Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

স্কুলছাত্রী রিশার মর্মান্তিক মৃত্যু দ্রুত খুনিকে আটক করা হোক

আগস্ট ৩০, ২০১৬, ০৬:১২ এএম


স্কুলছাত্রী রিশার মর্মান্তিক মৃত্যু দ্রুত খুনিকে আটক করা হোক

 মাত্র ১৪ বছরের কিশোরী, ৮ম শ্রেণির ছাত্রী, সুমাইয়া আক্তার রিশা ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৮ আগস্ট সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে মারা গেছে। রিশা রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ছিলো। ২৪ আগস্ট দুপুরে কাকরাইল ফুট ওভার ব্রিজের ওপর বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল নামের এক দুর্বত্ত রিশাকে ছুরিকাঘাত করে। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছিলো রিশা। ফলে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও তাকে বাঁচানো গেলো না। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ সকল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে রিশার মর্মান্তিক অকাল মৃত্যুতে বিপুল প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তা না হয়ে পারে না।


উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা রিশার মৃত্যুতে ক্রুদ্ধ হয়ে,ক্লাশ বর্জন করে ও রাস্তা অবরোধ করে। তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মানব বন্ধনও করে তারা। কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। রিশার খুনিকে আটকের ও শাস্তির দাবিতে ১২ টা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে ঘটনাস্থলে স্কুলের অধ্যক্ষ জনাব আবুল হোসেন এসে রিশার মৃত্যুতে স্কুলে পতাকা অর্ধনমিত করা ও এক দিনের ছুটি ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।

কান্নায় ভেঙে পড়ে রিশার সহপাঠীরা। পত্রিকায় যে ছবি ছাপানো হয়েছে রিশার তাতে মনে হয় মেয়েটি ফুটন্ত গোলাপ। এমন অল্প বয়সী, নিষ্পাপ কিশোরীকে প্রেম নিবেদন করেছিলো এক কামুক,দুর্বৃত্ত। মেয়েটির জন্য আমাদেরই হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এরপর তার পিতা-মাতাকে কে সান্ত¡না দেবে? রিশার এক সহপাঠী বলেছে, রিশা মেধাবী ছাত্রী ছিলো। সব সময় হাসিখুশি থাকতো। ক্লাশের সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করায় আমরা হতবাক এবং মর্মাহত হয়েছি। আমরা রিশার হত্যাকারির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

জানা যায়, দুই সপ্তাহ আগে ওবায়দুল ডিস লাইনের কথা বলে বাসায় ফোন করে রিশার মোবাইল নম্বর নেয়। এক সপ্তাহ আগে রিশার বাবা রমজানকে ফোন করে জানায় ওবায়দুল, আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি। আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। নইলে আপনার মেয়েকে হত্যা করা হবে। রিশার বাবা ভুল করেছেন এই হুমকিকে গুরুত্ব না দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশকে জানানো উচিত ছিলো। হয়তো ভেবেছিলেন তার কিশোরী মেয়ে এত বড় প্রতিহিংসার শিকার হবে না। সরলবিশ্বাসের পরিণতি হলো করুণ। ২৪ আগস্ট দুপুরে পরীক্ষা শেষে স্কুল থেকে বেরিয়ে সে কাকরাইল ফুট ওভার ব্রিজের ওপর ওঠে। ব্রিজের মাঝামাঝি যেতেই দুর্বৃত্ত ওবায়দুল তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। রিশার চিৎকারে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ছুটে আসে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিশা।

রিশার হত্যা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ৬ মাস আগে মায়ের সঙ্গে রিশা ইস্টার্ন মল্লিকার শপিং কমপ্লেক্সের বৈশাখী টেইলার্সে যায়। সেখানে একটি ড্রেস সেলাই করতে দেয়। দোকানের রিসিটে বাসার ঠিকানা ও তার মায়ের মোবাইল নম্বর ছিলো। সেই রিসিট থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে ওই টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল ফোনে উত্যক্ত করতো রিশাকে। পরে ফোন নম্বরটি বন্ধ করে দিলে ওবায়দুল স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে উত্যক্ত করতো। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় রিশাকে ছুরিকাঘাত করে।

এই পাশবিক ঘটনায় ভেসে উঠেছে সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতার চিত্র। দেখতে একটু সুন্দর মেয়েরা এখনো সমাজে নিরাপত্তাহীন। প্রাচীন কবির কথাই সত্য,‘ আপনা মাংসে হরিণা বৈরি।’ সমাজের বাঁকে বাঁকে পশুরও অধম দুর্বৃত্ত লুকিয়ে আছে। এ সব দুর্বৃত্তদের নোংরা চোখ এ্যাড়িয়ে কী করে কিশোরী ও যুবতী মেয়েরা স্কুল-কলেজে যাবে, সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সমাজে মানবিক মূল্যবোধ কত ভোঁতা স্তরে আছে তাও বোঝা যাচ্ছে রিশার ঘটনায়।
রিশার সহপাঠীদের সঙ্গে আমরাও একাত্ম হয়ে দাবি করছি, ঘাতক ওবায়দুলকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক।