Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন সহিংসতা কাম্য ছিলো না

মে ৩১, ২০১৬, ০৬:১২ এএম


পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন সহিংসতা কাম্য ছিলো না

নির্বাচন কমিশন আশা করেছিলো চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনের চেয়ে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা কম হবে। বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। গত শনিবার অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে পরস্পর সংঘর্ষে এক চেয়ারম্যান ও এক মেম্বার প্রার্থীসহ ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কেন্দ্রদখল, পাল্টাদখল, জালভোট ইত্যাদি অনিয়মের চিত্র আমরা ঘরে বসেই টিভি চ্যানেলে দেখেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দীন আহমদও এই ধাপের নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা অস্বীকার করতে পারেননি। এ নির্বাচনে সংঘর্ষে আহত হয়েছে সাড়ে চার শতাধিক।

নির্বাচন চলাকালে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯৭ জনে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই পরস্পর নির্বাচনী লড়াইয়ে মেতে উঠেছিলো। চেয়ারম্যান প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী ও মেম্বার-প্রার্থীদের অতি উৎসাহী কর্মী-সমর্থকরা জয় নিশ্চিত করার জন্য এ সহিংস, রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি করেছিলো। দল ও দলীয় মার্কা ভিত্তিক নির্বাচন হওয়াতে সহিংসতার রূপটা প্রকট হয়েছে। দলীয় মূর্তি পরিহার করে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নির্বাচন হলে এতটা রক্তপাত হোতো না বলে অনেকের ধারণা। আমাদের দেশে এখনো গণতন্ত্রের চর্চা তৃণমূলে পৌঁছেনি তার প্রমাণ পাওয়া গেলো এ নির্বাচনে।

তৃণমূলের পুলিশি প্রশাসন প্রত্যাশিত সক্রিয় নয়, তারও প্রমাণ প্রমাণ পাওয়া গেলো। নির্বাচনী হিংস্রতার চিত্র গণমাধ্যমে বিশ্ব দরবারে চলে গেছে। আমরা কতটুকু কালচার্ড তার নমুনা এই নির্বাচনেও উঠে এসেছে। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে ইউপি নির্বাচন চলে আসছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো স্থানীয় সরকার। জনগণের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হয় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। এত কাল ধরে নির্বচনের দ্বারা গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যে তেমন সহনশীলতা, ধৈর্য সৃষ্টি হয়নি। গণতন্ত্রের বাতাবরণ তৈরি হয়নি গ্রামে এখনো। আধিপত্যবাদের নগ্নচিত্র দেখলাম আমরা স্থানীয় নির্বচনের ক্ষেত্রে। এ ধারণা প্রতিষ্ঠা পায়নি যে, যিনি ভোট বেশি পাবেন তিনিই নির্বাচিত হবেন, তিনিই যোগ্য। বরং এ ধারণাকে কবর দিয়ে ‘ জিতবো আমরা যে কোনো শক্তি দিয়ে’, এমন ফ্যাসিবাদী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে যথেষ্ঠ গভীরে ডুব দিয়ে ভাবতে হবে। এ কথা নির্মোহ দৃষ্টিতে ক্ষমতাসীন দলকে মানতে হবে যে, তাদের ভাবমূর্তি অক্ষত থাকেনি। দলের লোকজন যদি দলেরই ভাবমূর্তির কথা ভেবে ইউপি নির্বাচনকে সহিংসমুক্ত, শান্তিপূর্ণ,পরিচ্ছন্ন করতে পারতো, তাতে সরকার ও তার প্রশাসনের, দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হোতো। এ নির্বাচনের দ্বারা সরকারি দলের ভেতরে কোন্দল স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে। এত বিদ্রোহী প্রার্থী? এটাতো দলকে এবং দলীয় হাইকমান্ডকে প্রকাশ্যে অমান্য করার দৃষ্টান্ত। অন্য দল ক্ষমতায় থাকলেও একই ঘটনা ঘটতো।

বিএনপিতেও বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলো। অর্থাৎ আমদের রাজনীতি ত্যাগ, সংযম শেখাচ্ছে না, শেখাচ্ছে স্বার্থপরতা,পথ দেখাচ্ছে ক্ষমতার, লোভের। শেষ পর্যন্ত বিএনপি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে নির্বাচনে লড়ে গেছে। এ কাজটি তারা ভালো করেছে। তারা এ পর্যন্ত পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে ৭৪টি আসন পেয়েছে। সার্বিক নির্বাচনে বিএনপি আসন কম পেলেও রাজনৈতিক লাভ কম হয়নি। তবুও বিএনপি রাজনীতির দৃষ্টিকোন থেকে বলেছে,‘ ভোটের নামে তামাশা চলেছে, ভোটের নামে খেলা হচ্ছে। সব জেনেশুনে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা ইসি।’ এ নির্বাচনে বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থীও মারা গেছেন। ওদিকে সরকারি দলের মুখপাত্র জনাব মাহবুব-উল-হানিফ বলেছেন,‘শনিবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।’ জনাব হানিফ আরো বলেছেন,‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ৫ম ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। প্রশ্ন বিদ্ধ করার জন্য বিএনপি ইউপি নির্বচনে অংশ নিয়েছিলো।’

এ সব দোষাদোষিতে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রত্যেকের উচিত গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার স্বার্থে নির্বাচনকে সহিংসমুক্ত করে তোলা।