ খবর আমরা পত্র-পত্রিকায় পেয়েছি। গত বছর ঢাকা শহরে মানুষের ঢল নেমেছিলো পহেলা বৈশাখের দিনে। পথে-প্রান্তরে, বটমূলে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, উদ্যানে, নদীর পাড়ে উৎসব, মেলা, গান-বাজনা জমে উঠেছিলো। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নেমে এসেছিলো রাস্তায়। এই প্রাণের প্রবাহকে কালিমা লিপ্ত করেছিলো টিএসসিতে কতিপয় দুর্বৃত্ত একটি তরুণীর ওপর হামলা করে। সরকার তাই সতর্কতার প্রয়োজনে, উৎসব পালনে কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। সরকারের দায়িত্ব অঘটন সম্পর্কে সতর্ক হওয়া। এই বৈশাখে হিসেব মেলাতে হবে আমাদের জাতীয় উন্নতির, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার, শুভবুদ্ধির অগ্রগতির এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের। সকল অশুভ-অমঙ্গল, রক্তক্ষরণ, জাতিগত বিভেদ জাতীয় চেতনার খর উত্তাপে ধুয়ে মুছে যাক বাংলা নববর্ষে। বছর জুড়ে সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক এই আমাদের কামনা।