Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

আবারো ফ্রান্স রক্তাক্ত আমরা শোকাহত

জুলাই ১৮, ২০১৬, ০৫:৪৭ এএম


আবারো ফ্রান্স রক্তাক্ত আমরা শোকাহত

ধর্মের দোহাই দিয়ে জঙ্গি আইএস বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষকে জিম্মি করেছে, নির্দোষ, শান্তিপ্রিয় মানুষদের একের পর এক হত্যা করে যাচ্ছে। মানবতা, সভ্যতা, জাতিসংঘ এবং জেনেভা কনভেনশনের নীতিমালা সবকিছু লংঘন করে যাচ্ছে। সম্মুখ যুদ্ধ নয় এরা বেছে নিয়েছে গুপ্ত হত্যার পথ। বিশ্ব জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে একের পর এক জঙ্গিরা বিধ্বস্ত করে যাচ্ছে শহর। ৮ মাসের মাথায় ফের জঙ্গি হামলার শিকার হলো ফ্রান্স। প্যারিসের পরে রক্ত ঝরলো নিস-এ। বৃহস্পতিবারের এ জঙ্গি হামলায় ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিব মানুষ। এদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কা জনক। মৃতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।

জাতীয় দিবস ‘বাস্তিল ডে’ উদযাপন উপলক্ষে এ দিন বাজির প্রদর্শনী দেখতে নিস-এর সমুদ্র সৈকতে জড়ো হয়েছিলো বহু মানুষ। প্রদর্শনী শেষে তারা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, সেই সময় ভিড়ের মধ্যে একটি সাদা রঙের ট্রাক ঢুকে পড়ে। ট্রাকে শুধু চালকই ছিলো। প্রথমে ট্রাক থেকে গুলি ছোঁড়া শুরু হয়। এর পর ভিড়ের মধ্য দিয়েই চালিয়ে দেয়া হয় ট্রাকটি। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনস্থলেই বেশ কয়েকজন মারা যান। ভিড়ের ওপর হামলে পড়া প্রচন্ড গতির ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন মানুষজন। চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে মারা যান অনেকে। অনেকের দেহ টেনে হিচঁড়ে অনেকটা দূর পর্যন্ত নিয়ে যায় ট্রাকটি। এতেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে। গুলিতে ট্রাকের সামনের অংশ ঝাজরা হয়ে গেছে। ট্রাকটি গুলিবারুদে ঠাঁসা ছিলো।

ঘটনার পরই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়াওঁলাদ জরুরি বৈঠকে বসেন। পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দেন তিনি। জরুরী অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়ে দেন আরো তিন মাস। বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতৃবৃন্দ ফ্রান্সের এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন। ফ্রান্সের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

আইএসের যুদ্ধমন্ত্রী শিশানির মৃত্যুর পর ফ্রান্সে এই নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে আইএস প্রতিশোধ হিসেবে। এর আগে গত চছরের নভেম্বরে প্যারিসে এক জঙ্গি হামলায় ১৩০ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। নিস-এ আইএস কর্তৃক ধ্বংস লীলার ভয়ঙ্কর বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষ দর্শীরা। অনেকে ভেবেছিলেন ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। নাদের নামের প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ট্রাক চালককে ওই সময় ভীত দেখাচ্ছিলো। ট্রাকের চাকার নিচে প্রথমে একটি কিশোরী পিষ্ট হয়। ট্রাক চালক পৃলিশকে গুলি ছোঁড়ার আগেই পুলিশ ট্রাক চালককে গুলি করে।

১৪ জুলাই ছিলো ফ্রান্সের স্বাধীনতা দিবস। এদিন ফ্রান্সের জনগণ সাম্য ও মৈত্রির জন্য ঐতিহাসিক ফরাসী বিপ্লবে বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটেয়েছিলো। এই বিপ্লবের চেতনাগত প্রেরণা দিয়েছিলেন মনীষী রুশো ও ভল্টেয়ার। ওই দিন নিরস্র মানুষ জয়ী হয়েছিলো সশস্র শোষকদের পতন ঘটিয়ে। সমগ্র বিশ্বের মানুষ ফরাসী বিপ্লব ও রুশ বিপ্লবকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। ফ্রান্স বিশ্ব সভ্যতার অন্যতম সূতিকাগার। ফ্রন্সকে বলা হয় ছবির দেশ ও কবিতার দেশ। ফরাসী মনীষী রোঁমারোঁলা বিশ্বের সকল সভ্য মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। সারা জীবন তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে শান্তির পক্ষে কথা বলে গেছেন। সেই দেশ আজ আইএস নামক জঙ্গিদের দ্বারা রক্তাক্ত। আইএসের বর্বরতায় সারা বিশ্ব বিবেক বাকরহিত হয়ে পড়ছে। মানুষ ভেবে কূল পাচ্ছে না আইএস কী করতে চাইছে? স্বাধীনতা দিবসের উৎসবে মাতোয়ারা ফরাসী জনগণের মধ্যে মৃত্যবাণ নিক্ষেপ করতে কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না মানুষ। অনেকে বলছেন, আইএসের নামে পৃথিবীতে মানবদৈত্য নেমে এসেছে।

পত্রিকার বিশ্লেষণ থেকে আমরা জেনেছি যে, ওই দিন ফ্রান্সের নিরাপত্তা শিথিল ছিলো। হয়তো স্বাধীনতা দিবসের আনন্দের কারণে পুলিশ বাহিনী যথাযথ সজাগ থাকতে পারেনি। সেই সুযোগ নিয়েছে জঙ্গিরা। পত্রিকার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে, ফ্রান্সে বসবাসকারি মুসলিম সম্প্রদায়ের ভেতর থেকেই আইএস সদস্য সংগ্রহ করে তাদের মগজ ধোলাই করে জঙ্গি বানানো হচ্ছে। এই হত্যা থামাতেই হবে। আমরা শোকাহত এই ঘটনায়।