Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

জাতীয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আগস্ট ২৭, ২০১৬, ০৫:৪৬ এএম


জাতীয় কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আজ বাংলা বছরের ১২ ভাদ্র, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনে তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে। আমরা বাঙালিরা নজরুলের প্রতিটি জন্ম-মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করি। বাংলাভাষা ও সাহিত্যে নজরুলের অবদান অসামান্য। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা গঠনেও নজরুলের অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি সমগ্র বাঙালির জাতীয় কবি। কবি অন্নদা শঙ্কর রায় নজরুলের ওপর একটি মূল্যবান ছড়া লিখেছেন। তাতে বলেছেন, ‘ভাগ হয়ে গেছে বিলকুল, ভাগ হয়নিকো নজরুল।’ এটাই সত্য যে, যে যেখানে বাঙালি আছে, তাদের প্রত্যেকের কাছে নজরুল জাতীয় কবি হিসেবে সমানভাবে শ্রদ্ধেয়। আমাদের প্রতিটি আন্দোলনে নজরুল অনির্বাণ প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন। যে কোনো ধরনের কূপম-ুকতার বিরুদ্ধে নজরুলের কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে থাকে। যে কোনো ধরনের ভেদাভেদের বিরুদ্ধে নজরুলের সাহিত্য প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে। নজরুল সব ধরনের সংকীর্ণতা, সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। সমগ্র বাঙালি জাতির অকুণ্ঠ ভালোবাসা তিনি পেয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে নজরুলকে বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কলকাতা এলবার্ট হলে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিলো। সে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন বিজ্ঞানাচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। নজরুল ভালোবাসা পেয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, দেশবন্ধু সি আর দাশ এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের। নজরুল ভক্ত ছিলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। আমাদের জয় বাংলা রণধ্বনি নজরুলের কবিতা ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ থেকে নেয়া হয়েছে। একটি প্রবন্ধে নজরুল বলেছেন, ‘বাঙালির জয় হোক, বাংলার জয় হোক।’ ওই প্রবন্ধে তিনি বলেছেন,‘বাঙালি যে দিন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে , সেদিন অসাধ্য সাধন করবে।’ সেটাই হয়েছে ১৯৭১ সালে। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নজরুলের গান ও কবিতা সাহস এবং প্রেরণা দিয়েছে। নজরুলের জ্যেষ্ঠপুত্র কাজী সব্যসাচী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি আবৃত্তি করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়েছেন। বাঙালির জাগরণের বাঁকে বাঁকে আমরা নজরুলকে স্মরণ করেছি। নজরুলের মানবিক চেতনা, সামন্তবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা আমাদের সর্বক্ষণের পাথেয়। আমরা তো আজো সাম্রাজ্যবাদের কোপানল থেকে রেহাই পাই নি। যে কোনো ধরনের কুসংস্কার আচ্ছন্ন অনগ্রসরতার বিরুদ্ধে নজরুল ছিলেন সোচ্চার। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের পর নজরুল বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেন। নিঃস্ব, শোষিত, নিপীড়িত জনগণ নজরুলের কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে। তিনি আমৃত্যু ছিলেন শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের পক্ষে। তিনি ছিলেন আশা জাগানিয়া কবি, যৌবনের-তারুণ্যের কবি, তিনি ছিলেন মানুষের কবি, সাম্যবাদের কবি। তাঁর গান কালজয়ী, কোনো দিন তার আবেদন শেষ হবে না। অক্ষয় তাঁর শিশু সাহিত্য। তিনি পবিত্র কোরআনের অনুবাদ করেছেন। তাঁর গজল আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনি। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর গজলের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। নজরুলের বিদ্রোহ আমাদের জাগিয়ে তুলেছে, সাহস দিয়েছে। রুশ বিপ্লবের প্রভাব নজরুলের ওপর পড়েছিলো। তাই তিনি আজীবন শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। শোষিত মানুষেরই জয়গান গেয়েছেন অকুণ্ঠ চিত্তে। তিনি সকল ধর্মের, সকল মানুষের, সব যুগের, সব কালের কবি। আজ আমরা জঙ্গিবাদের উত্থানের বিপজ্জনক মুহূর্তে জাতীয় কবি নজরুলকে স্মরণ করছি। কোনো ধরনের হীনতা, নীচতা, ক্ষুদ্রতা, ভীরুতা নজরুলের মধ্যে ছিলো না। নজরুল ছিলেন বীরত্বের প্রতীক, বীরের মন কখনো ছোট হয় না। নজরুলকে স্মরণ করা তখনই স্বার্থক হবে যখন আমরা তাঁর আদর্শ যথাযথভাবে আমাদের চেতনায় ধারণ করতে পারবো। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে সশ্রদ্ধ ভালোবাসা নিবেদন করছি।